২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

আপনার স্ত্রীকে কিভাবে কন্ট্রোল করবেন?

সাইফুল হোসেন
একটি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। এক ভদ্রলোক একটা বই লিখেছিলেন। বইটার নাম ছিল ‘হাউ টু কন্ট্রোল ইওর লাইফ’। এটার প্রচ্ছদ করতে গিয়ে একটি মারাত্মক ভুল হয়ে যায়। প্রচ্ছদে ভুলে লেখা হয়েছিল “হাউ টু কন্ট্রোল ইওর ওয়াইফ”। শুধু লাইফের পরিবর্তে ওয়াইফ- এই শব্দটার কারণে বইটা মিলিয়ন মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছিল।
চিন্তা করে দেখুন স্ত্রীকে কন্ট্রোল করার জন্য কত লোক মরিয়া। আমার দর্শক-শ্রোতা বন্ধুদের মধ্যে অনেকে বলছেন যে ‘আপনি তো খরচকে কমাতে বলেন, কিন্তু আমার স্ত্রী খরচ কমাতে চায় না’। যদিও এদের সংখ্যা কম। তারাও চায় স্ত্রীদেরকে কন্ট্রোল করতে। যেসব ভদ্রমহিলা আমার লেখা পড়ছেন তারা পুরো লেখাটা শেষ করার আগেই আমাকে বকা দেয়া শুরু করবেন না আশা করি । আমি বিশ্বাস করি আমার এই লেখা থেকে একটা উল্লেখযোগ্য এসেন্স আসবে যেটা হয়তো সবার চিন্তার ক্ষেত্রে একটা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করবে।
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক বোধ করি পৃথিবীর সবচেয়ে নিবিড়তম সম্পর্ক। যদিও দুজনের মধ্যে বিশেষ কোনো সম্পর্ক থাকে না বিয়ের আগে, কিন্তু বিয়ের পরেই হয়ে যায় দুজন দুজনার একমাত্র এবং অন্যতম আপনজন। যে সম্পর্কের কাছে অন্য সব সম্পর্ক গৌণ হয়ে যায়। এত যেখানে আন্তরিক সম্পর্ক, মধুর সম্পর্ক, যেখানে শুধু মধুরতা বিরাজ করবে, বিরাজ করবে প্রেম- ভালোবাসা- শান্তি- প্রশান্তি কিন্তু সেখানেই কেন এত দ্বন্দ্ব, সেখানেই কেন দুজনের মধ্যে এত অশান্তি? কখনো কখনো কলহ শেষ হচ্ছে খুনোখুনিতে, কখনো বা দুজনের মধ্যে সেপারেশন হচ্ছে কিন্তু কেন?
আপনি ভালোবাসা অনেকক্ষণ হয়তো যে পরিমাণ চাচ্ছেন সে পরিমাণ পাবেন না কিন্তু আপনার দায়িত্ব কিন্তু আপনাকে পালন করে যেতে হবে । আপনি চাইলেই এই দায়িত্ব থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন না। দুজনের প্রত্যাশা যখন থাকবে একটা সুন্দর সংসার গঠন করা, যেখানে বাচ্চারা খুব সুন্দরভাবে বিকশিত হবে, বাচ্চারা তাঁদের জীবন সুন্দরভাবে গঠন করার শিক্ষা এখানে পাবে, তাহলে দেখবেন যে আপনাদের জার্নিটা সুন্দর হচ্ছে, সুখের হচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে যে দুজন ৫-১০ বছর প্রেম করে, দুজন দুজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন কিন্তু বিয়ে করার ছয় মাসের মধ্যেই সম্পর্কে ফাটল ধরেছে, দুজন আর দুজনের মুখ দেখতে চাচ্ছেন না । মূলত ব্যাপারটা হচ্ছে বিয়ের আগে যেটা থাকে প্রেম বা প্রেমের প্রত্যাশা, বিয়ের পরে সেটা হয়ে যায় ম্যানেজমেন্টের বিষয়। যেহেতু বিষয়টা ম্যানেজমেন্টের, এই ম্যানেজমেন্ট না করতে পারার কারণে, ম্যানেজমেন্টটা এফেক্টিভলি বুঝতে না পারার কারণে দুজনের মধ্যে অল্প অল্প করে শুরু হয় দ্বন্দ্ব এবং সে দ্বন্দ্ব মিটাতে না পেরে দুজনের মধ্যে বিচ্ছেদ বা আরো খারাপ কিছু সংগঠিত হয়।
