রাজবাড়ী প্রতিনিধি
ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় রাজবাড়ীতে দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। পানির অভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি ও সাংসারিকসহ দৈনন্দিন কাজ। রাজবাড়ী সদর, কালুখালী, পাংশা ও বালিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজার ও বসতবাড়িতে গত প্রায় একমাস ধরে শত শত টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। টিউবওয়েল চাপতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছে মানুষ। এছাড়া ইঞ্চিন চালিত স্যালো মেশিনেও পর্যাপ্ত পানি না ওঠায় ব্যাহত হচ্ছে কৃষি ও সেচ কাজ।
এ জেলায় তীব্র গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানির সংকট। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় শুকিয়ে যাচ্ছে খাল-বিল ও পুকুরের পানি। ফলে জেলার ৪ উপজেলার শত শত পরিবার পানি সংকটে ভুগছে। সামর্থ্যবান অনেক পরিবার মোটর বসিয়ে পানি সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেও পর্যাপ্ত পানি না ওঠায় বিপাকে পড়ছেন।
চাষি তারেক বলেন, মেশিনে যে পরিমাণ পানি ওঠার কথা, সেই পরিমাণ পানি উঠছে না। যার কারণে মাঠের ফসল ভালো হচ্ছে না। আর বৃষ্টির পানি না পেলেতো ফসলও ভালো হবে না। সেই পেঁয়াজের মৌসুমের পর আর বৃষ্টি হয় নাই। মেশিনের পানি দিয়ে ক্ষেত ভালোভাবে ভেজানো যাচ্ছে না।
রাজবাড়ীতে পানি উঠছে না টিউবওয়েলে, বিপর্যস্ত জনজীবন
গান্দিমারা বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম বলেন, বাজারের বেশিরভাগ টিউবওয়েলে প্রায় ২০ দিন ধরে পানি উঠছে না। ঠিকমতো পানি না পাওয়ায় হোটেল, দোকান চালাতে সমস্যা হচ্ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রেখে অনেক দূর থেকে পানি আনতে হচ্ছে। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান পানি সংকট সমাধানে তাদের আশ্বস্ত করেছেন।
কালুখালী দামুকদিয়ার অমল কুমার বিশ্বাস বলেন, প্রায় একমাস হলো তার বাড়িসহ আশপাশের অনেক টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। পানি দিয়ে পানি ওঠাতে গেলে হাত ও কোমর ব্যথা হয়ে যায়। পাশের বাড়ির একটি টিউবওয়লে কোনো রকম পানি উঠছে। ওখান থেকেই খাবার ও থালা-বাসন পরিষ্কারের পানি আনা হচ্ছে। গোসল করতে অনেক দূরের একটি পুকুরে যাচ্ছেন সবাই। সেখানেও পানি কম। পানি গরম হয়ে থাকে।
কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মজনু বলেন, তার ইউনিয়নের অনেক এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। টিউবওয়েলে পানিই উঠছে না। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য এখন পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ ১০টি পয়েন্টে গভীর নলকূপ বসিয়ে দিয়েছেন এবং আরও বেশ কয়েকটি স্থানে বসানোর কাজ চলছে। এর মাধ্যমে পানির সমস্যা অনেকটা পূরণ হবে বলে তিনি আশাবাদী। এজন্য তাকে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম।
রাজবাড়ী জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাকারিয়া বলেন, বর্তমানে রাজবাড়ীতে পানির স্তর নিচে নামার কারণে হ্যান্ড টিউবওয়েলেও পানি উঠছে না। পানির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জনগণকে সরকারিভাবে বসানো তারা টিউবওয়েল ও গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহের পরামর্শ দিচ্ছেন। এই টিউবওয়েলে সব সময় পানি পাওয়া যায় এবং ৭০ থেকে ৮০ ফুট নিচে পানির স্তর চলে গেলেও পানি ওঠে। তবে একটা বৃষ্টি হলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।