২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

বাংলাদেশে থেকে নিজের দেশের ঈদ আনন্দ মিস করছেন ওরা

প্রতিদিনের ডেস্ক
এরল একবের জন্ম তুরস্কে। তবে সাত বছর বয়সে নেদারল্যান্ডসে গিয়ে সেখানেই থিতু হন। নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানেই বসবাস। তবে জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন দেশে ঘুরে-ফিরে থাকতে হয়। তাই মাঝেমধ্যেই পরিবারের সদস্যদের ছাড়াই ঈদের আনন্দ মিস করেন। এবারও যেমন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে রহমতগঞ্জের হয়ে কোচিং করাতে এসে ঈদ ঢাকায় করতে হচ্ছে। তাই পরিবারের সদস্যদের কথা চিন্তা করে একটু মন খারাপ। তার মতো অন্য বিদেশি ফুটবলার কিংবা আম্পায়ারদেরও একই অবস্থা। তবে সবাই ঢাকার ঈদ আনন্দে শামিল হয়ে দিনটি উদযাপনের অপেক্ষায়।
কিছু দিন আগে ঢাকায় এসেছেন এরল একবে। বাংলাদেশের কোনও ক্লাবে এই প্রথম। কোচিং ছাড়াও ব্যাংকিং পেশাতেও জড়িত। পুরোনো ঢাকার ক্লাবে অফার পেয়ে লিগের মাঝপথে দায়িত্ব নিতে চলে এসেছেন। ঈদে অনুশীলন নেই। খেলোয়াড়রা সবাই ছুটিতে। তবে কোচ ইচ্ছে করলেই ছুটি নিতে পারেননি। ঈদের ছুটির পরই লিগের খেলা রয়েছে। তাই ঢাকার হোটেলেই থেকে গেছেন। তবে ঈদ নিয়ে মন খারাপের পাশাপাশি অন্য অভিজ্ঞতা নেওয়ার অপেক্ষায় একবে। নেদারল্যান্ডসে থাকতে ঈদের নামাজ পড়ে বাসায় এসে জন্মভূমি তুরস্কের বিশেষ মিষ্টান্নর স্বাদ নিতেন। ঢাকায় এবার তা হচ্ছে না। তাই এখানকার মিষ্টান্ন কিনে নেওয়ার ইচ্ছে। একবে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘এখানে হোটেলে থাকি আমি। ঈদের দিন বিশেষ কোনও পরিকল্পনা নেই। তবে এখানে যারা বিদেশি খেলোয়াড় আছে তাদের নিয়ে হোটেলে কোনও অনুষ্ঠান করার সম্ভাবনা আছে। তাদের নিয়ে দিনটি উদযাপন করতে পারি। তবে এখনও ঠিক করিনি। নেদারল্যান্ডসে থাকলে তো মিষ্টান্ন খাবার বিশেষভাবে রান্না হতো। এখানে সেই সুযোগ নেই। পরিবার সেখানে থাকে। তাদের অনেক মিস করবো। এখানে ঢাকার মিষ্টান্ন খাবারের স্বাদ নেওয়ার ইচ্ছে আছে।’
ঢাকার গরমে কাহিল একবে। তারপরও কাজের সূত্রে সহ্য করে নিতে হচ্ছে। শুধু যে এবারই দেশের বাইরে ঈদ করতে হচ্ছে একবেকে, তা কিন্তু নয়। কোচিং সূত্রে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন। এর আগেও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। একবে নিজেই বলেছেন, ‘আমি দেশের বাইরে ঈদ পালন করে অভ্যস্ত। ঢাকায় নতুন অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে। স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের কাছে সেই গল্পও বলা হবে। তাদের ছাড়া ঈদ করতে আসলে ভালো লাগে না।’
তিন মৌসুম ধরে আবাহনী লিমিটেডের রক্ষণ সামলাচ্ছেন ইরানের মিলাদ শেখ। শুরুতে ঢাকায় প্রথম ঈদ করতে পেরেছিলেন। মাঝে নিজের দেশে ঈদ করতে পারলেও এবার ঢাকায় নতুন করে অভিজ্ঞতা নিতে যাচ্ছেন। দুই মৌসুম পর ঢাকায় ঈদ করার জন্য তার স্ত্রী রাহিল জামানিয়ান রাতেই (মঙ্গলবার) চলে এসেছেন। তাই মিলাদের একাকিত্ব বোধটা একটু কমই। তবে পরিবারে মা ও ভাই-বোনরা আছেন। ঈদে তাদের কাছে পেলে আনন্দটা অন্যরকম হতে পারতো। মিলাদ বলেছেন, ‘একজন পেশাদার খেলোয়াড় হয়ে দেশের বাইরে খেলতে এসেছি। সুতরাং ঈদ বা অন্য কোনও উৎসবে নিয়মিত দেশে থাকতে পারবো না তা মেনে নিতেই হবে। পরিবারের সবাইকে পেলে ঈদের আনন্দ অন্যরকম হতে পারতো।’ ঢাকায় ঈদটা অন্যরকমভাবে পালন করতে যাচ্ছেন মিলাদ, ‘ঢাকায় এ নিয়ে আমার দ্বিতীয় ঈদ হতে যাচ্ছে। এর আগেও আমার স্ত্রী পাশে ছিল। এবারও ও আসছে। ওকে নিয়ে ঈদের দিন কোনও রিসোর্টে কাটানোর পরিকল্পনা আছে। দেশে থাকলে তো সবাইকে নিয়ে পরিকল্পনা করা যেতো। কিন্তু তা তো সম্ভব হচ্ছে না। আর ইরানে ঈদের দিন বিশেষ করে মাছের কাবাব ও ল্যাম্বের মাংস রান্না হয়ে থাকে। সেটা ঢাকায় মিস করবো।’
প্রিমিয়ার হকি লিগে এই মুহূর্তে ওমান-মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কার আম্পয়ারারা স্থানীয়দের পাশাপাশি ম্যাচে বাঁশি বাজাচ্ছেন। আপাতত লিগে ঈদের ছুটি। হোটেলে অলস সময় কাটাচ্ছেন তারা। তবে ঈদে যেন তাদের একাকিত্ব না লাগে, ফেডারেশন কিংবা স্থানীয় আম্পায়াররা বেশ ভালোভাবেই সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছেন। ঈদ সামনে রেখে তিন আম্পায়ারকেই পাঞ্জাবি উপহার দেওয়া হয়েছে। ঈদের দিন তো তাদের নিয়ে রয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা।
শ্রীলঙ্কার দায়ান দিশানায়েকে, মালয়েশিয়ার ইসমাদি আলী ও ওমানের হুসেইন আলহাসানিকে হোটেলে গিয়ে নতুন পাঞ্জাবিও তুলে দেওয়া হয়েছে। ঈদের পরিকল্পনার কথা শোনাতে গিয়ে দেশের সেরা আম্পায়ার সেলিম লাকি বলেছেন, ‘তারা যেন এখানে এসে ঈদের দিন একাকিত্ব অনুভব না করেন, তাই আমরা সেদিন সকাল থেকেই সময় দেবো। ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেবো। তাদের দুজন মুসলিম। ওদের নিয়ে বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়বো। এরপর সকাল থেকে আমাদের আম্পায়ারদের একেকজনের বাসায় নিমন্ত্রণ রয়েছে। রাত পর্যন্ত আড্ডা চলবে। আশা করছি তারা সময়টা উপভোগ করবে। এমন খবর শুনে ওরাও বেশ খুশি।’

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়