প্রতিদিনের ডেস্ক
বারাণসীতে হারের হ্যাটট্রিক করার পর আবার মোদির বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী হয়েছেন অজয় রায়।শক্তপোক্ত চেহারা। চশমার পেছনে চোখের দৃষ্টি রীতিমতো তীব্র। সাদা হাফ পাঞ্জাবি ও সাদা পাজামা পরে যখন ডিডাব্লিউর মুখোমুখি হলেন অজয় রায়, তখন রাত প্রায় নয়টা।
গতবছর আগস্টে তাকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করা হয়েছে। ফলে বারাণসী নয়, গোটা রাজ্যে কংগ্রেসের দায়িত্ব তার কাঁধে। ফলাফল যেখানে তিনে তিন, সেখানে চতুর্থবারের জন্য এমন কঠিন লড়াইয়ে কেন নামতে রাজি হলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।তিনি পাঁচবারের বিধায়ক হলেও লোকসভায় সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন এক লাখ ৫২ হাজার। গতবার নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন তিন নম্বরে। সমাজবাদী পার্টির শালিনী যাদব ছিলেন দুই নম্বরে। এবার সমাজবাদী ও কংগ্রেস জোট হয়েছে।
যদি ধরে নেওয়া যায়, অজয় রায় গতবারের মতো এক লাখ ৫২ হাজার ভোট পেলেন, সমাজবাদী পার্টির প্রায় দুই লাখ ভোটও তার কাছে গেল, তারপরেও তো নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদির থেকে তিন লাখ ৭৪ হাজার ভোট পেছনে থাকবেন।
বিশেষ করে রামমন্দিরের উদ্বোধন হয়ে যাওয়ার পর হওয়া লোকসভা ভোটে বাবা বিশ্বনাথের শহরে মোদির জনপ্রিয়তা কতটা তা একটু ঘুরলেই টের পাওয়া যায়। তাহলে সামনে হারের হাতছানি সত্ত্বেও অজয় রায় বারাণসীতে প্রধানমন্ত্রীর মোকাবিলায় ভোটের ময়দানে নামলেন কেন?
প্রশ্নটা শুনে দুই হাত জড়ো করে একবার তাকালেন আজয় রায়। তারপর বললেন, ‘আমি শুধু বারাণসীর কংগ্রেস নেতা নই। আমি উত্তরপ্রদেশের সভাপতি। দলের কর্মী হিসাবে বড় দায়িত্ব পালন করতে হয়। দলের কর্মীদের মনোবল বজায় রাখাটা জরুরি।’
এরপরই তিনি যোগ করেন, ‘এবার লড়াইটা আলাদা হবে, দেখে নেবেন। মোদীজি এখানে যে কাজ করতে গেছেন তাতেই ব্যর্থ হয়েছেন। এবার তার ফল দেখবেন। ভোটের ফলাফল অন্য হবে।’
একসময় বিজেপি থেকেই তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন অজয় রায়। বিধায়ক হয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পেরে দল ছাড়েন। সমাজবাদী পার্টির হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছেন। একবার নির্দল হিসাবে জিতেছেন। ফলে বিধানসভার একটা কেন্দ্রে তার প্রভাব আছে।
কিন্তু গত তিনবারের ফলাফল দেখলে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বিরোধীদের ভোট সবমিলিয়ে ওই সাড়ে তিন লাখ। আর নরেন্দ্র মোদির ভোট সমানে বাড়ছে। তার ওপর এবার মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি বারাণসীতে মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে।
অজয় রায় স্বীকার করে নিলেন, ‘আমার ভোট কাটার জন্যই বিএসপি এখানে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। কিন্তু ওরা ভোট কাটতে পারবে না। কারণ, মানুষ বুঝতে পেরেছে, মায়াবতী বিজেপি-র হয়ে কাজ করছেন। সেজন্য বিএসপি প্রার্থী ভোট পাবেন না।’
ঘটনা হলো, এভাবেই কখনো আসাদুদ্দিন ওয়েইসি, কখনো বা অন্য কেউ মুসলিম ভোটে ভাগ বসিয়েছেন এবং কংগ্রেস, আরজেডি, সমাজবাদী পার্টির বাড়া ভাতে ছাই পড়েছে।
অজয় রায় দাবি করছেন, ‘আপনারা বুঝতে পারছেন না, জিনিসপত্রের দাম এতটা বেড়ে গেছে তাতে মানুষ অসম্ভব ক্ষুব্ধ। যুবকরা চাকরি পাচ্ছেন না বলে হতাশ। মানুষ তাদের ক্ষোভ বাইরে দেখাতে চাইছে না। তারা ভোটের জন্য অপেক্ষা করছেন।’
বারাণসীতেও জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে মানুষের ক্ষোভ আছে। কিন্তু তারপরেও শহরের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই বলছেন, মোদি জিতবেনই।
অজয় রায়য়ের বাড়ির বাইরে একটা বলা আছে, এটা রাহুল গান্ধীরও ঘর। সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার পর রাহুলকে সরকারি বাড়ি ছেড়ে দিতে হয়। তখন কংগ্রেস এই প্রচার শুরু করে। ‘আমার ঘর, রাহুল গান্ধীরও ঘর।’
কিন্তু ঘটনা হলো, গত দশবছর ধরে এই বারাণসী নরেন্দ্র মোদিরও ঘর। সেই ঘরে তার শক্তি ক্রমশ বেড়েছে। এখানে অরবিন্দ কেজিরওয়াল এসেও দুই লাখের বেশি ভোট পাননি। সেখানে অজয় রায় চতুর্থবার কি সব হিসাব বদলে দিতে পারবেন?
অজয় বলছেন, ‘বারাণসী আমার মাতৃভূমি, আমার জন্মভূমি, আমি কেমন করে তা ছেড়ে চলে যাব? আমি আমার বারাণসীর মানুষের সঙ্গে আছি। আমি আমার মানুষের সঙ্গ ছাড়তে পারি না। আমি কাশীর সঙ্গে আছি।’
বোঝা গেল, হারের ভ্রুকুটি সত্ত্বেও কেন মোদির বিরুদ্ধে তৃতীয়বার বারাণসীতে লড়াই করছেন অজয় রায়।