ডেঙ্গুর দাপটে রাজধানীবাসী আতঙ্কের মধ্যে জীবনযাপন করছে। গত বছরের তুলনায় এবার বেড়েছে মশাবাহিত এ রোগ। জানা গেছে, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৬৫ জনে। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২৩ জন। কেবল জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ হাজার ৫৫ জন, যাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ফেব্রুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি হন ৩৩৯ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। মার্চ মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১১ জন; যাদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এপ্রিলের ১৫ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬০ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে একজনের। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যু। এখনই মশক নিধনে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া না হলে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সবাইকে সতর্ক এবং সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ২০২৩ সালে। সেই বছর সরকারি হিসাব মতে, ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ৭০৫ জনের। ওই বছর ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ছিল ৯০১ জন। মৃত্যু হয়েছিল ১০ জনের। বাংলাদেশের ইতিহাস ভেঙে দেয়া আক্রান্তের বছরের হিসাব ছাড়িয়ে ২০২৪ সালের শুরু থেকে আগ্রাসি ভূমিকায় আছে ডেঙ্গু। চলতি বছর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৮৬৫ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। চিকিৎসকরা বলছেন, যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টি হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এখনো ডেঙ্গুজ¦রের কোনো প্রতিষেধক বের করতে পারেনি সরকার। ডেঙ্গু থেকে রেহাই পেতে হলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আইইডিসিআরের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। সাধারণত মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য দায়ী। হঠাৎ থেমে থেমে স্বল্পমেয়াদি বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশি মাত্রায় প্রজনন সক্ষমতা পায়। ফলে এডিস মশার বিস্তারও ঘটে বেশি। এ মশা যত বেশি হবে ডেঙ্গুর হারও তত বাড়বে। উৎস বন্ধ না করতে পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ চলাকালে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। এরপর দুই সিটি মশক নিয়ন্ত্রণে যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করেছে সেগুলো ছিল কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটির তেমন কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে দেখা যায়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা পরিচালিত এক জরিপে উত্তর সিটির ৬৩টি এবং দক্ষিণ সিটির ৯৬টি বাড়িতে এডিস মশা অতিরিক্ত মাত্রায় চিহ্নিত করা হয়েছিল। জরিপে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২২টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন মাত্রার ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়। প্রথমত, ঝুঁকি চিহ্নিত ওয়ার্ডগুলোতে মশা নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে-এ প্রত্যাশা দেশবাসীর।