২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন দশ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় স্বজনরা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে আটকে রয়েছে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের বিচার। এ ১০ বছর ধরেই নিহতের স্বজনরা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের অপেক্ষার প্রহর যেন আর শেষ হচ্ছে না। বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের রায় হয়ে গেলেও আপিল বিভাগে ঝুলে রয়েছে মামলাটি।
বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিলের পাঁচ বছর হলেও এখনো শুনানি শুরু হয়নি। কবে নাগাদ শুরু হবে তাও জানা নেই কারো। তবে স্বজনদের দাবী অতিদ্রুত যেন বিচার কাজ শেষ করা হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘আপিল বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে মামলাটি ঝুলে আছে। অথচ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় দিয়েছিলো। আমরা চাই রায় বহাল রেখে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হোক।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, সাত খুন মামলা নারায়ণগঞ্জসহ দেশজুড়েই আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। মামলাটি বর্তমানে আপিল বিভাগে চলমান রয়েছে। আশা করি খুব দ্রুতই বিচার কাজ শেষ হবে।
২০১৪ সালের এই দিনে নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে হাজির শেষে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকা থেকে সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন ও মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমকে অপহরণ করা হয়। বিষয়টি দেখে ফেলায় নারায়ণগঞ্জের আইনজীবী অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিমকেও অপহরণ করা হয়।
অপহরণের তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল নজরুল ইসলামসহ ছয়জন ও ১ মে সিরাজুল ইসলাম লিটনের মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তির চর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল ফতুল্লা থানায় আলাদা দুটি মামলা করেন।
এ দুই মামলায় ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালত। রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন দণ্ডিতরা। আপিলের রায়ে ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল এবং অপর ১১ আসামির দণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া ৯ আসামির দণ্ড বহাল থাকে।
মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা আসামিদের মধ্যে রয়েছেন র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক কোম্পানি কমান্ডার মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (চাকরিচ্যুত) এম মাসুদ রানা এবং সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা নূর হোসেন।
সাত খুনে নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নুপুর বেগম বলেন, দশ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় রয়েছি। জানি না কবে বিচার পাবো। আমাদের মানুষ তো আর বেঁচে নেই। আমরা পরিবারের সদস্যরা কোনো রকম বেঁচে আছি। হত্যার বিচারটা যেন পাই এটাই প্রত্যাশা।
নিহত তাজুলের বাবা আবুল খায়ের বলেন, নারায়ণগঞ্জ আদালতে বিচার কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে। কিন্তু আপিল বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে মামলাটি ঝুলে রয়েছে। জানি না কবে বিচার কাজ শেষ হবে।
নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, দশ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় আছি। আসামিপক্ষের লোকজন এখনও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। উপার্জনক্ষম সাতজন মানুষকে হারিয়ে পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে গেছে। যারা জীবিত আছেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তারা কীভাবে বেঁচে আছেন, সেটা কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না। কষ্টে বুকটা ফেটে যায়। সরকারের কাছে শুধু ন্যায়বিচার দাবি করছি।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়