মাহমুদ আহমদ
আমাদের দেশে প্রায় প্রতি বছরই এ সময় কম বেশি প্রাকৃতি দুর্যোগ হানা দেয়। আসলে ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, তীব্র তাপপ্রবাহ ইত্যাদি দুর্যোগ প্রাকৃতিক, মানুষের এতে কোনো হাত নেই।
সময় থাকতেই আমাদেরকে আমাদের দোষত্রুটির জন্য পরিপূর্ণভাবে আল্লাহপাকের কাছে তওবা করতে হবে। হে দয়াময় আল্লাহ! আপনি নিজ কৃপায় আমাদেরকে ক্ষমা করুন আর সকল প্রকার আজাব থেকে রক্ষা করুন।
এধরনের দুর্যোগ মহান আল্লাহপাক যেকোনো দেশে এবং যেকোনো মুহূর্তে ঘটাতে পারেন। এইসব দুর্যোগে কোনো মানুষের হাত থাকে না। আমাদের দেশেও প্রায় প্রতি বছরই কম বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখনো এমনভাবে ধেয়ে আসে যার ফলে গ্রামের পর গ্রাম তছনছ করে দিয়ে চলে যায়। আমরা কেউ বলতে পারি না কখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকারে পরিণত হতে যাচ্ছি। এছাড়া মে-জুনের দিকে প্রায় আমাদের দেশে কম বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দেয়। তবে এবার এপ্রিল থেকে দেশ জুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। হিটস্ট্রোকে ঘটছে মৃত্যু।
তাই এসব প্রাকৃতিক আজাব থেকে যেন আল্লাহপাক আমাদের নিরাপদ রাখেন এজন্য সব সময় দোয়ার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
এই যে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ধেয়ে আসছে এসব আসলে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সতর্ক সংকেত। আল্লাহপাক সতর্ক করছেন যে তোমরা সহজ সরল পথ অবলম্বন কর।করোনার দিনগুলোতে আমরা লক্ষ্য করেছি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোও এর মোকাবেলায় ছিল নিরূপায়। করোনা বিশ্ববাসীকে এতবড় এক ঝাকুনি দিয়েছে তারপরও কারো হুশ নেই।
আসলে সমাজের বেশির ভাগ মানুষ যখন পাপ, ব্যভিচার, অন্যায় এবং খোদাকে ভুলতে বসে তখনই সৃষ্টিকর্তা তার পক্ষ থেকে কোপগ্রস্ত হয়ে শাস্তির যোগ্য হয়ে যায়।পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘আর তোমাদের কৃতকর্মের কারণই তোমাদের ওপর বিপদ নেমে আসে। অথচ তিনি অনেক কিছুই উপেক্ষা করে থাকেন’ (সুরা আশ শুরা, আয়াত: ৩০)। তিনি আবার ইরশাদ করেছেন, ‘এমন কোনো জনপদ নেই যা আমি কেয়ামতের আগে ধ্বংস না করব, অথবা অতি কঠোর আযাব দিব’ (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৫৮)।
আল্লাহতায়ালার উপরোক্ত ভবিষ্যদ্বাণী আজ আমরা অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হতে দেখছি। যে সকল আজাব আমরা প্রত্যক্ষ করছি, তা কেয়ামত তথা মহাধ্বংসের পূর্বলক্ষণ স্বরূপ প্রকাশিত হচ্ছে। আর এসব পবিত্র কুরআন তথা ইসলামের সত্যতার জ্বলন্ত নিদর্শন বহন করছে। আল্লাহতায়ালা পরম করুণাময়, তিনি কোনো জাতিকে সাবধান না করে কখনও আজাব অবতীর্ণ করেন না।
যেভাবে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে, ‘আমি সতর্ক করার জন্য রাসুল প্রেরণ না করে কখনও আজাব অবতীর্ণ করি না’ (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ১৫)।
আজাবের এমন একটি দিক নেই, যেদিক দিয়ে আজ পৃথিবী আক্রান্ত হয়নি। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ বা এমন কোনো জাতি নেই যার ওপর আজাব না এসেছে, সে যত বড় শক্তিধর রাষ্ট্রই হোক না কেন। সকল প্রকার আজাবের প্রবল আক্রমণ মরণাহত মানবের ওপর বারবার এসে আঘাত হানছে। মানব প্রকৃতি বিকৃত হয়েছে। তার কারণে আল্লাহর রুদ্র রূপও প্রকাশিত হচ্ছে।
আল্লাহপাক চান, মানুষ যেন সতর্ক হয় এবং তার শিক্ষানুযায়ী জীবন পরিচালনা করেন। খোদার পক্ষ থেকে শাস্তিস্বরূপ যখন কোনো আজাব আসে তখন তা থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো রাস্তা থাকে না। যেভাবে কুরআনে উল্লেখ রয়েছে ‘তুমি বল, আল্লাহর হাত থেকে কে তোমাদের রক্ষা করতে পারে যদি তিনি তোমাদের কোনো শাস্তি দিতে চান? অথবা তিনি যদি তোমাদের প্রতি কৃপা করতে চান তবে কে এ থেকে তোমাদের বঞ্চিত করতে পারে? আর তারা নিজেদের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো অভিভাবক বা কোনো সাহায্যকারীও খুঁজে পাবে না’ (সুরা আহজাব, আয়াত: ১৭)।
মহান আল্লাহপাক পৃথিবীতে কেন আজাব-গজব পাঠান সে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণনা করা হয়েছে। একটা বিষয় সবার অনুধাবন করা উচিৎ, কেন বার বার আল্লাহতায়ালা আজাবের কথা উল্লেখ করলেন?
