৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

আদালত অবমাননা বিএনপিপন্থি ৭ আইনজীবীর বিষয়ে আদেশ ১২ জুন

প্রতিদিনের ডেস্ক
বিএনপিপন্থি সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনের ওপর আদেশের দিন পিছিয়ে আগামী ১২ জুন নির্ধারণ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আদেশের দিনে অভিযুক্ত সাতজনের মধ্যে দুজন আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় বুধবার (২৪ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিন দুজন আইনজীবী উপস্থিত হতে পারছেন না বলে আদালতে জানান ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কারণে দুজন আইনজীবী আজকে উপস্থিত হতে পারেননি। তাদের একজন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এজে মুহাম্মদ আলী চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে আছেন। অপরজন সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, তিনি চিকিৎসার জন্য আমেরিকায় আছেন।
এর আগে আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির পদত্যাগে আলটিমেটাম দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীসহ বিএনপিপন্থি ৭ আইনজীবীর বিরুদ্ধে করা আদালত অবমাননার অভিযোগ শুনানির জন্য গত ২২ এপ্রিল পরবর্তী দিন ঠিক করেন আপিল বিভাগ। ওইদিন দুইপক্ষের সময় আবেদন সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে ওইদিন বিএনপির পক্ষে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও বারের সাবেক সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, অভিযোগকারীরাও সময় চেয়েছেন। আমরাও চাই ঈদের পর শুনানির দিন ধার্য করার জন্য। পরে আদালত শুনানির জন্য ২২ এপ্রিল দিন ধার্য করেন। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সেটি শুনানির জন্য উঠে। গতকাল আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন। নির্ধারিত দিনে আদেশ না দিয়ে সেটি পিছিয়েছে।
আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠা বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা হলেন- জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী মো. কামরুল ইসলাম সজল।
আপিল বিভাগের দুজন বিচারপতি সম্পর্কে এক সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের সূত্র ধরে এই আইনজীবীদের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৯ আগস্ট আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদন করা হয়। আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা।
আবেদনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে গত বছরের ২৭ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করা হয়। বিচারপতিদের নিয়ে ব্যানার-লিফলেটসহ বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মিছিল-অবস্থানের ছবিও আবেদনে যুক্ত করা হয়।আবেদনের শুনানি নিয়ে ১৫ নভেম্বর আপিল বিভাগ আদেশ দেন। সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের সূত্র ধরে আদালত অবমাননার আবেদনে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সে বিষয়ে নিজেদের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে বিএনপিপন্থি সাত আইনজীবীকে ১৫ জানুয়ারি সকাল ৯টায় আপিল বিভাগে (১ নম্বর কোর্টে) হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দুই বিচারকের পদত্যাগ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল-সমাবেশ করায় বিএনপিপন্থি সাত আইনজীবীকে আদালত অবমাননার ব্যাখ্যা দিতে বলেন আপিল বিভাগ। গত বছরের ১৫ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল-সমাবেশের বিষয়েও রায় মেনে চলার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।গত বছরের ৩০ আগস্ট অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়। এ বিষয়ে ব্যাখ্যাও তলব করেছিলেন সর্বোচ্চ আদালত।একই বছরের ১৫ আগস্ট শোক দিবসের আলোচনা সভায় সংবিধান অনুসারে বিচারপতিরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ উল্লেখ করে বক্তব্য দেওয়ায় আপিল বিভাগের দুজন বিচারপতির বিরুদ্ধে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এছাড়া ওই দুজন বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতারা মিছিল-সমাবেশও করেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে ২৭ আগস্ট ওই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে দেওয়া বক্তব্যের কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করে ২৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা আবেদনটি করেন। এতে বিচারপতিদের নিয়ে ব্যানার-লিফলেটসহ বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মিছিল ও অবস্থানের ছবি যুক্ত করা হয়।
দুদিন পর ২৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননার এ আর্জি জানান যুবলীগ সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি। এদিন আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে এ আবেদনের বিষয়টি উপস্থাপন করেন।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, যেহেতু বেঞ্চ পুনর্গঠনের প্রয়োজন রয়েছে কাজেই ২৯ আগস্ট এ আবেদন শোনা যাবে না। তিনি তার সচিবের কাছে আবেদনটি জমা দিয়ে যেতে বলেন। আইনজীবী নাজমুল হুদার পক্ষে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি এ আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল-সমাবেশ করায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ সাতজনকে বিবাদী করে তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়।
গত বছরের ৩০ আগস্ট আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য উঠেছিল। সেদিন আপিল বিভাগ আদালত প্রাঙ্গণে সমাবেশ, মিছিল, র্যালি, মানববন্ধন ও ধর্মঘট না করতে হাইকোর্টের ২০০৫ সালের ২৩ মে দেওয়া আদেশ কঠোরভাবে মেনে চলতে সবাইকে নির্দেশ দেন।
একই সঙ্গে আদালত অবমাননার আবেদন শুনানির জন্য ১৯ অক্টোবর তারিখ ধার্য করেছিলেন আপিল বিভাগ। সেদিন আপিল বিভাগ ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এর পরে ১৫ নভেম্বর শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ (আদালত প্রাঙ্গণে সমাবেশ, মিছিল, র্যালি, মানববন্ধন ও ধর্মঘট না করতে) কঠোরভাবে অনুসরণ করতে নির্দেশসহ আদেশ দেন। সেদিন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছিলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশ সবাই কঠোরভাবে পালন করবেন।’

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়