প্রতিদিনের ডেস্ক
তীব্র দাবদাহে রাজধানীতে জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এরমধ্যে নগরের অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশানে দেখা দিয়েছে পানির সংকট। এছাড়া জুরাইন, নন্দীপাড়ায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানি ব্যবহার অনুপযোগী বলে অভিযোগ রয়েছে।তবে ঢাকা ওয়াসার দাবি, তীব্র গরমে ওয়াসার অধীন এলাকায় পানির চাহিদা অনেক বেড়েছে। কিন্তু সার্বিকভাবে পানি সরবরাহে ঘাটতি নেই। গুলশানসহ ঢাকার কোনো এলাকায় পানি সংকটের অভিযোগ কেউ করেনি। যেসব এলাকায় পানির মান ভালো নয়, সেখানে ওয়াসা কাজ করছে।
ঢাকা ওয়াসার ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে মডস জোন-৫ এর আওতায় পড়েছে গুলশান-২। এ এলাকার ৫৫ থেকে ৭৪ নম্বর রোড পর্যন্ত বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক ভবনে পানি সংকট রয়েছে। পানি সংকটের কারণে গৃহস্থালির কাজ যথাসময়ে করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।গুলশান ৫৫ নম্বর রোডের বাসিন্দা মাহতাব উদ্দিন। আলাপকালে তিনি বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহ শুরুর পর থেকে ওয়াসার লাইনে পানি ঠিকমতো পাওয়া যায় না। অর্থাৎ আগে যখনই মোটর চালু করা হতো, লাইনে পানি পাওয়া যেত। এখন দিনের নির্দিষ্ট সময়ে ওয়াসা লাইনে পানি দিচ্ছে। এর বাইরে অন্য সময়ে লাইনে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। দুই দিন আগে বিষয়টি ওয়াসার হটলাইনে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
বেশ কয়েক দিন ধরে গুলশানে পানি সংকট চরম আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন গুলশান সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আহসান হাবিব। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই গুলশানের ৫৫ থেকে ৭৪ নম্বর রোডে পানি সংকট চলছে। বিষয়টি ওয়াসাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধান হচ্ছে না। এখন ওয়াসার পানি নিয়ে গুলশানের বিভিন্ন এলাকার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তবে ভিন্ন কথা বলেছেন ওয়াসার মডস জোন-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তৌহিদ এলাহী। তিনি বলেন, গুলশানে তারা নিয়মিত পানি সরবরাহ করছেন। পানি সংকটের বিষয়ে ওয়াসায় কেউ যোগাযোগ করেনি। তবে তাপপ্রবাহ বা পানির চাহিদা বাড়লে সব লাইনে একসঙ্গে পানির চাপ থাকে না। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবো।অন্যদিকে ওয়াসার অঞ্চল-৬ এর অধীনে পড়েছে নন্দীপাড়া এলাকা। এই এলাকায় পানি সংকট তেমন না থাকলেও ওয়াসার সরবরাহ করা পানি ব্যবহার করা যায় না বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আজিজুল হক।
তিনি বলেন, আগে নন্দীপাড়া এলাকায় তীব্র পানি সংকট ছিল। আমি কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর ওয়াসাকে বলে পৃথক তিনটি পাম্প বসিয়েছি। এরমধ্যে গত বছর মধ্য ও পূর্ব নন্দীপাড়ায় যে দুটি পানির পাম্প বসানো হয়েছে, সেগুলোর পানি এখন ব্যবহার অনুপযোগী। পানিতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন রয়েছে। বিষয়টি ওয়াসাকে জানানো হলেও তারা আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা জানান, প্রতি বছরই এপ্রিল-মে মাসে রাজধানীতে পানির সংকট বেশি হয়। এবারও গরমে পানির চাহিদা বেড়েছে। তবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কিছু জায়গায় গভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন কমেছে। এতে চাহিদার তুলনায় পানি সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে।
২০১৯ সালে ওয়াসার সরবরাহ করা ময়লা পানি দিয়ে সরবত বানিয়ে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকে খাওয়াতে চেয়েছিলেন জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। এ ঘটনার পর সারাদেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এত বছর পরও জুরাইনের সেই চিত্র পাল্টায়নি বলে অভিযোগ করেছেন মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, ওয়াসার লাইন থেকে বাসাবাড়িতে যে পানি সরবরাহ করা হয় তা ব্যবহার অনুপযোগী। এ পানি ফুটিয়েও পান করা যায় না। আর বিকল্প উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে তা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে নাগরিকদের ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগ লেগেই আছে। জুরাইনের অধিকাংশ মানুষ আশপাশের মসজিদ, মাদরাসা বা কলকারখানার গভীর নলকূপ থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করেন। কিন্তু এটি অত্যন্ত কষ্টের কাজ। সবার পক্ষে দূরে গিয়ে পানি বহন করে নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। এ হিসেবে জুরাইনে পানি সংকট এখনো রয়ে গেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসীম এ খান বলেন, ঢাকায় চাহিদার চেয়ে পানির উৎপাদন বেশি রয়েছে। এখন ঢাকার কোথাও পানি সংকটের কথা শুনিনি। ওয়াসার হটলাইন নম্বরে (১৬১৬২) নম্বরেও কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তা সমাধান করা হবে। আর জুরাইন, নন্দীপাড়াসহ ঢাকার চারপাশের এলাকাগুলোতে ওয়াসার নতুন লাইন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এসব কাজ শেষ হলে আর কোনো এলাকায় সমস্যা থাকবে না।