প্রতিদিনের ডেস্ক
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ৩৫টি মাদক সংশ্লিষ্ট ও মাদক সংক্রান্ত মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ তদন্ত করছে। এর মধ্যে সিআইডির জালে থাকা ১০ মাদক গডফাদারের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে। আজ (বুধবার) দুপুরে মালিবাগে সিআইডির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। মাদক কারবার বা মাদক সংক্রান্ত অর্থ পাচার বা মানি লন্ডারিংয়ের মতো ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, তরুণ প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর বিষয় হচ্ছে মাদকাসক্তি। মাদকের ভয়াবহতা এতই বেশি যে, মাদকসেবীর আশপাশে থাকা মানুষও এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। শিশু-কিশোর, যুব বা যে কোনো বয়সী নারী বা পুরুষ মাদকাসক্ত হতে পারে। মাদকের ভয়াবহতা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। মাদকাসক্ত পরিবারে নেমে আসে ভয়াবহ বিপর্যয়।
২০২১ সালে ৭৯ হাজার ৬৭৫টি, ২০২২ সালে ৮২ হাজার ৬৭২টি এবং ২০২৩ সালে ৭৬ হাজার ৪০৩টি মাদক মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা মাদকের বাহক ও মাদকসেবীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের কাছে থেকে মাদক উদ্ধার করে বিচারের আওতায় আনলেও মাদকের মূল হোতা গডফাদারদের বিরুদ্ধে কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তারা সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রেক্ষিতে সিআইডি মাদকের মামলা তদন্তে নতুন ডাইমেনশন এনেছে। সিআইডিই প্রথম মাদক সম্পৃক্ত মানিলন্ডারিং মামলার তদন্তে গভীরে প্রবেশ করে মাদক ব্যবসায়ী ও গডফাদারদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে এবং তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংকে থাকা অর্থ ফ্রিজ করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সিআইডি ৩৫টি মামলা তদন্ত করে মামলার মূল হোতা তথা গডফাদারদের মাদক ব্যবসা থেকে অবৈধভাবে অর্জিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমাকৃত অর্থ, ক্রয়কৃত জমি, বাড়ি ও ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির সন্ধান পায়। পর্যায়ক্রমে মাদকের সকল গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা হবে। মাদক ব্যবসা করে যারা অবৈধভাবে সম্পদ ও অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছে, তাদের অবৈধ সম্পদ আইনি প্রক্রিয়ায় সরকারি কোষাগারে চলে যাবে। দেশপ্রেমিক সকল মানুষের প্রতি মাদক গড ফাদারদের তথ্য সিআইডিকে প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নিজে থেকে কারো সম্পত্তি ক্রোক করতে পারি না। আদালত ক্রোকের নির্দেশ দিলে আমরা কারো জিম্মায় ক্রোক করে থাকি।
গডফাদার বলতে আপনি কাদের বোঝাচ্ছেন? তাদের পরিচয় কী— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাদকের কারবারে করেও যারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে, এরকম আমরা ২২ জনকে পেয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা তো প্রথমে মাদকের ক্যারিয়ার বা বহনকারী কিংবা ইউজার বা সেবনকারীকে ধরি। যারা খুচরা বিক্রেতা তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার তদন্ত হয়, গডফাদারদের খোঁজা হয়।
তিনি বলেন, সিআইডি নতুন ডাইমেনশনে তদন্ত করছে। আমরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা লেনদেনের তথ্য খুঁজি। কোনো ব্যবসা নাই, চাকরি নাই, কোনো পেশা নাই অথচ টাকা জমা হচ্ছে। তখন সহজেই বের করা সম্ভব হয় আয়বহির্ভূত অর্থ কোত্থেকে আসছে।
তিনি বলেন, আগে সহজলভ্য ছিল ফেনসিডিল। ঘরে ঘরে শিশুরা দেখতাম ফেনসিডিল সেবন করছে। সেটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর এখন আসছে ইয়াবা। আমার বিশ্বাস যেহেতু গডফাদারদের গায়ে হাত পড়েছে, গ্রেপ্তার বা আইনের আওতায় আসছে, তাদের অবৈধ অর্জিত সম্পত্তি ক্রোক হচ্ছে, সরকারি কোষাগারে যাচ্ছে। এতে করে গডফাদাররা নিরুৎসাহিত হবে।
টেকনাফের সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির দুই ভাইকে নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মাদকের কারবার বা সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সে যেই হোক। আমরা তদন্ত করতে গিয়ে টেকনাফের সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির দুই ভাই আমিনুর রহমান ও আব্দুর শুক্কুরের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। তারা কক্সবাজারের ওপার থেকে ইয়াবা আনে বিভিন্ন উপায়ে। তারা তাদের নিয়োজিত তরুণদের ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেয়। তাদের সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে। কী পরিমাণ সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে তা পরবর্তীতে জানানো হবে। পরবর্তীতে আরও চমক আসছে।
যাদের সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে
টেকনাফ থানার মামলায় নুরুল ভুট্টোর, চট্টগ্রামের খুলশী থানার মামলায় শফিক আলম শফিকের, খুলনার লবনচরা থানার মামলায় শাহজাহান হাওলাদারের, টেকনাফ থানার মামলায় শফিক আলমের, পাবনার আতাইকুলা থানার মামলায় শাহিন আলমের, টেকনাফ থানার মামলায় নুরুল কবিরের, টেকনাফের আরেক মানিলন্ডারিং মামলায় সিদ্দিক আহমেদের, আদাবর থানার একটি মামলায় মাদক গডফাদার নুরুল ইসলামের, টঙ্গী পূর্ব থানার একটি মামলায় পারুলের, টেকনাফ থানার মামলায় ফজর আলীর।