এনামুল কবির, মোংলা
পরিবেশগত সুরক্ষা এবং সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শিশুদের গল্প শোনাচ্ছে ওয়াইল্ডটিম। মোংলা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন জয়মনিরঘোলে ওয়াইল্ডটিম কনজারভেশন বায়োলজি সেন্টারে এই গল্প শোনার আয়োজন করা হয়। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার প্রায় অর্ধশত শিশু মনোযোগ দিয়ে গল্প শুনেছে। প্রথমে প্রজেক্টরের মাধ্যমে গল্প শুনিয়ে তার নানা বর্ণনা দেন ওয়াইল্ডটিমের কর্মকর্তারা। মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে গভীর সংযোগ গড়ে তুলতে গল্প বলার শক্তিকে কাজে লগাতে চায় ওয়াইল্ডটিম। গল্প বলার এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক জাতীয় প্রতিষ্ঠান ওয়াইল্ডটিম পরিবেশগত সুরক্ষা এবং সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রচারের জন্য এই গল্প বলার উদ্যোগ চালু করেছে। অংশ নেওয়া শিশুদের কে নানা ধরণে ছবি, ভিডিও প্রর্দশন এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা তুরে ধরার মাধ্যমে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ ও আইকোনিক রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সুরক্ষার গুরুত্ব বোঝানো হয়।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ,স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং গল্পকারদের সহযোগীতায় চলমান কাজকে অনুপ্রাণিত করতে এবং মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে গভীর সংযোগ গড়ে তুলতে গল্প বলার শক্তিকে কাজ লাগাতে চায় ওয়াইল্ডটিম। ওয়াইল্ডটিমের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গল্প শোনানোর মাধ্যমে আমরা বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের নৈতিক শিক্ষা ও কর্তব্য ছড়িয়ে দিতে চাই। স্থানীয় শিশুরা এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। তিনি আরো বলেন, ওয়াইল্ডটিম বন্যপ্রাণী এবং তাদের আবাস্থল সংরক্ষণের জন্য নিবেদিত একটি নেতৃত্বস্থানীয় সংস্থা। সম্প্রতি ওয়াইল্ডটিম তাদের চলমান কাজের অংশ হিসেবে একটি নতুন গল্প বলার কার্যক্রম চালু করেছে। তারা মনে করে এই উদ্যোগের ফলে পরিবেশ সুরক্ষা এবং বাঘ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। সংস্থার নির্বাহী সদস্য সুমাইয়া নাজনীন বলেন, অন্যের সাথে যোগযোগ করার ক্ষেত্রে গল্প বলা একটি অসাধারণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে যা অন্যের অনূভ‚তিতে স্পর্শ এবং অসাড়তা দূর করতে পারে। স্থানীয়দের গল্প শেয়ার করার মধ্যে দিয়ে আমরা আশা করছি যে, সমস্ত জীবের আন্তঃ সংযুক্ততা, তাদের পরস্পর প্রয়োজনীয়তা, এছাড়া পরিবেশ সরক্ষণ এবং বাঘের প্রতি সবার সম্মিলিত দায়িত্ব ও সুরক্ষার অনুভুতি জাগিয়ে তুলতে পারে। ওয়াইল্ডটিম মনে করে, একসাথে কাজ করার মাধ্যমে, আমরা এমন একটি বিশ^ তৈরি করব, যেখানে বন্যপ্রাণীর নিরাপদ বিকাশ, বাস্ততন্ত্রের সুরক্ষা এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য টেকসই পরিবেশ সুনিশ্চিত হবে।
গল্প শুনে শিশুরা পরিবেশগত সুরক্ষা এবং সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণে করণীয় সম্পর্কে তারা বাস্তব ধারণা পেয়েছে। আগামিতে তারা পরিবেশগত সুরক্ষা এবং বাঘ সংরক্ষণে কাজ করতে চাই বলে এমন আশার কথা জানালো শিশুরা। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে জয়মনিরঘোলে ওয়াইল্ডটিম কনজারভেশন বায়োলজি সেন্টারে বাংলাদেশ ও ভারতের স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততায় বিশ^ঐতিহ্য সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ে শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ে ৪ দিনব্যাপি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক জাতীয় প্রতিষ্ঠান ওয়াইল্ডটিম ও ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (ডাবিøউটিআই) যৌথ ভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে। বিভিন্ন সুত্র বলছে, সুন্দরবনে চলমান জরিপে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। মাঝে মধ্যে সুন্দরবনে পর্যটকদের নজরে আসছে বাঘ। আবার সুন্দরবনে বন বিভাগের কার্যালয়ের আশেপাশে বাঘ ঘোরা ঘুরি করতে দেখা গেছে। মাঝে মধ্যে বাঘ নদী পাড় হয়ে সুন্দরবন ছেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। গত নভেম্বরে সুন্দরন ছেড়ে একটি বাঘিনী তার বাচ্চা নিয়ে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলাধীন সুন্দরবন সংলগ্ন সোনাতলা গ্রামে ঘুরে গেছে। গত ১৬ বছরে সুন্দরবন ছেড়ে অর্ধশতাধিক বাঘ লোকালয়ে প্রবেশ করে। এসময় বাঘ-মানুষের পাল্টাপাল্টি হামলায় মানুষ ও বাঘের প্রাণহানিও ঘটেছে। সুন্দরবন ছেড়ে বাঘ যাতে লোকালয়ে আসতে না পারে এমন ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি গ্রামবাসীর। সুন্দরবন বিভাগ জানায়, “ক্যামেরা ট্র্যাপিং” এর মাধ্যমে সুন্দরবনে বাঘ গণনার কাজ চলছে। বাঘ গণনার জন্য ৫ নভেম্বর সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা এবং চাঁদপাই রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ বিশ্লেষন করে জানা যাবে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা। বাঘের সংখ্যা জানতে ২৯ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে এবছর বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে এমন আশার কথা জানালেন বন কর্মকর্তারা।
জানাগেছে, সুন্দরবনের মোট আয়াতন ছয় হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে স্থলভাগের পরিমাণ চার হাজার ১৪৩ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমানে সুন্দরবনের মোট আয়াতনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকা সংরক্ষিত বনা ল। আর গোটা সুন্দরবন জুড়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগার কম বেশি বিচারণ করে থাকে। চোরা শিকারিদের তৎপরতা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে সুন্দরবনে বাঘ হুমকির মুখে রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে জরিপে সুন্দরবনে বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি নির্ধারণ করা হয়। নতুন করে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করতে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংযের মাধ্যমে বাঘ গণনার কাজ চলছে।