৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের প্রস্তুতি

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এমতাবস্থায় সোমবার থেকে শুরু হয়েছে চার দিনের ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান (ন্যাপ) সম্মেলন। এতে দেশ-বিদেশের প্রায় শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করছেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সম্মেলন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় যুদ্ধে অর্থ ব্যয় না করে জলবায়ু পরিবর্তনে অর্থ ব্যয়ের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধে অস্ত্র ও অর্থ ব্যয় না করে সেই টাকা জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় করা হলে বিশ্ব রক্ষা পেত। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব নেতারা এই বিষয়ে মনোযোগী হলে সুফল আসবে বলে মনে করছি। এই সম্মেলনে সরকারের বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই পরিবেশের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তবে সামনে আমাদের বেশ কিছু বিষয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-২০৩০। পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়ন রূপকল্প-২০৪১। এই রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৬টি অভিযোজন লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে- জলবায়ু অস্বাভাবিক পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা; খাদ্য, পুষ্টি ও জীবনযাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষির উন্নয়ন করা; নগরের প্রতিবেশ উন্নয়ন ও জলবায়ু সহ্য করার নগর গড়ে তোলা, বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সার্বিক কল্যাণ ও জলবায়ু অভিযোজনে সহায়ক রূপান্তরের সক্ষমতা বাড়ানো। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের প্রকৃতির ঋতুবৈচিত্র্য লোপ পাচ্ছে। এক ঋতুর সঙ্গে আরেক ঋতুর যে পার্থক্য, তা মুছে যাচ্ছে। আর্দ্রতা কমে আসার পাশাপাশি তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের মাত্রা বাড়ছে। পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু তাপপ্রবাহ। সপ্তাহ পেরিয়ে গেল। সেই তাপপ্রবাহ রূপ নিল তীব্র তাপপ্রবাহে। যেখানে সারাদেশে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পুড়ছে সারাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশে অসময়ে অনাবৃষ্টি, বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়সহ অতি গরম আবহাওয়া তৈরি হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের অনেক এলাকা প্লাবিত হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আমাদের উপকূলীয় এলাকা এবং সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারসহ অন্যান্য এলাকা। গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষের পরিবেশবিরোধী নানারকম ক্রিয়াকলাপের ব্যাপক বৃদ্ধি এবং কয়লা, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি জীবাশ্ম জ¦ালানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, মিথেন, ওজোন, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি ‘গ্রিনহাউস’ গ্যাসগুলোর উপস্থিতি বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বায়ুমণ্ডলের নিচের স্তরে উষ্ণতা বেড়ে গিয়ে তা প্রভাবিত করছে পৃথিবীর জলবায়ুকে। বিশেষ করে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের এই পরিবর্তনগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে নানা রকমের স্বাস্থ্য সমস্যা ডেকে আনছে। সংকট সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পিত কৌশল প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশের কী করা উচিত, বিশ্বের কী করা উচিত। এ বাস্তবতায় জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নকে সহায়তার জন্য প্রণীত হয়েছে বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০। এটি অত্যন্ত তথ্যবহুল ও বিজ্ঞানভিত্তিক একটি পরিকল্পনা, যা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর উচিত এ ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে কাজ করা। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি মোকাবিলার মতো বড় কাজে সাফল্য অর্জন করা সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া সম্ভব হবে না। সঙ্গে আমাদের চারপাশের পরিবেশ সুরক্ষার জন্যও সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ থেকে আমাদের পরিবেশকে সুরক্ষার জন্যও উদ্যোগ প্রয়োজন। পরিবেশকে সুরক্ষার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে, স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমার সম্ভাবনা সফল হবে না।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়