১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

সাক্ষীতেই আটকে আছে বর্ষবরণে যৌন হয়রানি মামলার বিচার

প্রতিদিনের ডেস্ক
২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে ন্যক্কারজনকভাবে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় করা মামলার নয় বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত বিচার শেষ হয়নি। কবে নাগাদ বিচার শেষ হবে, তা-ও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। তবে সাক্ষীদের আদালতে হাজির করে দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ করার প্রত্যাশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এর বিচারক শওকত আলীর আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি মামলার বাদী আবুল কালাম আজাদ সাক্ষ্য দেন। গত ১৫ জানুয়ারি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মিরাজ হোসেন খান আদালতে সাক্ষ্য দেন। ওই দিন আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন মামলার একমাত্র আসামি কামাল। ২৩ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ৩১ জানুয়ারি ধার্য করেন। কিন্তু ওই দিন রায় ঘোষণা পিছিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি ধার্য করা হয়। ১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করার আবেদন করে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি রায় থেকে উত্তোলন করে সাক্ষীর জন্য রাখা হয়। আগামী সোমবার (১৫ এপ্রিল) মামলাটির পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এর রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, মামলাটিতে ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মামলা এখন রায়ের পর্যায়ে আছে। তবে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদন করি। পরে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মামলাটি রায় থেকে উত্তোলন করে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য রাখা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি পরিচালনা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, যে কয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, তাতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তবে আরও জোরালোভাবে অভিযোগ প্রমাণ করতে আমরা মামলাটি পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। পিপি রেজাউল করিম আরও বলেন, এটা একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। সাক্ষীদের হাজির করে মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করবো। আশা করছি, আসামিরা সর্বোচ্চ সাজা হবে। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আনিসুর রহমান বলেন, মামলার এজাহারে আসামি কামালের নাম ছিল না। পুনর্তদন্তে চার্জশিটে তার নাম এসেছে। তিনি একজন ডায়াবেটিস রোগী। গরিব মানুষ। লালবাগের খাজী দেওয়ানে তিনি ফুটপাতে সবজির ব্যবসা করেন। যেহেতু তিনি ডায়াবেটিস রোগী, এ জন্য ওই দিন তিনি বের হয়েছিলেন হাঁটাহাটি করার জন্য। ওই ঘটনা ঘটার পর জায়গাটা ফাঁকা হয়ে যায়। এরপর কামাল সেখানে হাঁটাহাটি করতে যান। সেখানে যে ওই ঘটনা ঘটছে, এ বিষয়ে কামাল কিছুই জানতেন না। তিনি হেঁটে এসেছিলেন আর তার ছবি ওই ভিডিও ফুটেজে এসেছে। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা তাকে গ্রেফতার করেছেন। ভিডিও ফুটেজে এমন কিছু আসেনি যে তিনি কাউকে ধরছেন, টানছেন বা শ্লীলতাহানি করছেন। ভিডিও ফুটেজে তার ছবি আসার কারণে তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকৃত আসামিদের পুলিশ গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতার না করে অযথা, ভুলভাবে তাকে এই মামলায় গ্রেফতার করেছে। আমরা ন্যায় বিচার আশা করছি। প্রকৃত সত্যটা উদঘাটিত হোক। আশা করি, আসামি ন্যায়বিচার পাবেন এবং বিচারে খালাস পাবেন। ২০১৫ সালের পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটি এলাকায় কয়েকজন নারীকে যৌন হয়রানি করা হয়। ওই ঘটনায় ভিকটিমদের পক্ষ থেকে কেউ মামলা না করায় শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন। শাহবাগ থানার পুলিশ মামলাটি কয়েক দিন তদন্তের পরই তদন্তভার ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়। একই বছরের ১৭ মে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও থেকে আটজন যৌন হয়রানিকারীকে শনাক্ত ও তাদের ছবি পাওয়ার কথা জানান তৎকালীন পুলিশপ্রধান এ কে এম শহীদুল হক। শনাক্ত করা ব্যক্তিদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ। ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর আসামিদের নাম-ঠিকানা না পাওয়ার অজুহাতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক কুমার দাস আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর শনাক্ত হওয়া আসামিদের মধ্যে মো. কামালকে (৩৫) গ্রেফতার করে মামলাটি পুনর্তদন্তের আবেদন করা হয়। ঢাকার তিন নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পুনর্তদন্তের আদেশ দেন। শেষে ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক একমাত্র আসামি কামালকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরের বছরের ১৯ জুন ঢাকার তিন নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার ওই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। বর্তমানে এ মামলার একমাত্র আসামি কামাল জামিনে আছেন। হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পান। মামলাটির বিচার চলাকালীন আদালত ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়