২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

ভারী হচ্ছে লোকসানের পাল্লা, বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের হতাশা

প্রতিদিনের ডেস্ক
পতনের বৃত্তে আটকে গেছে দেশের শেয়ারবাজার। প্রতিদিনই লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমছে। ফলে কমছে মূল্যসূচক। সেইসঙ্গে ভারী হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা।সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (২১ এপ্রিল) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক কমার মাধ্যমে ঈদের পর লেনদেন হওয়া ৫ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।
এমন অব্যাহত দরপতন হওয়ায় বড় ধনের লোকসানের মধ্যে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এ লোকসান থেকে বের হয়ে আসার কোনো উপায় যেন তারা পাচ্ছেন না। শুধু ঈদের পরে নয়, ঈদের আগেও শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়। এমন পতনের কারণে কোনো কোনো শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা ৪০ শতাংশের ওপরে লোকসানে রয়েছেন।
এ বিষয়ে বিনিয়োগকারী মিজানুর রহমান বলেন, ঈদের আগে প্রায় দুই মাস ধরে শেয়ারবাজার পতনের মধ্যে ছিল। সেই পতনের মধ্যে পড়ে ২০-৩০ শতাংশ লোকসানে শেয়ার বিক্রি করেছি। তবে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে চার কার্যদিবস বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকে। এতে নতুন করে আবার কিছু শেয়ার কিনি। এখন সেই শেয়ারগুলোতেও লোকসানে পড়েছি। এ লোকসান থেকে কীভাবে বের হবো তার কোনো উপায় দেখছি না।
সাইফুল ইসলাম নামের আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, আমার পোর্টফোলিওতে ৫টি কোম্পানির শেয়ার আছে। এর মধ্যে ৩টি শেয়ারেই ৩০ শতাংশের ওপরে লোকসানে রয়েছি। এ লোকসান কখনো কাটিয়ে উঠতে পারবো কি না জানি না। দিন যত হচ্ছে লোকসানের পরিমাণ তত বাড়ছে। বাজার চিত্র দেখে প্রতিদিনই হতাশ হচ্ছি।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ঈদের পর শেয়ারবাজারে দরপতনের পেছনে ইরান এবং ইসরায়েল ইস্যু ভূমিকা রেখেছে। ইরান-ইসরায়েল ইস্যুর কারণে অন্যান্য দেশও সাফার করছে। তেলের দাম বেড়ে গেছে। এটার প্রভাব রয়ে গেছে। তবে, এটা (ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা) যেহেতু আর বাড়ছে না, আমরা আশা করছি শিগগির বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, এখন অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো যখন আস্থার অভাব থাকে, তখন মূল্যের দিকে বিনিয়োগকারীরা তাকায় না। এটা অন্যান্য দেশেও হয়। আমাদের বাজারে অনেক স্টক আছে, যেগুলো খুবই আন্ডারভ্যালু। আনফরচুনেটলি কেউ এগিয়ে আসছে না। এটা অবশ্য সময় মতো নিজে নিজেই ঘুরে দাঁড়াবে।বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ১৪ পয়েন্ট বেড়ে যায়। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকায় একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ২৪ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
কিন্তু লেনদেনের সময় আধাঘণ্টা গড়ানোর আগেই দাম কমার তালিকায় চলে আসে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে সূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের শেষদিকে দাম কমার প্রবণতা আরও বেড়ে যায়। ফলে সবকটি মূল্যসূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৭৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮৫টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬৫৩ পয়েন্টে নেমে গেছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৮২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৩৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৭৮ কোটি ২৩ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫২২ কোটি ৫১ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৯ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা গোল্ডেন সনের ২৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সেলভো কেমিক্যাল।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, লাভেলো আইসক্রিম, রবি, ফু-ওয়াং সিরামিক, বেস্ট হোল্ডিং, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স এবং সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস।
অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১১৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৮টির এবং ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১৮ কোটি ৫ লাখ টাকা।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়