২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ: তদন্তে জেলা প্রশাসনের কমিটি

গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুর রেল জংশনের আউটার সিগন্যালে ছোট দেওড়ার এলাকায় মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
শনিবার (৪ মে) তদন্ত কমিটির প্রধান ও গাজীপুর জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মতিউর রহমানের নেতৃত্বে কমিটি জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন ও হাসপাতাল পরিদর্শন করে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন ও জয়দেবপুর জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. হানিফ মিয়া।
প্রথমদিন তদন্ত কমিটি জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের আউটার সিগন্যালের ঘুমটি ঘর স্টেশন মাস্টার আবুল হাসেম, পয়েন্টসম্যান সাদ্দাম ও মোস্তাফিজুর রহমানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান সাংবাদিকদের জানান, প্রথমদিন সকালে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে তদন্তের বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরে দুপুরে জয়দেবপুর জংশনে ট্রেন দুর্ঘটনার দিন কর্তব্যরত আউটার সিগন্যালের ঘুমটি ঘর স্টেশন মাস্টার আবুল হাসেম, পয়েন্টস্ ম্যান সাদ্দাম ও মোস্তাফিজুর রহমানের সাক্ষাৎকার ও তাদের লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তিকৃত দুর্ঘটনা কবলিত টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের যাত্রী শরীফ মাহমুদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। কিন্তু সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা লোকোমাস্টার (এলএম) সবুজ হাসান ও লোকো মাস্টার (এলএম) মো. হাবিবুর রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর হওয়ায় তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রেল বিভাগ ও স্থানীয়রা জানান, ঢাকা-জয়দেবপুর অংশে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনের মধ্যে ডাউন লাইনে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তেলবাহী ট্রেন ঢাকা থেকে রংপুরের দিকে যাচ্ছিল। একই সময়ে আপলাইনে জয়দেবপুর রেল স্টেশন থেকে ঢাকাগামী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেন যাত্রা করে। কমিউটার ট্রেনটি আউটার সিগনালে আপ লাইন ছেড়ে ডাউন লাইনে ঢুকে পড়ে। ট্রেনটির অর্ধেক অংশ আপ লাইনে প্রবেশ করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা রংপুরগামী তেলবাহী ট্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এ সময় বিকট শব্দে আশপাশের মাটি কেঁপে ওঠে। এতে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের ইঞ্জিনসহ চারটি এবং তেলবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনসহ তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়। কয়েকটি বগি দুমড়ে মুচড়ে যায়। কিন্তু টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি যাত্রী বিহীনভাবে ঢাকা ফিরছিল, একারণে কোনো যাত্রী হতাহত হয়নি।
এ ঘটনায় দুটি ট্রেনের লোকো মাস্টারসহ ৪ জন আহত হন। আহতরা হলেন, লোকোমাস্টার হাবিবুর রহমান (৫৮) , লোকোমাস্টার সবুজ হাসান (৪৬) ও শরীফ মাহমুদ (৩৮)। তাদের গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অপরজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
অপরদিকে ঘটনা তদন্তে গাজীপুর জেলা প্রশাসন একটি এবং রেল বিভাগ পৃথক দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ভুল সংকেতের কারণে দুটি ট্রেন এক লাইনে চলে আসে বলে প্রাথমিক ধারণা থেকে রেলওয়ের তিন কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। তারা হলেন, জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের আউটার সিগন্যালের ঘুমটি ঘর স্টেশন মাস্টার আবুল হাসেম, পয়েন্টসম্যান সাদ্দাম হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান।
দুর্ঘটনার ২ ঘণ্টা পর ঢাকা-জয়দেবপুর ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনের একটি লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও একটি লাইন বন্ধ ছিল। পরে ৩২ ঘণ্টা পর দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেন দুটির ইঞ্জিন ও সকল বগি সরিয়ে নেওয়ার পর শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে উভয় লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়