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে সংসার ভেঙে যাওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। এই সংসার ভাঙার সংখ্যা গ্রামের চেয়ে এবং অন্যান্য শররের চেয়ে রাজধানীতে অনেক বেশি। গত বছর ঢাকায় প্রতি ৪০ মিনিটে ১টি করে তালাক হয়েছে। বিচ্ছেদ বাড়ছে ঢাকার বাইরেও। বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে বিচ্ছেদের আবেদন নারীরা বেশি করছেন।
নির্যাতন-পীড়ন থেকে আত্মমর্যাদাবান নারীরা তালাকে খুঁজছেন মুক্তি। একটা সময় ছিল বিচ্ছেদের আবেদনের পর হরহামেশা সমঝোতা হয়ে যেত কিন্তু বর্তমানে সমঝোতা হচ্ছে খুবই কম—৫ শতাংশের নিচে। ঢাকার দুই সিটির মেয়রের কার্যালয়ের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালে তালাকের আবেদন এসেছিল মোট ১৩ হাজার ২৮৮টি যাদের মধ্যে অতি সামান্য সংখ্যক দম্পতি বিচ্ছেদ থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে এনেছিল।
একটা পরিবার গঠন করার পরে ডিভোর্সে যাওয়া একটা মারাত্মক সামাজিক ক্ষতি কিন্তু এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? উদ্দেশ্যতো সেটা না যে দুজন প্রতিনিয়ত মারামারি- ঝগড়াঝাটি করবে, পরিবারে অশান্তি হবে, একসময় তাঁরা সেপারেশানে যাবে।
উদ্দেশ্য হচ্ছে সংসার শুরু করে সেই সংসার জীবনকে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে সামনে নিয়ে যাওয়া। সংসারের ধর্মে হচ্ছে মানুষ তাদের বংশ বৃদ্ধি করবে অর্থাৎ মানুষের বাচ্চাকাচ্চা হবে, নাতি নাতনি হবে । এভাবেই সামনে এগিয়ে যাবে মানুষ কিন্তু এখানে কেন প্রশ্ন আসছে একজন আরেকজনকে কন্ট্রোল করবে। এখানে কেন প্রশ্ন আসছে যে আপনি হাজব্যান্ড আপনি আপনার ওয়াইফ কে কন্ট্রোল করবেন।
অধিকাংশ লোকের মাথায় কেন এই জিনিসটা কাজ করছে যে ‘আমি আমার ওয়াইফ কে কন্ট্রোল করব’। আমি বরাবরই বলি যে ‘কন্ট্রোল’ একটা নেগেটিভ শব্দ । কেউ কাউকে কন্ট্রোল করতে চাওয়াও একটি বিপদের ব্যাপার। আসলে কন্ট্রোল করতে হবে না, মূলত যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে দুজনের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। দুজনের মধ্যে সম্প্রীতি দরকার, দুজনের মধ্যে একটা সুন্দর বোঝাপড়া দরকার। কখনো কখনো দুই পক্ষেরই কম্প্রোমাইজ করা দরকার, কখনো বা দরকার ইমপ্রুভমেন্টের।
আমি লেখাটির শিরোনাম দিয়েছি স্বামী কিভাবে তাদের স্ত্রীকে কন্ট্রোল করবে কিন্তু আসলে স্ত্রীকে কন্ট্রোল না করে, তাঁর উপর অযাচিত আধিপত্য বিস্তার না করে কীভাবে দুজন নিজেদের মধ্যে সুন্দর বোঝাপড়া করে সামনে এগিয়ে যাবে সেটা নিয়ে আমি আমার জানাশোনা, বোঝাপড়া ও নিজের অভিজ্ঞতা- সবকিছুকে কাজে লাগিয়ে সাত আটটা পয়েন্ট দাঁড় করিয়েছে যা আপনাদের মাঝে আমি উপস্থাপন করছি যেগুলো বুঝতে পারলে এবং কাজে লাগাতে পারলে দাম্পত্য জীবন মধুময় হয়ে উঠতে পারে বলেই আমার বিশ্বাস।
