২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

চট্টগ্রামে তিন কিলোমিটারজুড়ে বসেছে দেশীয় পণ্যের মেলা

প্রতিদিনের ডেস্ক:
প্রায় তিন দশক ধরে চট্টগ্রামে জব্বারের বলী খেলার মেলায় আসছেন মৃৎশিল্পী সঞ্জয় পাল। তার বাড়ি চাঁদপুর জেলায়। বংশপরম্পরায় এবারও মাটির নানান তৈজসপত্র নিয়ে লালদীঘির ময়দানের মেলায় এসেছেন দুইদিন আগে। এ মেলার সঙ্গে তার শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত। আগে আসতেন বাবা-কাকার সঙ্গে, এখন আসেন একা। এ মেলার টান তাই প্রবল তার কাছে।সঞ্জয় বলছিলেন, একটু আগেভাগে না এলে পছন্দমতো জায়গা মেলে না। এবার মেলা ভালো জমবে মনে হয়।সঞ্জয়ের মতোই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা লালদীঘি ময়দানের আশপাশে প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে বসেছেন গৃহস্থালী তৈজসপত্র ছাড়াও বাঁশি, খেলনা, জুয়েলারি, দেশীয় খাবারের দোকান নিয়ে। তাদের আশা, এবারের জব্বারের বলী খেলার মেলা জমবে ভালো।চট্টগ্রাম নগরে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে আজ বুধবার থেকে শুরু হয়েছে বৈশাখীমেলা। নগরের লালদীঘির মাঠ ও আশপাশের এলাকা ভরে উঠেছে রকমারি সব পণ্যে। ঝাড়ু, হাঁড়ি-পাতিল, দা-খুন্তি কিংবা হাতপাখার পসরা নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে মেলায় ভিড় করেছেন। কমতি নেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদেরও। ক্রেতা-বিক্রেতা মিলিয়ে জমজমাট এবারের মেলা।১৯০৯ সালে বকশীর হাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর যুবসমাজকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করতে বলী খেলার সূচনা করেছিলেন। এরপর থেকে প্রতিবছর ১২ বৈশাখ বলী খেলা ও বৈশাখীমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তিনদিনের মেলা হলেও এর বেশি সময় ধরে পণ্যের পসরা সাজিয়ে চলে বিকিকিনি।মেলা কমিটির আহ্বায়ক ও ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী জাগো নিউজকে বলেন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও মালামাল নিয়ে এখানে বিক্রেতারা এসেছেন মেলায়। অন্তত দুই হাজার বিক্রেতা মেলায় এসেছেন বলে ধারণা করছি।বেলা ১১টার দিকে মেলায় কথা হয় গৃহিণী নাছরিন হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত ১০ বছর ধরে জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে আয়োজিত বৈশাখীমেলা থেকে শীতল পাটি, হাতপাখাসহ সংসারের টুকটাক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনছি। এছাড়া ফুলের ঝাড়ু, বাঁশ, বেতের ফার্নিচার, দা-বটির মতো পণ্যসামগ্রী সহজে পাওয়া যায় না। তাই প্রতি বছর মেলা থেকেই এসব পণ্য সংগ্রহ করি।প্রতিবারের মতো এবারও মেলায় এসেছেন নারায়ণগঞ্জের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহজালাল। নিয়ে এসেছেন মণ্ডা-মিঠাই। তিনি বলেন, বংশপরম্পরায় মণ্ডা-মিঠাইয়ের ব্যবসা আমাদের। এবারও মুড়ি-মুড়কি, নাড়ু, ঘইশা, চুটকি, মণ্ডা এমন নানা ধরনের শুকনা মিষ্টি নিয়ে এসেছি লালদীঘির ময়দানে। মেলা উপলক্ষে এসবের একটা আলাদা চাহিদা থাকে।প্লাস্টিকের হাতপাখা ও চেয়ারের কারণে সংকুচিত হচ্ছে বাঁশ বেতের তৈরি হাতপাখা ও মোড়ার বাজার। তারপরও মজবুত গঠন, সুশ্রীর কারণে লালদীঘির মেলায় গৃহিণীদের প্রধান চাহিদা থাকে বাঁশ ও বেতের হাতপাখা এবং মোড়ায়। তালপাতা ও বেতের, উভয় হাতপাখার দেখা মিলছে জব্বারের বলী খেলার মেলায়। গৃহস্থালী এসব জিনিসের জন্য মানুষ অপেক্ষায় থাকে মেলার জন্য।একইভাবে বলী খেলার মেলায় চট্টগ্রামের মানুষের চাহিদার শীর্ষে ফুলঝাড়ু। এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা বলী খেলার মেলা থেকে এ ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করেন না। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও বাঁশখালী, কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়াসহ নানান জায়গা থেকে এসব ফুলঝাড়ু নিয়ে মেলায় আসেন দোকানিরা।মেলার ঝাড়ুর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্লাস্টিকের ঝাড়ুর ব্যবহার বাড়ায় ফুলের ঝাড়ুর ব্যবহার দিন দিন কমছে। তারপরও এবার ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে একটি ফুলের ঝাড়ু। শলার ঝাড়ুর দাম ৪০ টাকা থেকে ১০০ টাকা।ঢাকার নাসির উদ্দিন এসেছেন গৃহসজ্জার মাটির টব, ব্যাংক, শোপিস নিয়ে। তিনি বলেন, প্রতিবছর মেলায় আসি। এবারও এলাম। তবে এবার জিনিসপত্র কম সংগ্রহ করতে পেরেছি। কুমাররা বেশি পণ্য দিতে পারেননি।তিনি জানান, একসময় তৈজসপত্র মানেই ছিল কুমারপাড়ার মাটির গৃহস্থালী সামগ্রী। গত দুই দশকে এই বাজার দখলে নিয়েছে সিরামিক, মেলামাইন ও প্লাস্টিক। তারপরও নাসির উদ্দিনের মতো অনেক ব্যবসায়ী কুমিল্লা, ঢাকার ধামরাই, শরীয়তপুর, টাঙ্গাইল, যশোর, পটুয়াখালী, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব হস্ত, কুটির, মৃৎশিল্পের মালামাল সংগ্রহ করেন। বিক্রি করেন সারাদেশে বৈশাখী মেলাগুলোয় ঘুরে ঘুরে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়