প্রতিদিনের ডেস্ক
কালচারাল র্যাগিং বন্ধ ও নিরাপত্তা চেয়ে ফের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন ছাত্রলীগপন্থি ছয় শিক্ষার্থী।সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেন তারা। এরপর বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তারা লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে ছাত্রলীগপন্থি ছয় শিক্ষার্থী জানান, ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দ্বারা আমরা অনলাইনে বা সরাসরি হেনস্তা ও অপমানের শিকার হয়েছি। ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই সুনামগঞ্জে আটক ২৪ বুয়েট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যে মামলা হয়, আমরা একটি মানববন্ধনের (আগস্ট ৬, ২০২৪) মাধ্যমে তার সুষ্ঠু বিচার প্রার্থনা করি মহামান্য আদালতের কাছে, যেখানে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ ছিল যে- ‘যদি কোনো শিক্ষার্থী আসলেই দোষী হয় তবে আমরা তার শাস্তি চাই, নির্দোষ সকলের নিঃশর্ত মুক্তি চাই।’
‘কিন্তু এই মানববন্ধনের পরই বিষয়টি বদলাতে শুরু করে। মানববন্ধনে দাঁড়ানোর কারণে নানাভাবে হল বা ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ব্যাচ ও যার যার নিজ নিজ ব্যাচের ছাত্রদের দ্বারা ডেকে জবাবদিহি চাওয়া হয়। বিভিন্নভাবে হলে সিট বাতিল অথবা টার্ম বহিষ্কারের ভীতি প্রদর্শন করে অরিত্র ঘোষ ও মিশু দত্তকে আনুমানিক রাত ১১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত আহসান উল্লাহ হলের কমন রুমে এবং মাঠে ডেকে সবার জবাবদিহি চাওয়া হয়। ক্যাম্পাসে এ ধরনের অসংলগ্ন আচরণ আমাদের অপমানের সামিল।’
তারা বলেন, রাতে একসঙ্গে কাচ্চি খাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে মিথ্যাচার হয়েছে এবং সেখানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসেছিলেন, এমন বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্য বুয়েট ছাত্রদের ফেসবুক গ্রুপে দিয়ে ভিত্তিহীনভাবে সবার সামনে আমাদের অপরাধী বানিয়ে যে অন্যায় করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিলাম।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, উপাচার্য আমাদের আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত কোনোরূপ তদন্ত রিপোর্ট বা দোষীদের ওপর শাস্তি আরোপ হতে দেখিনি। ফলে নিপীড়ন ও সামাজিকভাবে আমাদের হেনস্তা করার আরও নতুন নতুন কৌশল সামনে আনা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে প্রথমেই বুয়েটের সব গ্রুপ থেকে আমাদের বের করে দেওয়া হয়, যেন আমরা তথ্য ঘাটতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান গতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারি। ক্লাবগুলো থেকে বের করে দিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকেও দূর সরানো হয়।
‘খেলাধুলা এমনকি ব্যাচ বা ডিপার্টমেন্টের যে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে আমাদের ওপর মানসিকভাবে অত্যাচার চালানো হয়। একটা পর্যায়ে আমাদের সঙ্গে স্টাডি ম্যাটেরিয়ালস শেয়ার না করার ঘোষণা দেয় একটি গোষ্ঠী। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর তাদের মতামত চাপিয়ে দেয়। মতামত অগ্রাহ্য করলে হেনস্তার হুমকি দেওয়া হয়।
ছাত্রলীগপন্থি এই শিক্ষার্থীরা বলেন, এরপর আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে হিজবুত তাহরির ও শিবিরের মতো মৌলবাদী সংগঠন যে সক্রিয় তার অভিযোগ করেছিলাম। আজকে আমাদের অভিযোগের সত্যতা বুয়েটের সিসিটিভি ফুটেজ দেয়। সেই সিসিটিভি ফুটেজে যাদের দেখা গেছে তাদের বিরুদ্ধে খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপাচার্যের কাছে অনুরোধ জানাই। তারা কি বুয়েটের নাকি বাইরের এ বিষয়টি নিয়ে আমরা সন্দিহান। যদি তারা বুয়েটের বাইরের হয় তবে বুয়েটের অভ্যন্তরে প্রবেশ কীভাবে করলো? আর যদি বুয়েটের হয় তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের পরিচয় উল্লেখ করে তাদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হোক।
তারা বলেন, ক্যাম্পাসের এরকম অস্থিতিশীল পরিবেশে জামিনে থাকা আসামিদের সঙ্গে একই ক্যাম্পাসে থাকা যেহেতু খুব ভীতিকর তাই যতদিন পুলিশ কেসের নিষ্পত্তি না হচ্ছে, তাদের সাময়িকভাবে একাডেমিক বহিষ্কার করে ক্যাম্পাসে তাদের গতিবিধি রোধ করা হোক। এছাড়াও যারা তাদের সঙ্গে জড়িত বা মদতদাতা তাদের শনাক্ত করে তদন্তের জন্য গোয়েন্দা নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হোক।
এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের দেওয়া আগের অভিযোগপত্রের উত্তরে কোনো যথাযথ পদক্ষেপ খেয়াল না করার কথা জানিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া এবং আগামী একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে বুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের তদন্তের রিপোর্ট এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করেন।