তবে হ্যাঁ এখানে কিন্তু আর্থিক ব্যাপারটাও জড়িত। কারণ হাজব্যান্ড ওয়াইফের মধ্যে যদি খুব বাজে সম্পর্ক থাকে তাহলে আর্থিক উন্নতি প্রচন্ডভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। মূলত সংসারের উন্নতি দরকার, সংসারের মধ্যে শান্তি দরকার আর সেজন্য দরকার দুজন মিলে বসে জীবনের প্ল্যানিংটা করে ফেলা। এর মধ্যে আর্থিক প্ল্যানিং থাকবে, বাচ্চা নেয়ার পরিকল্পনা থাকবে, অন্যান্য অনেক পরিকল্পনা থাকবে। যত পরিকল্পনাই থাকুক না কেন সবকিছু আপনারা লিখে ফেলবেন । তারপরে আপনারা আর্থিকভাবে ১৫-২০ বছরে কোথায় পৌছুতে চান, পার্টনারকে কি কিনে দিতে চান, বাবা-মাকে কি পরিমাণ পয়সা দিয়ে হেল্প করতে চান, মেয়ের বাবা-মাকে কি পরিমাণ পয়সা দিয়ে হেল্প করতে চান, সার্বিক বিষয়ে লিখে ফেলুন।
সব পরিকল্পনার বিষয় বিশেষ করে আর্থিক বিষয়গুলো দুজন বসে ঠিক করে নেয়া ভালো। যখন আপনি কোনো কিছু ডকুমেনটেড করে ফেলবেন তখন দেখবেন দুজনের মধ্যে একটা দায়বদ্ধতা চলে আসবে। তাই লিখে ফেলবেন এবং লেখার পরে দুজনে সাইন করে ফেলবেন।
ধরুন দুজনই চাকরি করেন সেক্ষেত্রে কে কত টাকা কন্ট্রিবিউট করবেন, কে কত টাকা ডিপিএস করবেন, মোট কত টাকা মান্থলি সঞ্চয় হবে, কার নামে হবে, নমিনি কে হবেন, যদি এপার্টমেন্ট কেনেন কার নামে হবে- এগুলো ঠিক করে নিবেন। আমার মনে হয় আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে সার্বিক বিষয়গুলো যতদূর সম্ভব খুঁটিনাটিসহ সব পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করবেন।
তারপর একটি ডকুমেন্ট করে ফেলা যে আমরা এই এই চাই। এটা কেন চাচ্ছি, আমাদের সংসারের সার্বিক উন্নতির জন্য চাচ্ছি। দেখবেন, যখন আপনি লিখে ফেলছেন তখন আপনার সামনের পথ চলাটা অনেক স্মুদ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে সমস্যা যদি দেখা দেয় তখন আলোচনার দরজাটাও ওপেন রাখবেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখবেন সমস্যা বাঁধে আর্থিক বিষয় নিয়ে, ঘুরতে যাওয়া নিয়ে, বাচ্চাদের স্কুল নিয়ে, তাদের পড়াশোনা নিয়ে, আপনার বাবা-মা কে আপনি কিভাবে টেক কেয়ার করবেন, মেয়ের বাবা-মাকে পয়সা দিবেন কিনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে।
যদি সমস্যা দেখা দেয় তখন আপনারা দু’জন আলোচনা করবেন, প্রয়োজনে ওই ডকুমেন্ট নিয়ে বসবেন। কোনোভাবেই আলোচনার দরজাটা বন্ধ করবেন না। ইগোর কারণে, রাগারাগির কারণে ঝগড়াঝাটির কারণে কেউ বলতে পারবেন না যে না আমি এটা করিনি, আমি সেটা করিনি কারণ আপনাদের সবকিছু লেখা আছে এবং আপনারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ।
এখানে একটা কথা বলে রাখতে চাই যে আপনারা প্রথমে যে ডকুমেন্ট রেডি করেছিলেন সেটা যদি পরবর্তীতে পরিবর্তন করতে চান তাহলে সেটা আপনারা একসাথে বসে করতে পারেন। যা করবেন সেটা দুজনে মিলে সম্মতভাবে করবেন।
আপনি স্বামী। আপনি ধৈর্য ধরে স্ত্রীর কথা শুনবেন। শুনবেন বেশি বলবেন কম। মেয়েদের স্বাভাবিক প্রবণতা হচ্ছে যে তাঁরা স্বামীদের দিকে একটু বেশি অভিযোগের তীর ছুড়ে থাকেন। স্বামীর কাজ হচ্ছে অভিযোগগুলো যত্ন সহকারে শোনা। অভিযোগগুলো কতটা আমলে নিলেন সেটা বড় কথা নয় তার থেকে বড় কথা হচ্ছে আপনি কতটা ধৈর্য সহকারে সেগুলো শুনলেন। শুধু ধৈর্য ধরে শুনতে পারলেই দেখবেন সমস্যা প্রায় শেষ।
