২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

বাইসাইকেল প্রেমিক সরকারি কর্মকর্তা

মাগুরা প্রতিনিধি
সরকারি অফিসের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। পড়ালেখা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজের অফিসের দুটি মোটরসাইকেল আছে। মাসে মাসে জ্বালানিও বরাদ্দ পান। তারপরও তিনি অফিস করেন বাইসাইকেলে। শুধু অফিস নয়, ফিল্ড ওয়ার্ক থেকে সবরকম কাজ, নিজের প্রয়োজনে যাতায়াতের জন্য বাইসাইকেল তাঁর প্রথম পছন্দ। শৈশব থেকে বাইসাইকেলের সঙ্গে গড়ে উঠেছে সখ্য, আজও তা ছাড়তে পারেননি। বাইসাইকেল প্রেমিক এই কর্মকর্তার নাম আব্দুর রব। তিনি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার হিসেবে কর্মরত। তাঁর বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকূপা এলাকায়। আব্দুর রব জানান, ২০১৭ সালে তিনি উপজেলা সমাজসেবা অফিসার পদে যোগ দেন। তাঁর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান (সোসিওলজি) বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। তিনি থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে। শৈশবে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বাইসাইকেল চালানো শেখেন। সেখান থেকে সাইকেলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে। কর্মজীবনে প্রবেশের পরও সাইকেল ছাড়তে পারেননি। এখনও প্রতিদিন তিনি ৫-১০ কিলোমিটার বাইসাইকেল চালান। এ পর্যন্ত সাতটি সাইকেল হাতবদল করেছেন। স্কুল, কলেজ, বাড়ির সব কাজ করতেন সাইকেলে চড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পুরো সময় বাইসাইকেলে সব জায়গায় গেছেন, সব কাজ করেছেন। ঢাকা শহরের অলিগলির ধুলো তার সাইকেলের টায়ারের লেগে আছে। পড়ালেখার জন্য সমাজকর্ম বা মাঠকর্মসহ সব গবেষণা কাজে সঙ্গী ছিল বাইসাইকেল। এখন চাকরি পাওযার পরও বাইসাইকেলে চলাফেরা করেন। দৈনন্দিন নিজের কাজ, অফিসের কাজে চলাচলে সাইকেল তার সম্বল। আব্দুর রব বলেন, বাইসাইকেল চালানো তাঁর নেশা ও শখ দুটোই। তিনি এতে হীনমন্মতায় ভোগেন না। পাছে লোকে কিছু বললেও তিনি গায়ে জড়ান না। সমাজে অনেকে মনে করেন টাকার অভাবে মানুষ বাইসাইকেল চালান, বিষয়টি এরকম নয়। উন্নত পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে ইউরোপের মানুষদের উদাহরণ টেনে আব্দুর রব জানান, তাঁরা সরকার প্রধান থেকে নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ সবাই বাইসাইকেল ব্যবহার করেন। তাঁরা টাকার অভাবে বাইসাইকেল চালান না। বাইসাইকেল চালালে সময় অর্থ দুই-ই বাঁচে। বাইসাইকেল পরিবেশবান্ধব। এতে জ্বালানি সাশ্রয় হয়। ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডসসহ উন্নত দেশে বাইসাইকেল যাতায়াতের অন্যতম বাহন। এ দেশেও বাইসাইকেলের ব্যাপক ব্যবহার শুরু করা দরকার। আব্দুর রবের বাবা লিয়াকত আলী পেশায় কৃষক। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে রব দ্বিতীয়। তার স্ত্রী গৃহিণী। এ দম্পতির দুটি ছেলে-মেয়ে আছে। মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. আব্দুস সালাম মুকুল বলেন, ‘বাইসাইকেল চালালে ব্যায়াম হয়। এটা শরীরের জন্য উপকারী। সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার জন্য আমরা বাইসাকেল চালাতে লজ্জাবোধ করি। আব্দুর রবের নিয়মিত বাইসাইকেল চালানো সকলের দৃষ্টান্ত হতে পারে।’

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়