তিনি যেহেতু রহমানুর রাহিম, তিনি চান না যে, তার বান্দা কোনোভাবে কষ্টে নিপতিত হোক। তাই তিনি বারবার সতর্ক করছেন, যেন তার বান্দারা সঠিক পথে পরিচালিত হয়। কিন্তু যখন কোনো জাতি তার নির্দেশাবলির অমান্য করতে করতে সীমা ছাড়িয়ে যায় তখনই তার পক্ষ থেকে কোনো না কোনো শাস্তি নিপতিত হয়। এই যে সারা পৃথিবীতে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ধেয়ে আসছে এর একটাই কারণ, আর তা হলো রহমান আল্লাহর বান্দারা আজকে রহমান খোদাকে ভুলে বসেছে, আর এ কারণেই কোনো দেশ আজ এমন নেই যারা বলতে পারবে যে, আমরা এসব প্রাকৃতিক আজাব থেকে নিরাপদ।
এসব দুর্যোগ থেকে বাঁচার জন্য এখন একটিই রাস্তা খোলা আছে আর তাহলো মহান আল্লাহতায়ালার প্রকৃত বান্দায় পরিণত হওয়া। আল্লাহর অধিকার এবং বান্দার অধিকার যথাযথ প্রদান করা। এসব ঐশী আজাবের সময় আল্লাহপাকের প্রকৃত বান্দাদের মুখ দিয়ে এই দোয়াই বের হয় ‘নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী, তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফেরাত ও রহমত আর তারাই হেদায়াতপ্রাপ্ত’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৭)।
মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোথাও ভূমিকম্প সংঘটিত হয় অথবা সূর্যগ্রহণ, ঝড়োবাতাস বা বন্যা হয়, তখন মানুষের উচিত মহান আল্লাহর কাছে দ্রুত তওবা করা। তাঁর কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা এবং তাঁকে অধিকহারে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা’ (মুসলিম)।
বিশ্বনবির (সা.) পবিত্র সাহাবিদের জীবনে আমরা দেখি, বিপদে-মুসিবতে তারা নামাজে দাঁড়াতেন ও ধৈর্য ধারণ করতেন। (মিশকাতুল মাসাবিহ) ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় মহানবি (সা.) তার উম্মতকে বিচলিত না হয়ে দোয়ার শিক্ষা দিয়েছেন।
পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত ভূমিকম্প, ঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠিকই হচ্ছে, অথচ আমরা কি কেউ নিজের পাপের জন্য তওবা করেছি? যখনই কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয় এরপরক্ষণেই রাস্তাঘাটে হাজার হাজার মানুষ তা নিয়ে আলোচনা করে ঠিকই কিন্তু কেউ এ কথা বলে না যে, এসব তো আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা, আমাদের সবার উচিত তওবা করা ও সৎ পথে চলা।
বার বার আল্লাহপাক আমাদের সতর্ক করছেন এরপরও যদি আমাদের হুশ না হয় তাহলে কি আমরাও আদ জাতি, সামুদ জাতিসহ অন্যান্য জাতিদেরকে যেভাবে তাদের অপকর্মের জন্য আল্লাহপাক ধ্বংস করেছেন আমরাও তার আহ্বান করছি?
তাই সময় থাকতেই আমাদেরকে আমাদের দোষত্রুটির জন্য পরিপূর্ণভাবে আল্লাহপাকের কাছে তওবা করতে হবে।হে দয়াময় আল্লাহ! আপনি নিজ কৃপায় আমাদেরকে ক্ষমা করুন আর সকল প্রকার আজাব থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।