সোহাগ আলী,কালীগঞ্জ
বিয়ে বাড়ির আগত অতিথিদের যেনো খাবারের কমতি না পড়ে সে কারণে খাবারের সব মেনুই একটু বেশি বেশি করে রান্না করা হয়।অন্যান্য খাবারের ন্যায় বিয়ে বাড়িতে অনেক ভাত অবশিষ্ট থেকে যায়। আর অতিরিক্ত ওই ভাত খাওয়ানো হয় গোয়ালের কালো রঙের জার্সি জাতের গরুটিকে। আর বিপত্তি বাধে তখনই। ভাত খাওয়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই গরুর পেট ফুলে যায়। গরুর শারীরিক অস্থিরতা দেখে খামারি উপায়ান্ত না পেয়ে ডাকেন ডাক্তার। ডাক্তার গরু দেখে ৫ হাজার টাকার ওষুধ লিখে ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দেন খামারিকে। ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ গরুকে খাওয়ায়ে কোন কাজ হয় না। এর প্রায় ৮ ঘণ্টা পর গরুটি মারা যায়। এমন এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার মোল্লাডাঙ্গা গ্রামের বিলাত আলী বিশ্বাসের ছেলে মোঃ আক্তারুজ্জামান পিলু নামের এক খামারির সাথে। ভুক্তভোগী খামারি কান্না জড়িত কন্ঠে আক্ষেপ নিয়ে বলেন, আমার গরুর অসুস্থতায় আমি মান্দারবাড়িয়ার নামকরা পশু চিকিৎসক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান আক্তারকে ডেকে আনি। তিনি আমার গরু দেখে ৫ হাজার টাকার ওষুধ লিখে দেন এবং ১৩ শত টাকা নিজে ভিজিট নেন। উনি হজমের ওষুধ দিলেও গরুর কোন গ্যাসের ওষুধ দেন না। যে কারণে গরুটি আর সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি। পরে জানতে পারলাম উনি আসলে পশু ডাক্তার না। তার কারণে আমার গরু মারা গেছে।ডাক্তার না হয়েও এভাবে খামারিদের অপচিকিৎসা দিয়ে নিয়মিত তিনি ক্ষতিসাধন করে চলছেন।ক্ষতিগ্রস্ত খামারি আক্তারুজ্জামানের অপচিকিৎসায় প্রায় লাখ টাকার গরু মারা যাওয়ার ঘটনায় তার নিকট ক্ষতিপূরণ দাবি করেন খামারি পিলু। সনদবিহীন ভুয়া পশু চিকিৎসক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান আক্তারের পশু চিকিৎসা প্রদানের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। স্থানীয়ভাবে অনেকেই জানান, তিনি সাধারণ মানুষের মাঝে ভুল তথ্য দিয়ে নিজেকে ডাক্তার হিসেবে দাবি করেন। এমনকি ইন্ডিয়া থেকেও তিনি পশু চিকিৎসায় ডিগ্রী অর্জন করেছেন বলে খামারিদের জানান। বাস্তবে তার এসব বক্তব্যের কোন সত্যতা মেলে না। কিছু দিন আগে মোল্লাডাঙ্গা গ্রামের মোশাররফ হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ সুমনের ফ্রিজিয়ান জাতের বকনা বাছুর গরুটি স্থানীয় সনদবিহীন আর এক ভুয়া পল্লী চিকিৎসক শহীদের অপচিকিৎসায় মারা যায়। একই গ্রামে মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের ফ্রিজিয়ান প্রায় ৩ লাখ টাকা মূল্যের প্রতিদিন ২৫ কেজি দুধ দেওয়া গর্ভবতী গাভী সনদবিহীন পশু চিকিৎসক জহির ও শহীদের অপচিকিৎসায় মারা যায়। এভাবে একের পর এক সনদবিহীন ভুয়া পশুর চিকিৎসকদের দৌরাত্মে খামারিরা নিঃস্ব হচ্ছেন, আগ্রহ হারাচ্ছেন গবাদিপশু পালনে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে অপচিকিৎসায় মারা যাওয়া গরুর মালিক তথা খামারিদের নেওয়া হয় না কোন খোঁজ খবর। যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না ওইসব ভুয়া পশু চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। খামারিদের পশু চিকিৎসার ব্যাপারে সচেতনতা মূলক কোন উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায় না।
সনদবিহীন ভুয়া পশু চিকিৎসক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান আক্তারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি পশু চিকিৎসক নই । লাল তীর কোম্পানির লাইভস্টক এর এআই কর্মী হিসেবে আমি কাজ করি। মাঝে মাঝে কিছু চিকিৎসা দিয়ে থাকি।পশু চিকিৎসা প্রদানের কোন বৈধ কাগজ নেই বলেও তিনি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমার ব্যাগে পশু চিকিৎসার অন্যান্য ওষুধের সাথে কিছু এন্টিবায়োটিকও আছে। পিলু ভাইয়ের গরুর চিকিৎসা আমি দিয়েছিলাম। তবে অপচিকিৎসা দিয়েছি সেটা বলবো না, চিকিৎসা সঠিকই দিয়েছিলাম। আল্লাহ চাইনি তাই গরুটি বাঁচেনি। যেহেতু আপনার চিকিৎসায় গরু মারা গেছে সেহেতু খামারিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি তা কৌশলে এড়িয়ে যান। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার রেজাউল করিম বলেন, ইতিমধ্যে সনদবিহীন ভুয়া পশু চিকিৎসকদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। এসব ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এমন কথা ঠিক নয়। খামারির অভিযোগ পেলে অবশ্যই আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করি এইসব সনদবিহীন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। তবে খুব শীঘ্রই আমরা ভুয়া সনদহীন পশু চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামব।