নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতাল থেকে বদলি হয়ে যাওয়া স্টোর কিপার সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঔষধ চুরির ঘটনা ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন সময় ওষুধ চুরির ঘটনায় ভিডিও ফুটেছে তার প্রমাণ মিলেছে। গত মাসে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এর প্রেক্ষিতে যশোর-৩(সদর) আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ হাসপাতালের স্টোর কিপার সাইফুল ইসলামকে অন্যত্র বদলীর জন্য সুপারিশ করেন। এরপর তাকে যশোর আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতাল থেকে বদলী করা হয় মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু ঈদের আগে ৯ এপ্রিল ছুটির শেষ দিন বিকালে তিনি স্টোর থেকে ইজিবাইকে করে ওষুধ বাইরে নিয়ে যান বলে অভিযোগ। এ রকম একটি সিসিটিভির ভিডিও রয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে বেলা ৪ টার পর অফিসের কার্যদিবস শেষ হলে সাইফুল ইসলাম একটি ইজিবাইক নিয়ে তার দফতরের সামনে রেখে সেখানে ওষুধ তুলছেন। পরে সেই ওষুধ নিয়ে যাচ্ছে যশোর ঘোপ নওয়াপাড়া রোড়ের দিকে। যদিও এই ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি হননি সাইফুল ইসলাম।আর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক বলছেন, স্টোর কিপার সাইফুল তাকে(তত্ত্বাবধায়ক) বলেছেন, কিছু ওষুধ পরিবর্তন করার জন্য তিনি স্টোর থেকে বাইরে নিয়ে গিয়েছেন। তবে ওষুধ যদি সে পাচার করে, আর যদি তা প্রমানিত হয়, তবে স্টোর কিপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে সাইফুল ইসলাম যশোর আড়াইশ’ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের স্টোর কিপার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হাসপাতাল থেকে বাইরে ওষুধ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে নানা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। গত ২৪ মার্চ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে বিষয়টি উঠে আসে। কমিটির সদস্য মঞ্জুন্নাহার নাজনীন সোনালী সাইফুল ইসলামের বিভিন্ন সময় হাসপাতাল থেকে ওষুধ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ করেন। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর কমিটির সভাপতি যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ তাকে বদলীর নির্দেশ প্রদান করেন। মঞ্জুন্নাহার নাজনীন সোনালী বলেন, হাসপাতাল থেকে ওষুধ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ পেয়েছি। আগামী মাসে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিষয়টি আমি আবার তুলে ধরব। এরপর খুলনা বিভাগের স্বাস্থ বিভাগের পরিচালক গত ৯ এপ্রিল তাকে যশোর আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতাল থেকে মণিরামপুর স্বাস্থ কমপ্লেক্সে বদলী করেন। বদলীর খবর পেয়ে ওই দিনই বিকাল ৪ টার দিকে ইজিবাইক নিয়ে স্টোর কিপার সাইফুল অনেক ওধুষ হাসপাতাল সরিয়ে ফেলেন। এর আগে ৭ এপ্রিলও ওষুধ বাইরে নিয়ে যান সাইফুল ইসলাম। এ ব্যাপারে সাইফুল ইসলামের বক্তব্য নিতে গেলে তিনি বক্তব্য দিতে অস্বীকার করে বলেন, আমার স্যারের (তত্ত্বাবধায়ক)সাথে কথা বলেন। এ ব্যাপারে আমি কোন বক্তব্য দেব না। যার ইজিবাইকে করে ওষুধ বাইরে নিয়ে যাওয়া যায়, তার নাম মনির হোসেন। তিনি হাসপাতালের সিলিন্ডার বহন করেন। অর্থাৎ হাসপাতালে যত অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগে, তা আনা নেয়া করেন। তিনি বলেন, ৯ এপ্রিল সাইফুল ইসলাম তাকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে আসে। বলে এই ওষুধগুলো ঠিকাদারের কাছে বদল করতে হবে। আমি ইজিবাইকে ওষুধ নিয়ে খাজুরা বাসষ্ট্যান্ডে নামিয়ে দিয়ে আসি। সাইফুল ইসলামের বদলীর কারণে এখন হাসপাতালের স্টোরের ওষুধ বুঝে নিচ্ছেন ফার্মাসিস্ট রতন কুমার সরকার। তিনি বলেন, আমি এখনও সব ওষুধ বুঝে পায়নি। কিছু ওষুধের গড়মিল পাচ্ছি। হিসাব সম্পন্ন হওয়ার পর বলতে পারব কত ওষুধ হাসপাতাল থেকে সরানো হয়েছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হারুন অর রশিদ বলেন, সংসদ সদস্যের সুপারিশের ভিত্তিতে তাকে বদলী করা হয়েছে। সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে ওষুধ বুঝে নেয়ার কাজ চলছে। সে যদি কোন ওষুধ বাইরে নিয়ে যায়, তার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।