প্রতিদিনের ডেস্ক
শিল্প-কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের শর্ত শিথিল হচ্ছে। বর্তমান শ্রম আইন অনুযায়ী ৩ হাজার বা এর বেশি শ্রমিক থাকা কারখানায় ১৫ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি প্রয়োজন হয়। এখন সংশোধিত শ্রম আইনে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে কারকানায় শ্রমিকের সংখ্যার বাধ্যবাধকতার শর্ত তুলে দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার (২২ এপ্রিল) সচিবালয়ে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সংশোধিত শ্রম আইন আগামী বাজেট অধিবেশনে পাস হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী।
মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তারা মূলত বাংলাদেশের শ্রম আইন, শ্রমিকদের অধিকার এবং তা নিয়ে আমরা কী কাজ করছি- এসব বিষয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাদের গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্ন ছিল সেটা হচ্ছে- বাংলাদেশে শ্রম আইনের যে সংশোধন হচ্ছে, সেটার বর্তমান পরিস্থিতি কী? কী করা হচ্ছে? এগারোটা ব্যাপারে তাদের জানার ইচ্ছা ছিল এবং এ ব্যাপারে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, তা তাদের জিজ্ঞাসায় ছিল।’
তিনি বলেন, ‘তাদের প্রথম জিজ্ঞাসা ছিল, থ্রেসহোল্ড (ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে শ্রমিকদের সম্মতির হার) নিয়ে। অর্থাৎ ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার জন্য যে কত শতাংশ শ্রমিক প্রয়োজন, সেটা নিয়ে। প্রথমে ২০১৬ সালের দিকে ৩০ শতাংশ ছিল। ২০১৭ সালে যখন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সম্মেলনে যাই, তখন এই থ্রেসহোল্ড ২০ শতাংশে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।’
‘তখন আমি বলেছিলাম, এটা আমরা আরও কমাবো, তবে সেটা ধীরে ধীরে। এবার যখন সংশোধনী হয়, তখন প্রথম প্রস্তাব ছিল এটাকে ২০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নিয়ে আসবো। কিন্তু সেখানে একটা ক্যাভিয়েট (শর্ত) ছিল, এটা শুধু যেসব কারখানায় তিন হাজার বা তার চেয়ে বেশি শ্রমিক কর্মরত, তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে। আমরা সেটা (৩ হাজার বা এর চেয়ে বেশি শ্রমিক থাকা) তুলে দিচ্ছি, সব কারখানার জন্য সেটা প্রযোজ্য হবে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘শ্রম আইন নিয়ে সমস্যা যখন হয়েছিল তখন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ফেরত আনা হয়েছিল। তার পরের আলোচনায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা এটা সবার জন্য করবো, কোনো ক্যাপ (সীমা) থাকবে না। সেটাও আমরা মার্কিন প্রতিনিধিদের জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘তারপরে বাংলাদেশ শ্রমিক আইন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ যেটা হচ্ছে, সেখানে প্রযোজ্য হবে। আগে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন লেবার অ্যাক্টে প্রযোজ্য হওয়ার কথা ছিল। সেই সংশোধনী আমরা করেছি। যে এগারোটি বিষয় তারা জানতে চেয়েছিলেন, তাতে এগুলো ছিল।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যেটা এরইমধ্যে শেষ করেছি, সেটা সম্পর্কে তাদের বলেছি। যেটা নিয়ে কাজ করেছি সেটাও বলেছি। যেমন, শ্রমিক অধিকার নিয়ে। এটা চলমান কাজ। শ্রমিকদের অধিকার দিন দিন বাড়বে, কমবে না।’
‘কোন দেশ আমাদের কী দেবে, কী দেবে না- সেটার ওপর নির্ভর করে আমরা শ্রমিকদের অধিকারের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করবো না। সবসময় শ্রমিকদের অধিকার যা আছে, তার থেকে বেশি যাতে তারা পায় এবং অধিকার বাস্তবায়ন করা, তারা যাতে সেটা ভোগ করতে পারে, সেটা নিশ্চিত এই সরকার করবে।’
বাংলাদেশের শ্রম আইন ও অধিকারের বিষয়ে শোনার পর মার্কিন প্রতিনিধিরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেও জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।