তারপর যেখানে আপনার কথা বলা দরকার সেখানে আপনি সুন্দরভাবে কথাগুলো বুঝিয়ে বললেন, রাগান্বিত ভাবে কথাগুলো বলবেন না। তাহলে দেখবেন অনেক বিপদের মেঘ কেটে গেছে। তবে আপনি যে মাঝে মাঝে রিয়্যাক্ট করবেন না, রাগ করবেন না তা কিন্তু নয়। তবে রাগটাকে কন্ট্রোল করবেন যেন সেটা মহাযুদ্ধের দিকে না নিয়ে যায়। আবার বলছি বলবেন কম শুনবেন বেশি। যতদূর সম্ভব তার ছোট ছোট চাওয়ার প্রতি যত্নশীল হবেন। মেয়েরা দেখবেন ছেলেদের চাইতে একটু বেশি আবেগি তাদের ইমোশন একটু ডিফারেন্ট। তারা খুব যত্ন ও কেয়ার প্রত্যাশা করে। তারা আপনার অখণ্ড মনোযোগ প্রত্যাশা করে। ওই যে প্ল্যান করেছিলেন সেগুলোর প্রতি যত্নশীল হবেন তখন দেখবেন সে আপনার কথা শুনছে। কথা হচ্ছে আপনি যদি চান সে আপনার কথা শুনুক তাহলে প্রথমে আপনার তার কথা শুনতে হবে।
এরপর আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনার ওয়াইফ আপনার সব কথা বুঝতে চাইবে না, অনেক ক্ষেত্রে আপনার বিরাট সমস্যা তার কাছে ক্ষুদ্র সমস্যা। আপনি টিউন্ড থাকবেন যে এরকমটা হতে পারে। যে আপনার হয়তো বেতন পেতে দেরি হয়েছে কিন্তু সেটা সে বুঝতে চাইবে না । আপনি যদি এটা মেনে নিতে পারেন যে সে অনেক কিছু বুঝতে চাইবে না, তাহলে আপনার জন্য পরবর্তীতে সব কিছু সহজ হয়ে যাবে।
মেয়েদের আবেগ ছেলেদের আবেগের চেয়ে ভিন্ন। তাঁরা সহজে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে, ইমোশানাল ব্রেক-ডাউন হওয়া তাদের জন্য খুব স্বাভাবিক। তাদের আবেগকে আমলে নিতে হবে এবং তাদের প্রতি সাপোর্ট দেয়া অব্যাহত রাখতে হবে। শারীরিক, মানসিক, পারিপার্শ্বিক, বিভিন্ন কারণে তারা ভেঙে পড়তে পারেন, তাদের মন গভীরভাবে খারাপ হতে পারে। যেমন -ধরুন আপনার ওয়াইফ কারোর বাসায় বেড়াতে গিয়ে নতুন একটি টিভি দেখেছেন, সেক্ষেত্রে তাঁর মন খারাপ হতে পারে যদি বাসার টিভিটা পুরানো হয়ে থাকে।
তাঁদের বাসাটা চকচক করছে আপনার বাসাটা চকচক করছে না এই ব্যাপারেও তিনি ভীষণ মন খারাপ করতে পারেন। ধরুন আপনি তাঁর মন খারাপের অবস্থায় এমন কিছু বললেন যে তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। আসলে আপনার কথার কারণে উনি রেগে যান নাই, উনি রেগে গেছেন অন্য কারণে। আপনার খুব বুঝা দরকার, অনেক প্রয়োজনীয় কথাই তখন বলার দরকার নাই।
আসলে দুজন মিলে একটা সংসারকে সামনে টেনে নিয়ে যাওয়া খুব সহজ নয়। সকল সমস্যাকে কখনো সমাধান করে, কখনো নিজেদের ইমপ্রুভ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই একটা সংসার টিকবে। যেসব সংসার অনেকদিন ধরে টিকে আছে তারা যে খুব ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে টিকে আছে বিষয়টি তেমন নয় বরং কথাটা এরকম যে তারা সুন্দরভাবে দুজন দুজনকে ম্যানেজ করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক সমস্যা হয়েছে, অনেক সমস্যা হচ্ছে তারপরও সময় সামনে যাচ্ছে।
