প্রতিদিনের ডেস্ক
তীব্র গরমে প্রতিদিনই মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা। জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। একই শয্যায় ২-৩ জন এমনকি ফ্লোরেও থাকছে হচ্ছে রোগীদের। এতে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
মাদারীপুরে তীব্র দাবদাহে জনজীবনে নেমে এসেছে অস্বস্তি। প্রায় ১০ দিন ধরে তাপমাত্রা ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। এতে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
সোমবার (২২ এপ্রিল) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১০৮ শিশুকে ভর্তি দেখা যায়। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ছিল ২৫ শিশু। অথচ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ৪০টি। একসঙ্গে এতো শিশুকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
শয্যা সংকটে এক শয্যায় একসঙ্গে কয়েকজন শিশুকে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ফ্লোরেও মাদুর বিছিয়ে থাকছেন রোগী ও স্বজনরা। প্রচণ্ড গরমে গাদাগাদি করে থাকতে গিয়ে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
অদিতি নামের রোগীর স্বজন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের ছেলে হাসপাতালে ভর্তি। গরমে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এক বেডে দুজন থাকছে। এভাবে থাকতে সমস্যা হচ্ছে। বাচ্চার মায়েদের সারারাত বসে ও দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। কী যে অবস্থা বলে বোঝানো যাবে না।’রোগীর মা ফারজানা আক্তার বলেন, ‘আমার দুই ছেলেই অসুস্থ। একটার বয়স পাঁচ বছর, অন্যটার সাত মাস। বড় ছেলের টাইফয়েড ও ছোট ছেলের নিউমোনিয়া হয়েছে। গত ছয়দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি কিন্তু কোনো বেড পাইনি। ফ্লোরেই থাকতে হচ্ছে।’
তানজিলা আক্তার নামের আরেকজন বলেন, ‘আমার দেড় বছরের ছেলের নিউমোনিয়া হয়েছে। তাই হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কিন্তু কোনো বেড না পাওয়ায় ফ্লোরেই থাকতে হচ্ছে। গরমে বাচ্চারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর বোন সুইটি আক্তার বলেন, ‘আমার ভাইয়ের হঠাৎ করে পেটে সমস্যা হয়। গরমের জন্যই হয়তো হয়েছে। রোববার রাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখনো তার চিকিৎসা চলছে।’
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১০৮ জন রোগী ভর্তি আছেন জানিয়ে হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নিতু বাড়ৈ বলেন, গরমের কারণে কয়েকদিন ধরে শিশুরোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কয়েকদিন ধরে গড়ে ৩০-৪০ জন শিশুরোগী ভর্তি হচ্ছে। তবে আমরা আমাদের সাধ্যমতো সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. খলিলুজ্জামান খান হিমু বলেন, সারাদেশের মতো মাদারীপুরেও তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। এতে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত হিট স্ট্রোকে কেউ ভর্তি হননি।
তিনি বলেন, গরমের কারণে শিশু ও বৃদ্ধরাই বেশি অসুস্থ হচ্ছেন। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। তবে বেশি ঠান্ডা পানি পান করার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হবেন না। যদি রোদের মধ্যে কাজ করতে হয়, তাহলে কিছুক্ষণ পর পর ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে। একটানা রোদের মধ্যে কাজ করা যাবে না।