প্রতিদিনের ডেস্ক
অবশেষে একমাস পর মুক্তিপণের বিনিময়ে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে ২৩ নাবিকসহ জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ মুক্ত হয়েছে। জাহাজটি কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের। সরকার ও জাহাজের মালিকপক্ষের চেষ্টায় দস্যুদের কবল থেকে জাহাজসহ জিম্মি নাবিকদের সুস্থভাবে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত। রবিবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে কেএসআরএমের করপোরেট কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
কেএসআরএমের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহাত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সোমালিয়ার সময় রাত ১২টায় এবং বাংলাদেশ সময় ভোর ৩টায় মুক্তির পর এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ থেকে দস্যুরা নেমে যায়। এ সময় ৬৫ জন দস্যু জাহাজ থেকে বোটে করে নেমে গেছে। এরপর জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় এমভি আবদুল্লাহর দুই পাশে দুটি ইউরোপীয় যুদ্ধজাহাজ পাহারা দিয়ে সোমালিয়া উপকূল ত্যাগ করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘১৪ বছর আগে আমাদের জাহাজ এমভি জাহান মণি সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। ওই জাহাজটি দস্যুদের কবল থেকে ছাড়িয়ে নিতে ১০০ দিন সময় লেগে যায়। অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার অল্প সময়ের মধ্যে ২৩ নাবিককে ছাড়িয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। সব নাবিক সুস্থ ও ভালো আছেন। জাহাজটি আগামী ২০ এপ্রিল নাগাদ দুবাইয়ে পৌঁছাবে। এরপর তাদের মতামত নেওয়া হবে। তারা দেশে ফিরতে চাইলে নিয়ে আসা হবে। তা না হলে জাহাজটি যখন চট্টগ্রামে আসবে তখন তারা বাড়িতে ফিরতে পারবেন।’ কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিম বলেন, ‘সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দস্যুদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা বা চুক্তি হয়। চুক্তিতে তৃতীয় কোনও পক্ষ ছিল না। আমাদের সঙ্গে সরাসরি সমঝোতা হয়েছে। দস্যুদের মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে। তবে কী পরিমাণ এবং কীভাবে মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে তা জানানো সম্ভব নয়। কেননা, জাহাজসহ নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশের আইন মানা হয়েছে। যা হয়েছে সবই আইন মেনে করা হয়েছে।’ ১৪ বছর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজে ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ মোট ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রেখেছিল দস্যুরা। এবার একমাস পর দস্যুদের কবল থেকে জাহাজসহ নাবিকদের মুক্ত করা হলো। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি কবির গ্রুপের এস আর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এসআর শিপিং সূত্র জানিয়েছে, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আছে। গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে এসব কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে জাহাজটি। অর্থাৎ ভাড়ার বিনিময়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের আমদানিকারকের কাছে কয়লা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর। এই প্রতিষ্ঠানটির অধীনে মোট ২৪টি জাহাজের মধ্যে সর্বশেষ যুক্ত হয় জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ২০১৬ সালে তৈরি এই বাল্ক ক্যারিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। ড্রাফট ১১ মিটারের কিছু বেশি। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেওয়ার আগে এটির নাম ছিল গোল্ডেন হক। মালিকানা পরিবর্তনের পর নতুন নাম হয় এমভি আবদুল্লাহ। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক করিম উদ্দিন, সরওয়ার জাহান রোকন, গণমাধ্যম উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।