তারপর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্ট হচ্ছে দুজনের মধ্যে যদি ঝগড়াঝাঁটি, মান-অভিমান হয়, মনোমালিন্য হয় তাহলে সমস্যা সমাধান করতে এক রাত পার করতে দিবেন না। অনেক দম্পতি দেখবেন ঝগড়া ঝাটি করে এতটাই বিরক্ত হয়ে যাযন যে এক-দুই সপ্তাহ কথা বলছেন না। এটা একেবারে অনুচিত। দিনের ঝামেলা দিনে মিটিয়ে ফেলা ভালো। একজন বাড়ি থেকে চলে গেলেন, অন্যজন আরেকদিকে চলে গেলেন- এটা কোন সমস্যার সমাধান নয়, সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে ফেলা।
স্ত্রী হয়তো মনে করেন যে বাসা ছেড়ে চলে গেলে হয়তো হাসবেন্ড বুঝবে যে সে কি পরিমাণ দায়িত্ব পালন করছে, আবার হাজব্যান্ড মনে করেন যে সে সে যদি চলে যায় তাহলে স্ত্রী বুঝবে যে টাকা-পয়সা না দিলে কি হয়। এই ধরনের আচরণ মূলত সম্পর্ককে আরও নষ্ট করে। এটা না করে দুজনে একটু সহমর্মী হয়ে, একটু আন্তরিক হয়ে বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে বা নিজেদের ভালোর কথা চিন্তা করে সমস্যার সমাধা করে ফেলা ভাল।
এই ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয় কে আগে অ্যাপ্রোচ করবে। মেয়েদের এই ক্ষেত্রে অ্যাপ্রোচ করা আমি মনে করি বেশি ভালো ফল দেয় কারণ ছেলেরা সহজে ভুলে যায় । সমস্যা হচ্ছে মেয়েরা দেখবেন সহজে এ্যাপ্রোচ করতে চান না। তাই অগত্যা ছেলেদেরই অ্যাপ্রোচ করা উচিত। বেচারা।
আপনি দেখবেন যে একটু সুন্দর করে কথা বললে, যতই ঝগড়াঝাটি হোক না কেন দেখবেন আপনার ওয়াইফ খুশি হয়ে গেছে। কারণ তখন তার মধ্যে এই ব্যাপারটা কাজ করে যে তাঁর স্বামী তাকে কেয়ার করছে, তাকে মূল্যায়ন করছে। আর সত্যি কথা হচ্ছে আসলেই তো উনারা দামী। একটা ছেলের অবদান হয়তো ইনকাম করা (যদি স্ত্রী চাকরি বা ব্যাবসা না করেন) কিন্তু একটা সংসারে একজন মহিলার অবদান অনেক বেশি। ছোট ছোট টুকটাক প্রচুর কাজ সারাদিন।
আবার যিনি চাকরি করেন তার জন্য সংসার-বাচ্চাকাচ্চা সব সামলাতে হয় । এই কাজগুলো বিরাট বড় কাজ এই কাজগুলোকে ছোট করে দেখা যাবে না। সংসারে প্রশান্তি আনতে এই ছোট ছোট কাজগুলো অনেক হেল্প করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ওয়াইফরা মনে করেন যে তাদের কাজকে সম্মান দেয়া হচ্ছে না আবার স্বামী মনে করছেন সে যত কাজ করছে ওয়াইফ তার কাজের মূল্যায়ন করছেন না। এই ক্ষেত্রে দুজনই দুজনকে মূল্যায়ন করা দরকার।
পরিশেষে বলা যায়, সার্বিক বিবেচনায় আপনার দায়িত্ব কর্তব্য অনেক বেশি । আপনি ভালোবাসা অনেকক্ষণ হয়তো যে পরিমাণ চাচ্ছেন সে পরিমাণ পাবেন না কিন্তু আপনার দায়িত্ব কিন্তু আপনাকে পালন করে যেতে হবে । আপনি চাইলেই এই দায়িত্ব থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন না। দুজনের প্রত্যাশা যখন থাকবে একটা সুন্দর সংসার গঠন করা, যেখানে বাচ্চারা খুব সুন্দরভাবে বিকশিত হবে, বাচ্চারা তাঁদের জীবন সুন্দরভাবে গঠন করার শিক্ষা এখানে পাবে, তাহলে দেখবেন যে আপনাদের জার্নিটা সুন্দর হচ্ছে, সুখের হচ্ছে। আর একটা কথা কেউ কিন্তু কাউকে সুখী করতে পারেনা, সুখী হবার কাজটা নিজেরটা নিজেকে করতে হয়।
লেখক: দি আর্ট অব পার্সোনাল ফাইনান্স ম্যানেজমেন্ট বইয়ের লেখক, কলামিস্ট, ইউটিউবার এবং ফাইনান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়