এনামুল কবির, মোংলা
মোংলায় কাঁচা বাজার ব্যবসায়ীদের ২৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে। সিন্ডিকেট চক্রের প্রধান শাহ আলম তালুকদার ওরফে আলু আলম এ অর্থ লুটপাট করছেন বলে অভিযোগ ক্ষুদ্র কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের। তাদের সঞ্চয় লোপাটের সুরাহ না করে সমিতির নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করায় সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালে মোংলা পোর্ট পৌর শহরের কাঁচা বাজার ঘিরে গড়ে ওঠে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট চক্র। পরবর্তীতে আধিপত্য ধরে রাখতে এ চক্রে সাধারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অর্ম্তভূক্ত করা হয়। একই সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণে উপজেলা সমবায় কার্যালয় থেকে ‘মোংলা পোর্ট পৌরসভা কাঁচা বাজর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ’ নামে রেজিস্ট্রেশন নেয়া হয়। সভাপতি শাহ আলম তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন, ক্যাশিয়ার এমাদুল হাজীসহ ছয় সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়। রেজিস্ট্রেশনকৃত এ সমিতির আড়ালে সিন্ডিকেট চক্রের হাতে উর্ধমুখী বাজার মূল্যে জিম্মি হয়ে পড়ে পৌর শহরের প্রায় ৩০হাজার ক্রেতা সাধারণ। একই সঙ্গে এ চক্রের বেড়াজালে আটকে পড়ে বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও। এ সমিতির সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৯০জন। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দৈনিক ২০টাকা হারে মাসে ৬শ টাকা সঞ্চয় জমা হয়ে থাকে। মোংলা কাঁচা বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী বাদল মুন্সী জানান, বিগত সাড়ে ৩বছরে প্রায় ৪৪লাখ ৪৬হাজার টাকা সদস্যদের সঞ্চয় জমা হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত সদস্যদের আয় ও ব্যয়ের হিসেব না দিয়ে সমিতির সভাপতি শাহ আলম তালুকদার ও ক্যাশিয়ার মোঃ এমাদুল হাজী নিজের মতো সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। সম্প্রতি সদস্যরা তাদের জমাকৃত সঞ্চয় ও আয়-ব্যয়ের হিসেব চাইলে মাত্র ৩৮হাজার টাকা ক্যাশ আর ২১লাখ টাকা অনাদায়ী লোন দেখানো হয়। বাকী ২৩লাখ টাকার কোন হদিস নেই। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলে তড়িগড়ি নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হয়। পরবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হতে বহিরাগতদের সদস্য অন্তভুক্ত করে গত ৭মার্চ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন তারা। এ বিষয়ে ক্ষুদ্র কাঁচা বাজর ব্যবসায়ীরা জমাকৃত সঞ্চয় ও আয়-ব্যয়সহ বহিরাগতদের ভোটার/ভূয়া ভোটার ইস্যুতে আপত্তি জানালে সমবায় অধিদপ্তর থেকে নির্বাচনী তফসিল স্থগিত করা হয়। তবে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে আগামী ২১এপ্রিল নির্বাচনী তফসিলের চক্রান্ত করা হয়েছে। কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী মহিদুল শিকদার বাবু ও শাহজাহান ব্যাপারী অভিযোগ করে বলেন, সদস্যদের জমাকৃত সঞ্চয়ের (আয়-ব্যয়) হিসাব না দিয়ে সাজানো নির্বাচন হলে ওই সিন্ডিকেট চক্রটি আবার নেতৃত্বে পৌঁছাবে। আর তখন ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা জমাকৃত সঞ্চয়ের পুরোটাই ওই চক্রের পকেটে জমা হবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তারা। তারা আরো বলেন, টাকা আত্মসাত ও ভূয়া ভোটার তালিকা প্রণয়ের বিষয়ে প্রতিকার পেতে প্রশানের বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক লিখিত অভিযোগ দিলেও তার সুফল মিলছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা ও দৌরাত্মের কারণে।
এ বিষয়ে মোংলা কাঁচা বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি শাহ আলম ওরফে আলু আলম তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত এ অভিযোগ অস্বীকার করে ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিক ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
মোংলা কাঁচা বাজারের সিন্ডিকেট চক্র ও সমিতির ভূয়া ভোটার তালিকার বিষয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অভিযোগ পেয়েছেন স্বীকার করে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ জুবায়ের হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মোংলা বাজার নিয়ন্ত্রণ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না বলেন, মোংলা কাঁচা বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে সোমবার (১৫এপ্রিল) বাগেরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আলোচনা হয়েছে। কোন সিন্ডিকেট চক্র কাঁচা মালের দাম নিয়ে কারসাজি করতে পারবেনা। কাঁচা বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ঠিক রাখতে মোংলা কাঁচা বাজারের সিন্ডিকেট চক্রের হোতাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান নবাগত ইউএনও নিশাত তামান্না।