ঈদ উদযাপন শেষে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। টানা পাঁচ দিনের সরকারি ছুটি শেষ হয়েছে। শবেকদরের ছুটি ও তার আগের সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ১০ থেকে ১১ দিন ছুটিও কাটিয়েছেন অনেকে। বলা যায়, এবার ঈদে ঘরে ফেরা স্বস্তিদায়ক হয়েছে। তবে ফিরতি যাত্রায় বিভিন্ন পথে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। ট্রেন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে ফিরতি মানুষের ভিড় বাড়ে। চলবে আগামী কয়েক দিন পর্যন্ত। এ সময়টা বিশেষ নজরদারি দরকার। বছরে দুটি ঈদ মুসলমানদের জীবনে সবচেয়ে বড় উৎসব। কর্মসংস্থানের প্রয়োজনে যে যেখানেই থাকুক না কেন, দুটি ঈদে অন্তত তারা নিজ পরিবার ও স্বজনের কাছে ফিরে যায়। বরাবরের মতো এবার ঈদযাত্রায় টিকেটের ভোগান্তি থাকলেও পথে যানজট কম ছিল। উৎসবকে কেন্দ্র করে বাড়তি মানুষের চাপ অনেকটাই পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপরও দুর্ঘটনা রোধ করা যায়নি। সড়ক দুর্ঘটনা চালকের অসতর্কতার কারণেই প্রধানত ঘটে থাকে। ঈদের সময় অধিক যাত্রী পরিবহন এবং চালকের তাড়াহুড়ার কারণে প্রতিবারই এমন দুর্ঘটনা ঘটে। এবারের ঈদে ১৫-২০ লাখ মানুষ ঢাকা থেকে বাইকে করে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। বাড়ি ফেরার সময় ছাড়াও বাড়িতে গিয়ে অনেকেই বেপরোয়া চলাচলের কারণে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানি অতীতের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ঈদের দিন ও পরের দিন এবং ঈদের তৃতীয় দিনও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়ক দুর্ঘটনার খবর এসেছে। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে বেপরোয়া মোটরসাইকেলে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি অটোরিকশার মতো বাহনের কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বেশি। ঈদের আগে ও পরে সারাদেশে প্রায় ৩০ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। শুধু ঈদের দিন সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এই সময়ে সড়কে প্রাণহানির সংখ্যার আরো বাড়তে পারে। বেশিরভাগ দুর্ঘটনার জন্য মূলত দায়ী চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও অদক্ষতা। এছাড়া সড়কের ত্রæটির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। একেকটি দুর্ঘটনার পর অনেক পরিবারই তলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে। দেশে এসব পরিবারের সংখ্যাও কম নয়। এসব সড়ক দুর্ঘটনায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। প্রতি বছরই ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘœ করতে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো নানা পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দেয়, আশ্বাস-প্রতিশ্রæতি দেয়। এবারো দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভোগ কমাতে পারলেও দুর্ঘটনা পিছু ছাড়েনি। ঈদের পর দিন ফাঁকা সড়কে বেপরোয়া গতিতে যান চালানোর পরিণামে দেশের নানা স্থানে অনাকাক্সিক্ষত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনা ঈদের আনন্দে সংশ্লিষ্টদের জন্য কেবল অমোচনীয় বিষাদই শুধু বয়ে আনেনি; হতাহতদের স্বজনের আহাজারি অন্যদের আনন্দও মøান করে দিয়েছে। এ কথা ঠিক, মৃত্যু মানুষের স্বাভাবিক নিয়তি। কিন্তু দুর্ঘটনায় মৃত্যু কারো কাম্য নয়। দুর্ঘটনায় মৃত্যু থেকে মানুষকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ার দায় সংশ্লিষ্টদের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, দেশের বিস্তৃত সড়কপথকে নিরাপদ করে মৃত্যুর মিছিল থামাতে হলে সার্বিক সতর্কতা ও নজরদারি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলোও যেহেতু চিহ্নিত, সেহেতু সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া। ঈদে ঘরে ফেরার পালায় সড়ক ও নৌপথে ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে সরকার যে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে, তা কর্মস্থলে ফেরার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে হবে।
ছুটি শেষে কর্মস্থলে মানুষ
Previous article
Next article
আরো দেখুন
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হোক
উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে মানুষের মৌলিক অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশে তার উল্টো পরিস্থিতি তৈরি...
বাজার অস্থির : দাম কমানোর উদ্যোগ নিন
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রমেই বাড়ছে। দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির, বিশেষ করে স্থির আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। সরকার পরিবর্তনের ফলে মানুষের মধ্যে যে...