সরকারের নানা উদ্যোগ থামাতে পারছে না সড়ক দুর্ঘটনা। আইন পরিবর্তন হলেও বাস্তবায়নে নানা বাধাবিপত্তি সামনে দাঁড়িয়েছে। আইন বাস্তবায়নে সরকারকে কঠোর হওয়া ছাড়া উপায় নেই। সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল। খোদ রাজধানীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এমন অসংখ্য যাত্রীবাহী বাস। সম্প্রতি ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে বেশ কিছু মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটায় খানিকটা টনক নড়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। ঘোষণা দিয়েছে, গত বুধবার থেকে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। তবে সড়ক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ ধরনের ঘোষণা আগেও দেয়া হয়েছে, কিন্তু সফল হয়নি। এবারো কতটা সফল হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাবে। সড়ক-মহাসড়কে নৈরাজ্য থামাতে সরকারকেই কঠোর হতে হবে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালের আগস্টে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পাস করা হয়। কিন্তু গত ৬ বছরেও সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর বিধিমালা প্রণীত হয়নি। আইনের কিছু কিছু ধারা আংশিক বাস্তবায়ন করা হলেও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ায় সড়কের সার্বিক অবস্থার এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখনো সড়কে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি, নৈরাজ্য, হয়রানিসহ নানান অব্যবস্থাপনা দেখছি প্রতিনিয়ত। সড়কে অব্যবস্থাপনার করুণ পরিণতির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেপরোয়া বাস দুর্ঘটনায় কেউ হাত কিংবা পা হারাচ্ছে আবার কারো কোমর ভাঙছে। জননিরাপত্তার স্বার্থে এই নৈরাজ্য চলতে দেয়া যায় না। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু একটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো এবং দুর্ঘটনাকেন্দ্রিক অপরাধের বিচার ও শাস্তি প্রদানের জন্য একটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ আইনের প্রত্যাশা অনেক পুরনো। সড়ক পরিবহনের নতুন আইনের প্রয়োগে বাধা নিয়ে প্রভাবশালীদের ভূমিকা লক্ষণীয়। বিআরটিএও সহযোগী নয়। আমরা মনে করি, এই আইন বাস্তবায়ন করতে হলে মূলে হাত দিতে হবে। বিআরটিএ স্বচ্ছ হলে সড়ক-মহাসড়কে নৈরাজ্য প্রায় কমে আসবে। তথ্যমতে, দেশে ৩০ শতংশ দুর্ঘটনা ঘটে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে। বাকি ৭০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে নানাবিধ কারণে। এর মধ্যে চালকদের বেপরোয়া আচরণ, অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানো, যাত্রীদের অসচেতনতা, মানসম্মত রাস্তার অভাব, যেখানে সেখানে পার্কিং, হাইওয়েতে ধীরগতির যানবাহন চলাচলসহ অনেক কারণ রয়েছে। তবে গাড়ির ফিটনেস থাকা সবচেয়ে জরুরি। সড়কে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করে। তারা ফিটনেসবিহীন গাড়ি ইচ্ছে করলেই আটক করে ডাম্পিংয়ে পাঠাতে পারে। অভিযোগ রয়েছে, ফিটনেসবিহীন যানবাহন থেকে বড় ধরনের চাঁদাবাজি হয়। পুলিশ ও বিআরটিএ এই চাঁদার ভাগ পায়। এ কারণে ফিটনেসবিহীন যানবাহন নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। এসবের প্রতিকার জরুরি। আধুনিক, মানসম্পন্ন ও নিরাপদ সড়ক পরিবহন যে কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকেও গতিশীল করে। পরিবহন খাত এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক যোগাযোগ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অনেক বিষয় এখন পরিবহনে যুক্ত। তাই সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এজন্য সময়ের ধারাবাহিকতায় সড়ক পরিবহন আইনে যে বিষয়গুলো সংযোজিত হয়েছে, তার কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি মনে করছি। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সমাধানের অযোগ্য কোনো বিষয় নয়। এ জন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। এ জন্য পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতন হতে হবে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে
সড়ক-মহাসড়ক শৃঙ্খলায় আসুক
Previous article
Next article
আরো দেখুন
সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে
অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাস অতিবাহিত হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রতিদিন মিটিং, মিছিল, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।...
সহিংসতা কাম্য নয়
দীর্ঘদিন ধরেই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রেখে এসেছে। এখনো তারা একই ভূমিকায় রয়েছে। তারা চায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আগামী...