২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

রমনায় বোমা হামলা মামলা: আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি কবে?

প্রতিদিনের ডেস্ক
বহুল আলোচিত রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) বোমা হামলার ঘটনায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি হাইকোর্ট বিভাগে আটকে আছে। তবে চলতি বছরেই হাইকোর্টে মামলাটির শুনানি শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ঘটনাটি ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের। সেদিন সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) জঙ্গিদের বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন ও অনেকে আহত হন। এ ঘটনায় থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। পরে ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডি হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে। যার ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ শুনানি নিয়ে বিচারিক আদালতে শেষ হয় হত্যা মামলাটির বিচার। এরপর ২০১৪ সালের ২৩ জুন বহুল আলোচিত রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন। রায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ৮ জনের ফাঁসি ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়। অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। পরে সে রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে আসামিরা। বিভিন্ন সময়ে তাদের সে আপিল হাইকোর্টে শুনানির জন্য নথিভুক্ত হতে থাকে। মুফতি হান্নান ছাড়াও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলো—মওলানা তাজউদ্দিন, মওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আব্দুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মওলানা আরিফ হাসান সুমন। এর মধ্যে মুফতি আবদুল হান্নানের পৃথক একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো, মওলানা আবু তাহের, মওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, মওলানা ইয়াহিয়া, মওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মওলানা আব্দুর রউফ ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল। একই বছর হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর অনুসারে মামলাটির নথি (আপিল ও ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরপর প্রস্তুত করতে দেওয়া হয় মামলার পেপারবুক। পরে বিভিন্ন সময়ে আট আসামির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিল হাইকোর্টের কয়েকটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় উঠেছিল। তবে সব প্রস্তুতি শেষ হলেও মামলাটির শুনানি শুরু করা সম্ভব হয়নি। মামলাটি হাইকোর্টে আসার পর যেসব বেঞ্চে শুনানির জন্য দায়িত্ব পেয়েছিল সেসব বেঞ্চ সমূহের কয়েকজন বিচারপতি বিভিন্ন সময়ে আপিল বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ফলে মামলাটি শুনানির জন্য বেঞ্চ বদল হতে থাকে।
২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়। এরপর একই বছরের ১৪ মার্চ চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ঠিক করা হয়। পরে আদালত মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন।
এরপর মামলাটি যায় বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এসএম আব্দুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চে। সেখানে দীর্ঘদিন থাকার পরও মামলাটি শুনানি না হয়ে পরবর্তী বেঞ্চে আসে। এরই মাঝে নেমে আসে করোনা ভাইরাসের হানা। ২০২১ সালের ২৪ জুন মামলাটি শুনানির জন্য বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে কার্যতালিকায় আসে। তবে শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ সময় আবেদন করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্ট। আর এভাবেই মামলাটির শুনানি বছর বছর ঝুলে আছে।এ বিষয়ে আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ পর্যন্ত হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চে কার্যতালিকায় উঠলেও মামলাটির শুনানি শেষ হয়নি। তবে আমরা শুনানির জন্য প্রস্তুত রয়েছি। আশা প্রকাশ করে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রমনার বটমূলে হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মামলাটি শুনানির জন্য বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টে বেঞ্চে রয়েছে। আগামী মাসে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।তিনি আরও বলেন, ওই বেঞ্চের একজন বিচারক আগে আইনজীবী হিসেবে এ মামলার কাজে ছিলেন। তাই তিনি শুনানি করতে পারেননি। এ কারণে হয়ত কিছুটা সময় লেগেছে। তবে এবার শুনানি হবে। আমরা প্রস্তুত আছি।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়