৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

ব্যাংকিং খাতে পরিবর্তন জরুরি

পঞ্চাশ বছরে দেশের উন্নতি আর দুর্নীতি দুটোই পাশাপাশি এগিয়েছে। অনেক বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের লুটপাটের কারণে ধ্বংসের মুখে রয়েছে। লুটকারীদের অনেকে সংসদে ও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার সিপিডির ধানমন্ডি কার্যালয়ে প্রফেসর রওনক জাহান ও প্রফেসর রেহমান সোবহান সম্পাদিত ‘ফিফটি ইয়ার্স অব বাংলাদেশ : ইকোনমি, পলিটিকস, সোসাইটি অ্যান্ড কালচার’ শীর্ষক বই নিয়ে আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলার খবর পুরনো। চরম অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। ব্যবসা পরিচালনার নামে দেশের তফসিলি ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে হজম করে ফেলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও ব্যাংক মালিকরা। এর মধ্যে বেশকিছু ব্যাংক বন্ধ হওয়ার উপক্রমও হয়েছে। এমতাবস্থায় ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার কাজ শুরু করেছে সরকার। তবে বিভিন্ন পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর চাপ তৈরির খবরও পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বেসিক, পদ্মা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বিডিবিএল ও ন্যাশনাল ব্যাংকের একীভূতকরণ নিয়ে কাজ করছে বলে জানা যায়। এ প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখবে কিনা সেটা দেখার বিষয়। যেহেতু ব্যাংকিং খাতের টাকা জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের আমানত, তাই এ খাতের দুর্বৃত্তদের কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার অবকাশ নেই। দুর্বল করপোরেট শাসন ব্যবস্থা, আইনের দুর্বল প্রয়োগ এবং স্বচ্ছতার অভাব বাংলাদেশের ব্যাংক খাতকে ঝুঁকির মধ্যে রেখেছে। এখানে ব্যাংক খাত নিয়ন্ত্রণ করে এমন সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, যাদের আসল আগ্রহ অন্যত্র। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ বা ব্যবসায়ী গ্রুপের মালিকরা ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করছে। ব্যাংকের এমডি ও সিইও নিয়োগের পেছনে যারা টাকা ব্যয় করে, তারা মূলত কোটি কোটি টাকার ঋণখেলাপি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক দলের নেতারা আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ব্যাংকের পরিচালকরা অনেক সময় প্রভাব বিস্তার করে ঋণ অনুমোদন করে। অনেক সময় যথাযথ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান না করে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করা হয়। এসব ঋণ সময়ের ব্যবধানে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। ছোট ছোট ঋণগ্রহীতার ওপর ব্যাংকের কড়া নজরদারি, পিডিআর অ্যাক্টে মামলা ইত্যাদি থাকলেও প্রভাবশালী ঋণখেলাপিদের ধরতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কঠোর হতে পারছে না। খেলাপি ঋণ কমানোর কথা বলে বিভিন্ন সময়ে ঋণখেলাপিদের নানা সুবিধা ও প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সুফল আসেনি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির এবং সমৃদ্ধির উজ্জ্বল চিত্র আমাদের উল্লসিত করলেও সব উচ্ছ¡াস থেমে যায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির অঙ্ক দেখলে। এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সবাই সচেতন এবং ওয়াকিবহাল। বিষয়টি সবাইকে বিব্রত করে, এ নিয়ে সরকারি বিভিন্ন মহলে এবং ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দারুণ অস্বস্তি রয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া অর্থ আত্মসাৎ সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া কাগজপত্র ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে মোটা অঙ্কের ঋণ দেয়াই এর প্রমাণ। ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে হলে প্রথমেই ঋণখেলাপিসহ প্রতিটি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা-পরিচালকদের সাজা নিশ্চিত করতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়