প্রতিদিনের ডেস্ক
তীব্র দাবদাহে জ্বলছে পশ্চিমবঙ্গ। কাঠফাটা গরমে নাজেহাল কলকাতাসহ গোটা রাজ্য। রোদের তাপে শুকিয়েছে নদীর পানি। শুকিয়ে যাচ্ছে মাঠ-ঘাট। এই তীব্র দহনজ্বালায় সেদ্ধ হওয়ার উপক্রম মানুষের।কলকাতার আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর বলছে, তাপপ্রবাহের হাত থেকে এখনই নিস্তার পাওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই পশ্চিমবঙ্গের মানুষের। এ রকম অবস্থা চলবে আরও ৪-৫ দিন।
আবহাওয়া দপ্তরের আঞ্চলিক কর্মকর্তা সোমনাথ দত্ত জানান, দক্ষিণবঙ্গে তাপপ্রবাহ চলবে। শুক্রবার (৩ মে) পর্যন্ত আট জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহের লাল সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবারও বেশ কয়েক জেলায় চরম তাপপ্রবাহের কমলা সতর্কবার্তা জারি রয়েছে। তবে নতুন করে তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ২৪ ঘণ্টায় কলকাতা শহরে তাপমাত্রা থাকবে সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকবে ২৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে, ৫ মে থেকে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।প্রচণ্ড দাবদাহে এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সব সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বেসরকারি স্কুলগুলোর কেউ কেউ অনলাইনের মাধ্যমে পড়াশোনা চালাচ্ছে। কিছু বেসরকারি স্কুলে আবার সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ক্লাস চালু রয়েছে।
তবে বেলা ১১টার পর থেকেই কলকাতার রাস্তাঘাট কার্যত খাঁ খাঁ করছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউই ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। আর নিতান্তই যারা বেরোচ্ছেন, সূর্যের প্রখর তাপ থেকে বাঁচতে সারা শরীর কাপড়ে মুড়িয়ে নিচ্ছেন। বাইরে বেরোলেও তাপপ্রবাহের হাত থেকে রক্ষা পেতে সকাল-সকাল কাজ সেরে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছে সাধারণ মানুষ।চাকরিজীবীরাও রোদের তাপ বাড়ার আগেই তাদের নির্দিষ্ট কর্ম স্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাতেও নিস্তার নেই। প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই ধরনের আবহাওয়ায় হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা অনেক বেশি। হতে পারে পানিশূন্যতাও।
হিট স্ট্রোকের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর আগে থেকেই বেশ কয়েকটি হাসপাতালে বিশেষ ইউনিট চালু করেছে। যাতে হিট স্ট্রোকে আক্রান্তদের দ্রুত সেবা দেওয়া যায়।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে যারা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছেন, সেই ট্রাফিক পুলিশের অবস্থা আরও দুর্বিসহ। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশদের দেখা গেলো বারবার মুখে ও মাথায় পানি ঢালছেন।
দাবদাহে থেকে বাঁচতে কলকাতা পুলিশের সদরদপ্তর থেকে প্রত্যেক ট্রাফিক পুলিশকে ওআরএস’র (লবণ-চিনি মেশানো পানি) প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা পান।
এদিকে, প্রচণ্ড গরমের হাত থেকে বাঁচতে কলকাতাবাসীর ভরসা ডাবের পানি, আইসক্রিম, জুস, ঠান্ডা পানি ও ছাতুর সরবত। মাথায় রাখতে হচ্ছে বড় টুপি, কেউ আবার ছাতা মাথায় দিচ্ছে। দুপুরের খাবারেও রাখা হচ্ছে খুব হালকা মসলার বা মসলাবিহীন খাবার।
কলকাতার বাসিন্দা বাপি বিশ্বাস বলেন, আমি বাড়ি বাড়ি খাবার পানি সাপ্লাই দিই। কিন্তু এই গরমে খুব অসুবিধার মধ্যে আছি। কলকাতায় এখন যা রোদ পড়ছে, তাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পানি পৌঁছে দেওয়া ভীষণ কষ্টকর ব্যাপার।‘রোদ থেকে রেহাই পেতে মুখে কাপড় বেঁধে নিতে হচ্ছে, ঘনঘন ঠান্ডা পানি পান করতে হচ্ছে। পানিশূন্যতা থেকে বাঁচতে লবণ-চিনি মেশানো পানি সঙ্গে রাখতে হচ্ছে। তবে আমাদের বিদ্যুতের কোনো সমস্যা নেই। খুব একটা যায় না, গেলেও একটু পরেই চলে আসে।’মাধবী বসাক নামে এক নারী বলেন, গরমের কারণে কিছু ভালো কাজও হচ্ছে। বিদ্যুৎ যাচ্ছে না খুব একটা, গেলেও সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে। আবার মসলাদার খাবার একদমই খাওয়া যাচ্ছে না। তবে ওআরএস বেশি করে খেতে হচ্ছে।এই সময় বিদ্যুতের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। ফলে চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকায় কলকাতাসহ বেশকিছু জেলায় ঘনঘন লোডশেডিং ঘটছে। বড় কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি না হলে লোডশেডিং এক থেকে দু মিনিট পর্যন্ত থাকছে।
পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম ও সিইএসসিকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ ও সিইএসসি কর্তৃপক্ষকে আরও দ্রুততার সঙ্গে সেবা পৌঁছে দেওয়া নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, কোথাও যান্ত্রিক ত্রুটি হলে সঙ্গে সঙ্গে জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ চালু করে দিতে হবে। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের হাতে ৪৫০টি জেনারেটর রয়েছে। সেসব জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখতে হবে।