আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে তাপমাত্রা। সারাদেশে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে হিটস্টোকে ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উঠলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ঘোষণা করা হয়। এছাড়া তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর আর্দ্রতা ৩০-এর ওপরে গেলে একে বিপজ্জনক আবহাওয়া হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আবহাওয়াবিদের তথ্যমতে, এপ্রিলে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে তা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। গত শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। গড়ে সারাদেশের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। তথ্য অনুযায়ী, তাপপ্রবাহে উত্তাপের তীব্রতা এতটাই রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে। ফসল পুড়ে যাচ্ছে। গায়ে যে বাতাস লাগে, তা ছ্যাঁকা লাগার মতো অনুভূত হচ্ছে। ত্রাহি অবস্থা মানুষ ও প্রাণিকুলের। থমকে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা, হয়ে পড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। অসহনীয় গরমে ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। প্রচণ্ড এই তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন বয়স্ক, শিশু ও রোগাক্রান্ত মানুষ। সঙ্গে বিড়ম্বনায় শ্রমজীবী মানুষও। জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রখর রোদে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। তীব্র তাপদাহে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তাই রোদ এড়িয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এদিকে তাপের তীব্রতায় হিটস্ট্রোকে গত শনিবার দেশের তিন জেলায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য বছরগুলোতে এই সময়ে কয়েক দিন পরপর একাধিক কালবৈশাখী, ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতো। এতে তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমে আসত। এবার বৃষ্টি ও বাতাস নেই বললেই চলে। চার দিন ধরে দেশের ৭০ শতাংশ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে গেছে। অতি গরমের সঙ্গে মানুষের শরীর খাপ খাওয়াতে পারছে না। এতে নানা ধরনের রোগ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়া ফসলের উৎপাদন কমিয়ে দেয়া সহ খরা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। মানুষের মেজাজ খিটখিটে হওয়া এবং সামাজিক অশান্তি তৈরির ক্ষেত্রেও এই অতি উষ্ণতা প্রভাব ফেলছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু পরিবর্তন যতটা দায়ী তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা। প্রধানত বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় এই তিনটি কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো সবুজায়ন কমে যাওয়া। একসময় বাংলাদেশে ২৫ ভাগের বেশি সবুজায়ন থাকলেও বর্তমানে এর পরিমাণ খুবই নগণ্য। অন্যদিকে এখন শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের নামে রাস্তার বিভাজনের বড় বড় গাছগুলোকে কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ও জলীয়বাষ্প কমে গিয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং একই কারণে বৃষ্টিপাতও কমে যাচ্ছে। এই ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিটি ফাঁকা স্থানে গাছ লাগাতে হবে। ঢাকা শহরে ছাদ বাগান বৃদ্ধি করতে হবে। জলাভূমির পরিমাণও বৃদ্ধি করতে হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং শহরাঞ্চল থেকে মানুষের আধিক্যতা কমাতে হবে। জীবাশ্ম জ¦ালানির ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং এর পরিবর্তে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। শহরের স্থানীয়, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জননীতিকে মাথায় রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি সবাইকে এই তাপপ্রবাহ কমানোর লক্ষ্যে একযোগে কাজ করে যেতে হবে।
তাপপ্রবাহ কমাতে করণীয় ঠকি করুন
Previous article
Next article
আরো দেখুন
১৮ হাজার শ্রমিকের জন্য সুখবর
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাস আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি। মালয়েশিয়া একসময় দেশের অভিবাসী কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। ১৯৮৯...
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হোক
উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে মানুষের মৌলিক অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশে তার উল্টো পরিস্থিতি তৈরি...