২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

চাকুরীর প্রলোভনে ফেলে বাংলাদেশী নারীকে সৌদি আরবে নিয়ে বিক্রির অভিযোগ

উৎপল মণ্ডল,শ্যামনগর
উচ্চ বেতনের ভাল চাকুরী পাইয়ে দেয়ার প্রলোভনে ফেলে রোজিনা খাতুন(৩৪) নামে এক নারীকে সৌদি আরবে নিয়ে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকাস্থ মতিঝিলের সেভেন স্টার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেস নামীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গত ১৯ মার্চ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে তাকে সৌদি আরবে নেয়া হয়। পরবর্তীতে সেখানকার স্থানীয় একটি আদম ব্যবসায়ী চক্রের কাছে বিক্রি করা হয় তাকে। আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের হাতে জিম্মি ঐ নারীকে বর্তমানে গোপন একটি আস্তানায় আটকে রেখে জোরপূর্বক দাসত্বমুলক ও অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এঘটনায় মামলা দায়েরের পর বুধবার রাতে মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চল (২৮) নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে শ্যামনগর থানা পুলিশ। সে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার শংকরকাটি গ্রামের মোঃ মোমিন খাঁ ও তাসলিমা বেগম (৪৭) দম্পতির ছেলে। ভুক্তোভোগী নারীর ভাই সালাউদ্দীন জাহাঙ্গীর (৩৬) বাদি হয়ে বুধবার শ্যামনগর থানায় মামলাটি করেছেন। মোস্তাফিজুরসহ তার মা তাসলিমা এবং সেভেন স্ট্যার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেস প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মোঃ রাসেল আকন (৩৩) এর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা দুই/তিনজনকে মামলায় আসামী করা হয়েছে। পাচারের শিকার রোজিনার ভাই সালাউদ্দীন বলেন প্রায় তিন বছর পূর্বে বিয়ে হলেও ছয় মাস আগে তার বোনের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এসময় পিত্রালয়ে অবস্থানের সুযোগে পূর্ব পরিচিত তাসলিমা ও তার ছেলে মোস্তাফিজুর তার বোনকে সৌদি আরবে যেয়ে চাকুরীর প্রস্তাব দেয়। একপর্যায়ে উচ্চ বেতনে ভাল চাকুরীর প্রলোভনে পড়ে রোজিনা পাসপোর্ট তৈরী করে এবং ১৭ মার্চ তাদের সাথে ঢাকায় চলে যায়। সালাউদ্দীন অভিযোগ করেন ঢাকা ত্যাগের পর থেকে বোনের সাথে যোগাযোগ করতে না দেয়া হলেও সে ভাল জায়গায় কাজ করছে বলে তাদের আশ্বাস্থ করা হয়। তবে আকস্মিকভাবে গত ১৬ এপ্রিল দুপুর ২টা ৪৬ মিনিটে তার হোয়াটসএ্যাপে ‘ভয়েস কল’ পাঠিয়ে রোজিনা নিজেকে বাঁচানোর আকুতি জানায়। এসময় কান্নাজাড়িত কন্ঠে সে জানায় সৌদিতে পৌছানোর পরই মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে তাকে একটি কোম্পানীর কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। শাররীকভাবে অসুস্থ হওয়ায় প্রয়োজনীয় ঔষধ নিয়ে গেলেও সেগুলো ছিনিয়ে নেয়ায় নিজের চিকিৎসা করাতে না পেরে ক্রমেই শারিরীক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। তাকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষে আটকে রেখে যৌণদাসী হিসেবে বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর পাশাপাশি মাঝেমধ্যে দৈনিক ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে গৃহস্থলীর ভারী কাজ করানো হলেও পারিশ্রমিকের অর্থ পাচার চক্রের সদস্যরা রেখে দেয়। ভুক্তোভোগী বোনের বরাত দিয়ে সালাউদ্দীন আরও বলেন, কাজে যেতে রাজি না হলে কিংবা দেশে ফিরতে চাইলে তাকে মারপিট করার পাশাপাশি বাথরুমের পানি খেতে দেয়া হচ্ছে। ঠিকমত খেতে দেয়া হয় না দাবি করে তার বোন জানিয়েছে পেটে ক্ষুধা নিয়ে সে কাজ করতে না পারলে চরম অত্যাচার করা হয়। দ্রুত উদ্ধার করা না হলে মারা যাওয়ার শংকার কথা জানিয়ে রোজিনা বলেন রাসেল আকন, তাসলিমা ও মোস্তাফিজুরসহ আর অপরিচিত দুই/তিন জন এই মানব পাচার চক্রের সাথে জড়িত। তারা মতিঝিলের সেভেন স্ট্যার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেস নামীয় প্রতিষ্ঠানের আড়ালে গ্রামের সহজ সরল, অভাবী এবং ডিভোর্সী নারীদের টার্গেট করে বলেও রোজিনা তার ভাইকে জানিয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তাসলিমা বেগম বলেন রোজিনার দুরাবস্থার কথা জানতে পেরে তিনি লাইসেন্স মালিক শিমুলের সাথে কথা বলেছেন। তবে রোজিনাকে ফিরিয়ে আনার বিনিময়ে তিনি দুই লাখ টাকা দাবি করেছেন। বাধ্য হয়ে অন্য লাইসেন্স মালিককে দিয়ে তিনি বিষয়টি নিরসনের চেষ্টা করছেন।
রোজিনাকে সৌদিতে পাঠানোর সাথে জড়িত সেভেন স্টার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসের ম্যানেজার রাসেল আকন বলেন, সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। তবে তিনি রোজিনাকে ফিরিয়ে আনার বিনিময়ে তার পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেন।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইতিমধ্যে মানব পাচারের অভিযোগে ভুক্তোভোগী নারীর ভাই মামলা করেছেন। আসামীদের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিকটিমকে উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়