প্রতিদিনের ডেস্ক
ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা কেউ ফিরিয়ে আনতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেছেন, জম্মু ও কাশ্মিরে কেউ ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনতে পারবে না।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।মূলত ভারতীয় সংবিধানের এই ধারার কারণেই ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মিরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল এবং ২০১৯ সালের আগস্টে বিতর্কিতভাবে তা বাতিল করে মোদি সরকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার দেশে ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) প্রয়োগ করবে বলে সোমবার জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
বিহারের বেগুসরাই জেলায় একটি নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন: ‘ইন্ডিয়া (INDIA) জোটের নেতারা বলছেন- তারা কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে দেশে তিন তালাক এবং মুসলিম ব্যক্তিগত আইন আনবে। তারা সরকারও গঠন করবে না, বা দেশে তিন তালাক এবং মুসলিম ব্যক্তিগত আইনও প্রয়োগ করতে পারবে না। বিজেপি ক্ষমতা ধরে রাখবে এবং দেশে ইউসিসি প্রয়োগ করবে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘বিরোধী নেতারা আরও বলছেন- তারা জম্মু ও কাশ্মিরে ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনবেন। আমি রাহুল গান্ধীকে জানাতে চাই, যতক্ষণ পর্যন্ত একজন বিজেপি কর্মীও বেঁচে থাকবে, ততদিন কেউ জম্মু ও কাশ্মিরে ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনতে পারবে না।’
ভারতের এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, মাওবাদী ঝামেলায় বিহারে শত শত যুবক নিহত হয়েছে। তার দাবি, ‘কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিহার এবং ঝাড়খণ্ডে মাওবাদী কার্যকলাপের অবসান ঘটিয়েছেন। তিনি বিহার থেকে হামলা ও হত্যার সংস্কৃতিও দূর করেছেন।’
এর আগে কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করাকে অন্যতম বড় অর্জন বলে মন্তব্য করেছিলেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। গত বছরের আগস্টে এনডিটিভির সঙ্গে কথপোকথনে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলকে ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর মধ্যে একটি’ বলে অভিহিত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, জওহরলাল নেহেরুর সময়ে ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মিরকে দেওয়া বিশেষ মর্যাদা ৩৭০ ধারা ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট বাতিল করে ভারত। সেসময় জম্মু ও কাশ্মির রাজ্য পুরোপুরি মুছে ফেলে এটিকে লাদাখ এবং জম্মু-কাশ্মির নামে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করা হয়।
মূলত দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশ পাকিস্তান ও ভারত বিতর্কিত কাশ্মিরের পুরোটাই দাবি করলেও উভয়েই এর কিছু অংশ শাসন করে থাকে। তারা এই হিমালয় অঞ্চল নিয়ে তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দু’টিতে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।
কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে। এখন উভয়েই পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে, তবে ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান আর ভারত স্বাধীনতা পাওয়ার আগে থেকেই কাশ্মির নিয়ে বিতর্কের সূচনা হয়েছিল।
‘কাশ্মিরকে উপেক্ষা করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না’
কাশ্মিরে মসজিদে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে বাধ্য করলো সেনাবাহিনী
কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করাকে অন্যতম বড় অর্জন বললেন জয়শঙ্কর
১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর আক্রমণের মুখে কাশ্মিরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগ দেওয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, এবং ভারতের সামরিক সহায়তা পান। পরিণামে ১৯৪৭ সালেই শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।
উভয় দেশের এই যুদ্ধ চলেছিল প্রায় দু’বছর ধরে। এরপর কাশ্মিরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় ১৯৪৮ সালে, তবে পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে। তখন থেকেই কাশ্মির কার্যত পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়।অন্যদিকে ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে চীন কাশ্মিরের আকসাই-চিন অংশটির নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। আর তার পরের বছর পাকিস্তান – কাশ্মিরের ট্রান্স-কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে ছেড়ে দেয়।
সেই থেকে কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান, ভারত ও চীন – এই তিন দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে।