প্রতিদিনের ডেস্ক:
ন্যায়সঙ্গত বিশ্বের জন্য ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই আরও গতিশীল করতে হবে। এবারের বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস-২০২৪ এর এটাই প্রতিবাদ্য বিষয়। চলতি বছরের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘আমার স্বাস্থ্য, আমার অধিকার’-এই থিমের আওতায় ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ, শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে যে বৈষম্যগুলো তীব্রভাবে বজায় রয়েছে তা মোকাবিলায় জরুরি প্রয়োজনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।ম্যালেরিয়া হ্রাস করতে বিশ্বব্যাপী যে প্রচেষ্টা তা গত কয়েক বছরে স্থবির হয়ে পড়েছে। এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রত্যেকেরই মানসম্মত, সময়োপযোগী, এবং সাশ্রয়ীমূল্যে ম্যালেরিয়া পরিষেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু তারপরেও অনেকের জন্যই তা অধরাই রয়ে গেছে।শিশু এবং অল্পবয়সী বাচ্চা বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নানা ধরনের বৈষম্য তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।গর্ভবতী নারীরাও উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ গর্ভাবস্থায় ম্যালেরিয়ার প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, সংক্রমণ এবং গুরুতর রোগের জন্য আরও সংবেদনশীল করে তোলে। লিঙ্গ বৈষম্য, বিভাজন এবং ক্ষতিকর নিয়মগুলো তাদের দুর্বলতা আরও বাড়িয়ে দেয়। সময়মত এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে গর্ভাবস্থায় ম্যালেরিয়া মারাত্মক রক্তাল্পতা, মাতৃমৃত্যু, মৃতপ্রসব, অকাল প্রসব এবং কম ওজনের শিশুসহ বিধ্বংসী পরিণতি ডেকে আনতে পারে।শরণার্থী, অভিবাসী, অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ এবং আদিবাসীরাও ম্যালেরিয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ তারা প্রায়ই রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা থেকে বাদ পড়ছেন এবং প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন ফলে তাদের মধ্যে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবিক জরুরি পরিস্থিতি এই চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলছে এবং এই রোগের আশঙ্কা আরও বাড়ছে।ম্যালেরিয়া আমাদের এই অঞ্চলে একটি উল্লেখযোগ্য জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ হিসেবেই রয়ে গেছে। তবে নানা রকম বাধা থাকার পরেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি হয়েছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে এই অঞ্চলে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত এবং মৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। সব অঞ্চলের মধ্যে এটাই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। ই-২০২৫ উদ্যোগের অধীনে ভুটান, নেপাল এবং তিমুর-লেস্তের মতো দেশগুলোতে পরিবর্তন ছিল চোখে পড়ার মতো। সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমেই ম্যালেরিয়া নির্মূল সম্ভব। তিমুর-লেস্তে পরপর তিন বছর ম্যালেরিয়া মুক্ত অবস্থা অর্জন একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এই অর্জন স্বাস্থ্যকর্মী, নীতিনির্ধারকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রমাণ।যাইহোক, ম্যালেরিয়া নির্মূলের দিকে আমাদের যাত্রা এখনো শেষ হয়নি। যদিও বেশ কয়েকটি দেশ গ্লোবাল টেকনিক্যাল স্ট্র্যাটেজি (জিটিএস) লক্ষ্য পূরণের পথে রয়েছে, চ্যালেঞ্জগুলো রয়ে গেছে, বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া এবং মিয়ানমারের মতো দেশে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা মিয়ানমারে রাজনৈতিক এবং সামাজিক অস্থিরতা সাতগুণ বৃদ্ধির পেছনে দায়ী।ম্যালেরিয়া নির্মূলের ক্ষেত্রে টেকসই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং আন্তঃসীমান্ত নজরদারির গুরুত্বের ওপর জোর দিতে হবে। চলতি বছর ম্যালেরিয়া দিবস উপলক্ষে ম্যালেরিয়া নির্মূলে স্বাস্থ্য সমতা, লিঙ্গ সমতা এবং মানবাধিকারের ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে সেগুলোর প্রতি নতুন করে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। আমাদের অবশ্যই এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে নিজেদের প্রচেষ্টা আরও বাড়াতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে আর্থ-সামাজিক অবস্থা বা ভৌগলিক অবস্থান নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ তাদের জীবন রক্ষায় ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয় এবং চিকিত্সা পরিষেবা পাবে।ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা জনসংখ্যার বৈচিত্র্যময় স্বাস্থ্য চাহিদাগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি, ডেটা সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করতে পারি এবং বাস্তব সময়ে অগ্রগতি নিরীক্ষণ করতে পারি।আসুন একসাথে আমরা ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইকে আরও গতিশীল করতে, অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে এবং আরও ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব অর্জনের জন্য প্রমাণভিত্তিক কৌশলগুলো বাস্তবায়ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই, যেখানে নিজেদের ভালোর জন্য ম্যালেরিয়া নির্মূলে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।