নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের চৌগাছা উপজেলার স্বরুপদাহ গ্রামে আট অর্থবছরে জেলা পরিষদের প্রায় অর্ধকোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পগুলোতে রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকল্পগুলোর অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছেন জেলা পষিদের একজন অফিস সহায়ক (পিয়ন)। তিনি সরোয়ার উদ্দিন। তার বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার স্বরুপদাহ গ্রামে। অভিযোগ রয়েছে, সরোয়ার উদ্দিন নিজেকে এলাকায় ‘দানবীর’ হিসেবে জাহির করতে জেলা পরিষদের প্রকল্পের ফলকে নিজের নামও বসিয়েছেন। এলাকায় প্রচার করেছেন তিনিই বরাদ্দ দিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। যশোরের চৌগাছা উপজেলার স্বরুপদাহ গ্রামের হাফেজিয়া মাদরাসা, ঈদগাহ, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও রাস্তার উন্নয়নে অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে জেলা পরিষদ। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২০২৪ পর্যন্ত আট অর্থবছরে স্বরুপদাহ গ্রামে প্রায় ৫০ লাখ টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছে জেলা পরিষদ। প্রত্যেকটি উন্নয়ন প্রকল্পের নামফলকে নিজের নাম লিখেছেন জেলা পরিষদের অফিস সহায়ক সরোয়ার উদ্দিন। জেলা পরিষদের টাকায় তিনি এলাকায় ‘দানবীর’ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে স্বরুপদাহ সরদারপাড়া ঈদগাহ ময়দান উন্নয়নে এক লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জেলা পরিষদ। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে একই গ্রামের শাহ আলমের বাড়ি থেকে তরিকুল সরদারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সোলিংকরণে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ রাস্তা নির্মাণের সময় জোরপূর্বক রাস্তা ঘুরিয়ে পাশের জমিতে ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে স্বরুপদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার নির্মাণে তিন লাখ, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে স্বরুপদাহ হাফেজিয়া মাদরাসায় তিন লাখ, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে স্বরুপদাহ হাফেজিয়া মাদরাসায় ১০ লাখ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্বরুপদাহ হাফেজিয়া মাদরাসায় ১০ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বরুপদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তিন লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে স্বরুপদাহ পূর্বপাড়া ঈদগাহে তিন লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে স্বরুপদাহ সরদারপাড়া ঈদগাহে তিন লাখ এবং সবশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্বরুপদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণে ফের তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, সবশেষ এ বরাদ্দের টাকায় কাজ না করে শিক্ষকদের তিন হাজার টাকা করে ঈদের বোনাস, শিক্ষার্থীদের বেতন সমন্বয় ও শিক্ষার্থীদের পিকনিকের ব্যবস্থা করেন সরোয়ার উদ্দিন। তিনি এ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ছিলেন। পরবর্তী সময়ে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য জেলা পরিষদের টাকার অপব্যবহার করেন। যদিও তথ্য গোপন করে সভাপতি হওয়ায় পরে যশোর শিক্ষাবোর্ড তাকে অব্যাহতি দেয়। স্বরুপদাহ গ্রামের বাসিন্দা সানোয়ার হোসেন বকুল বলেন, ‘সরোয়ার উদ্দিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে জেলা পরিষদের টাকা তছরুপ করেছেন। প্রত্যেক প্রকল্পের বরাদ্দের জন্য ৩০-৪০ শতাংশ হারে ঘুস আদায় করেছেন। এসব প্রকল্প ফলকে সরোয়ার উদ্দিনের নাম লেখা হয়েছে। জেলা পরিষদের একজন পিয়নের ক্ষমতার উৎস তদন্ত করে দেখা দরকার।’ তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা পরিষদের অফিস সহায়ক সরোয়ার উদ্দিন। তার দাবি, প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। সরোয়ার উদ্দিন বলেন, ‘সুযোগ ছিল তাই এলাকার মানুষের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। এলাকার তিনজন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব কাজে গ্রামের সব মানুষ খুশি।’ যশোর জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, জেলা পরিষদের উন্নয়ন প্রকল্পের নামফলকে সরোয়ার উদ্দিনের নাম লেখার কোনো সুযোগ নেই। প্রকল্প বরাদ্দের সঙ্গেও তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কীভাবে প্রকল্প ফলকে তার নাম লেখা হলো জানা নেই। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।