প্রতিদিনের ডেস্ক:
জাপানি মা ডা. এরিকো নাকানোর কাছে থাকা বড় মেয়েকে নিজের কাছে নিতে বাবা ইমরান শরীফের আপিল আবেদনের ওপর শুনানি পিছিয়ে আগামী সপ্তাহে ঠিক করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ওইদিন আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্নাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে বাবার কাছে থাকা মেঝ মেয়েকে মায়ের কাছে নিতে জাপানি মায়ের দায়ের করা আপিল শুনানির জন্যে আগামী সপ্তাহে ঠিক করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।শুনানির নির্ধারিত দিনে রোববার (২১ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।আদালতে আজ বাবা ইমরান শরীফের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম, ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম,ব্যারিস্টার রেশাদ ইমাম ও নাসিমা আক্তার লাভলী। মা এরিকোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।শুনানি পেছানোর বিষয়ে এদিন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম জাগোনিউজকে বলেন, বাবার কাছে থাকা মেঝ মেয়েকে মায়ের কাছে নিতে জাপানি মায়ের দায়ের করা আপিল ও ইমরান শরীফ এর বড় মেয়েকে নাকানো এরিকোর কাছে নিতে করা আপিল আবেদন আজকে শুনানি না করে আগামী সপ্তাহে দিন ঠিক করেছেন। ওইদিন আপিল বিভাগের সব বিচারকের উপস্থিতিতে এটির শুনানি হবে। তাই আজ শুনানি হয়নি। আর যেহেতু কোন দিন ঠিক করেনি মনে হয় কজলিস্টে আসলে বা আগামী রোববার দিনই কজলিস্টে (কার্যতালিকায়) আসতে পারে।এর আগে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত মেজ মেয়েটি তার বাবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফের হেফাজতে থাকবে। তবে তার বড় বোন মা জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকোর হেফাজতে থাকবে। শিশুদের বাবার করা এক আবেদনের (সিভিল রিভিশন) ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমানের একক বেঞ্চ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই রায় দেন। এর পরে ৩১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।২৫ মার্চ প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছেন, উভয় পক্ষেরই (শিশুদের বাবা ও মা) সন্তানদের দেখার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দুই সন্তানের সঙ্গে মা–বাবা দেখা করতে পারবেন। আর এর জন্য ইমরান শরীফ এবং নাকানো এরিকো একে অপরকে অনুমতি দেওয়া দায়িত্ব।শিশুদের হেফাজত নিয়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাবার করা পারিবারিক আপিল নামঞ্জুর করে গত বছরের ১২ জুলাই রায় দেন ঢাকার জেলা জজ আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন (সিভিল রিভিশন) করেন বাবা।প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৩ জুলাই হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। রুল আংশিক চূড়ান্ত ঘোষণা করে ওই রায় দেওয়া হয়।বিচারিক আদালতের রায় থেকে উদ্ধৃত করে পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, বড় মেয়ে তার মায়ের সঙ্গে এবং মেজ মেয়ে তার বাবার কাছে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছে। শুনানির সময় এই কোর্ট (হাইকোর্ট) দুই মেয়ের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন এবং তারা একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। মেজ মেয়ে সুস্পষ্টভাবে বলেছে, সে কোনো অবস্থাতেই তার বাবাকে ছেড়ে যাবে না।পূর্ণাঙ্গ রায়ে আরও বলা হয়, মেজ মেয়ে আদালতকে জানিয়েছে, বাবা তার প্রতি যত্নশীল এবং পুরোপুরি মনোযোগী। ভবিষ্যতের জন্য একসঙ্গে থাকার গুরুত্ব বিবেচনায় এক শিশু থেকে অপর শিশুকে সহোদরা হওয়ার কারণে আলাদা করা কঠিন। শিশুর মানসিক অবস্থা ও অভিপ্রায়সহ অন্যান্য সব দিক বিবেচনায় নিয়ে হেফাজতে দেওয়া হয়। মেজ মেয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সে তার বাবার সঙ্গে থাকতে অনড়।আদালতে বাবা ইমরান শরীফের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম, ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও নাসিমা আক্তার লাভলী। এরিকোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পেয়ে শিশুদের মায়ের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, দুই শিশু মায়ের কাছে ছিল। বিচারিক আদালতে মামলা চলার সময় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিমানবন্দর থেকে মেজ মেয়েটি তার বাবার কাছে চলে যায়। এর পর থেকে সে তার বাবার কাছেই আছে। তিন শিশুর মধ্যে বড় মেয়েটি মায়ের কাছে আছে। ছোট সন্তান শুরু থেকে জাপানে নানির কাছে রয়েছে। মেজ সন্তানের সঙ্গে তার মায়ের দেখা করার অধিকার থাকবে এবং বড় সন্তানের সঙ্গে তাদের বাবারও দেখা করার অধিকার থাকবে বলে রায়ে এসেছে। মেজ সন্তান বাবার কাছে থাকবে—এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। আর বড় মেয়ে মায়ের কাছে থাকবে—এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। পৃথক পৃথক বিষয়ে আজ ২১ এপ্রিল শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।