১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

শিক্ষক নিয়োগে প্রশ্নফাঁস ঢাবির হল থেকে যেতো প্রশ্নের সমাধান, ১৪ লাখে চুক্তি

প্রতিদিনের ডেস্ক
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।গ্রেফতারদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন (২৬) ও সুজন চন্দ্র রায় (২৫) আর তিন পরীক্ষার্থী হলেন- মনিষ গাইন (৩৯), পংকজ গাইন (৩০) ও লাভলী মন্ডল (৩০)।
এসময় তাদের কাছ থেকে পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস ও প্রশ্নের সমাধান করে দেওয়া চক্রের মূলহোতা অসীম গাইনের কাছে পাঠাতে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরে ফোনটিতে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২১ জেলার সাড়ে তিন লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নের উত্তর ও ডিভাইসসহ মাদারীপুরে ৭ জন ও রাজবাড়ীতে একজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
এ ঘটনায় দুই জেলায় আলাদাভাবে মামলা হয়। রাজবাড়ীতে আটক হওয়া পরীক্ষার্থী আদালতে নিজের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে ওই শিক্ষার্থী জানায়, কীভাবে উত্তর পেয়েছে এবং তার মোবাইলে কখন উত্তরপত্র এসেছে। মাদারীপুরে গ্রেফতার হওয়া পরীক্ষার্থীদের বেশিরভাগই জামিনে বের হয়ে যায়। এ ঘটনাটি তদন্তের জন্য মাদারীপুর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাসুদ আলমের অনুরোধে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ তদন্তে নামে। এরপরই গ্রেফতার করা হয় চক্রের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন ও সুজন চন্দ্রকে। তারা দুজনেই ঢাবির জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
ডিবিপ্রধান বলেন, গ্রেফতার ঢাবি শিক্ষার্থীরা গোয়েন্দা পুলিশকে জানিয়েছে, পরীক্ষার আগেই তারা প্রশ্ন সমাধানের জন্য পেয়েছেন। এ প্রশ্ন সমাধানের দায়িত্ব পেয়েছেন জ্যোতির্ময় গাইনের চাচা অসীম গাইনের মাধ্যমে। প্রশ্নপ্রতি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সমাধান করান অসীম। এ প্রস্তাবে জ্যোতির্ময় ও সুজনসজ ৭ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হলের জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ভবনের ২২৪ রুমে বসে প্রশ্নের সমাধান করে পাঠান।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, অসীম তার ভাতিজা জ্যোতির্ময় গাইনকে প্রশ্ন সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছেন। অন্যদিকে তিনি পরীক্ষার দুই থেকে তিন মাস আগেই পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। বিশেষত যাদের চাকরির বয়স শেষের পথে এমন পরীক্ষার্থীদের টার্গেট করতেন। তাদের পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি করতেন। পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগেই প্রশ্নের উত্তরপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন অসীম গাইন। সমাধান করে দেওয়া প্রশ্নের ৭২ থেকে ৭৫টি প্রশ্ন মিলেছে।
অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, আমাদের তদন্তে এখন পর্যন্ত যে প্রমাণ পেয়েছি তাতে এই চক্রের মূলহোতা অসীম গাইন। তার বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়। সে আগেও বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। সে অল্প দিনে কয়েকশো কোটি টাকা আয় করেছে। এই টাকা দিয়ে তার গ্রামে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছে।
হারুন অর রশীদ বলেন, অসীম বর্তমানে পলাতক। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলমান। তাকে গ্রেফতার করলে কীভাবে সে প্রশ্ন পায় সেই বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারবো। এ ঘটনায় দুজনকে আমরা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতে যারা প্রশ্নের সমাধান করেছেন তারাও স্বীকার করেছে। যারা প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছে তারাও স্বীকার করেছে। প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে আরও কারা জড়িত সে বিষয়েও তদন্ত চলছে। জড়িত কেউ ছাড় পাবে না।
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষা বাতিলের অনুরোধ জানাবে কি না জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, এ মামলার তদন্তে নেমে যা যা পেয়েছি সবকিছুই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন পরীক্ষা বাতিল করবেন নাকি বহাল রাখবেন। তারা তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
এর আগেও আমরা ব্যাংক ও বিমানসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িত অনেককে গ্রেফতার করেছি। ব্যাংকের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়