প্রতিদিনের ডেস্ক
যারা সরকারবিরোধী আন্দোলন করছে, তাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধরে নিলাম তারা আমাকে উৎখাত করবে। কিন্তু এরপর কে ক্ষমতায় আসবে, তারা কি সেটা ঠিক করতে পেরেছে? বৃহস্পতিবার গণভবনে সাম্প্রতিক থাইল্যান্ড সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমার শক্তি হচ্ছে দেশের জনগণ। কাজেই জনগণের শক্তিকে আমি সবসময় বিশ্বাস করি। আমি এটাও বিশ্বাস করি যে- জনগণ যতক্ষণ চাইবে, ততক্ষণই ক্ষমতায় থাকবো। কারণ আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছি। অতিবাম রাজনৈতিক দলগুলোর সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে করা এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, তারা পুরো ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। ধরে নিলাম তারা আমাকে উৎখাত করবে। কিন্তু এরপর কে আসবে ক্ষমতায় তারা কি সেটা ঠিক করতে পেরেছে? সেটাই আমার প্রশ্ন- কে আসবে ক্ষমতায়? কে দেশের জন্য কাজ করবে? কাকে তারা আনতে চায় (ক্ষমতায়) সেটা কিন্তু স্পষ্ট নয়, আর সেটা স্পষ্ট নয় বলেই তারা জনগণের সাড়া পাচ্ছে না। এসময় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট এখনো টিকে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন সবচেয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান। বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের উপজেলা নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন বর্জন করে কেন? কারণ তাদের নির্বাচন করার মতো সক্ষমতা নাই।উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, যেমন ধরুন সংসদ নির্বাচন। সে নির্বাচন করতে হলে জনগণকে তো দেখাতে হবে আপনাদের পরবর্তী নেতৃত্বে কে আসবে বা প্রধানমন্ত্রী কে হবেন বা নেতা কে হবেন? একজন নেতাকে তো দেখাতে হবে। আপনাদের কাছে যদি এখন উপযুক্ত নেতা না থাকে তখন তো আপনাকে একটা ছুতা খুঁজতে হয়। হ্যাঁ, নির্বাচন করলাম না, বাস্তবতা সেটাই। আমাদের দেশে ওটাই এখন হচ্ছে। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বা পলাতক আসামিকে যদি জনগণের সামনে দেখান তাহলে পাবলিক তো সেটা মেনে নেবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উপজেলায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। যেখানে জনগণ তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে। উপজেলা নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং প্রভাবমুক্ত রাখাই আমার লক্ষ্য। সেখান থেকে যারাই জিতে আসে আসবে। সেটা হলো বাস্তবতা। মানুষ যাকে চাইবে সেই জয়ী হবে। যেমন আওয়ামী লীগকে চেয়েছে (ক্ষমতায়), আওয়ামী লীগ চলে এসেছে। আওয়ামী লীগই প্রথম আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতীতে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ আর্থিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ওপর নির্ভরশীল ছিল। আমরা এটাকে সেখান থেকে মুক্ত করে সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত করে দিয়েছি। আলাদা বাজেট দেওয়া হয়েছে। সরকারপ্রধান আরও বলেন, এখন কোনো কোনো দল থেকে মানুষকে ভোটে না যেতে বলা হচ্ছে। প্রশ্নটা হচ্ছে মানুষ কেন ভোটে যাবে না? এটাতো তার অধিকার। তার এলাকায় সে যাকে চায় তাকে সে ভোট দেবে। তাদের এই ভোটের অধিকারে হস্তক্ষেপ কেন? রাজনীতি করতে গেলে ঝুঁকি নিতে হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার বাবার খুনিরা পুরস্কারপ্রাপ্ত, যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন এবং সাজাপ্রাপ্তও ছিল তাদের ছেড়ে দিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়, তারাই ক্ষমতায়। তারাই মন্ত্রী-উপদেষ্টা হয়। তিনি আরও বলেন, ওই অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি। জীবন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বারবার আঘাত এসেছে কিন্তু বেঁচে গেছি। বেঁচেও গেছি এবং বারবার নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এসেছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে বলেই আজকে দেশের উন্নতি। থাইল্যান্ডে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন হলেও সাংবাদিকদের প্রশ্নে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়, ফিলিস্তিন ইস্যু, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, হিট ওয়েভ, আমেরিকায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা প্রসঙ্গসহ বিভিন্ন বিষয় ওঠে আসে। প্রধানমন্ত্রী এসবের জবাব দেন। তিনি বলেন, এখন যারা ‘গণতন্ত্র নাই, দেশে ভোটের অধিকার নাই’ বলে, তারাই তো মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, এটাই তারা ভুলে যায়। আর অনেকে নানা ধরনের কথা বলেন। অনেকে উন্নয়নটা চোখে দেখলেও কেউ কেউ দেখেন না। প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, উন্নয়নটা তারা নাও দেখতে পারেন, কারণ তাদের হয়তো উন্নয়নের ফর্মুলাটা ভিন্ন। আর আমার উন্নয়নটা হচ্ছে গ্রামের মানুষ দু’বেলা পেট ভরে খাবে, তাদের একটু বাসস্থান হবে, চিকিৎসা পাবে, শিক্ষা পাবে ও জীবনমান উন্নত হবে। এসময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্ন করেন, আপনারা তো সাংবাদিক, আপনারাই বলেন, বেশিদিন নয়, মাত্র ১৫ বছর আগেই দেশের অবস্থা কেমন ছিল? এখন কি কোনো পরিবর্তন হয়নি? এখন কেউ যদি উন্নয়নটা না দেখে- তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই। শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের কিছু লোক রয়েছে, যারা সবসময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কানভারী করছে। তারা অনেক জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী এবং তারা যখন সারাক্ষণ উল্টাপাল্টা বলতেই থাকবে, কিছুটা (বিদেশিরা) তাদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়াটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগণের পক্ষে রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সেখানে গণহত্যা বন্ধের ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা হ্রাস করে তার অর্থ দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় ও জলবায়ু তহবিলে প্রদানের আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখেছেন, আমেরিকায় আন্দোলন করার জন্য ৯০০ ছাত্রছাত্রী ও অধ্যাপক গ্রেফতার হয়েছেন। আর এটা না কি গণতন্ত্রের একটা অংশ। আমেরিকায় বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের দেশে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। তাদের আগে নিজের ঘর সামলানো উচিত। দেশের তাপপ্রবাহের বিষয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশে গরম নতুন নয়। তবে যেভাবে গরম বাড়ছে, তাপমাত্রা বাড়ছে এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। নিরাপদে থাকতে হবে, প্রচুর পানি খেতে হবে। রোহিঙ্গাদের বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। থাইল্যান্ডও আশ্বাস দিয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী প্রত্যাবাসন নিয়ে সহযোগিতা করবে। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তারাও উদ্বিগ্ন।
প্রধানমন্ত্রী তার থাইল্যান্ড সফর নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, থাইল্যান্ডের সফরে কি পেলাম আর কি পেলাম না- সেটা বড় বিষয় নয়। নতুন করে কিন্তু অর্থনীতির একটি দুয়ার খুলেছে। থাইল্যান্ডের সঙ্গে খাদ্য ও ফল উৎপাদনের বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে।