ধান-চাল সংগ্রহে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে কৃষক যেন ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারেন কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়া- এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে প্রান্তিক কৃষক লাভবান হবেন। গত মঙ্গলবার থেকে সরকার চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে ধান, চাল, গম সংগ্রহ শুরু করেছে। এবার বোরো মৌসুমে ১৭ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহ করবে সরকার। এর মধ্যে ৫ লাখ টন ধান, ১১ লাখ টন সিদ্ধ চাল, ১ লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ধান ৩২ টাকা, সিদ্ধ চাল ৪৫ টাকা এবং আতপ চাল ৪৪ টাকা। একই সঙ্গে ৩৪ টাকা দরে ৫০ হাজার টন গম কেনারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সংগ্রহ কার্যক্রম ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চললেও জুনের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ অর্জনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে কিনা সংশয় রয়েছে। এবার যে টার্গেট ধরা হয়েছে, সরকার তা যে কোনো উপায়ে পূরণ করতে চাচ্ছে। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, নতুন উদ্যমে চলমান বোরো সংগ্রহ শতভাগ সফল করা হবে। অতীতের মতো হলে চলবে না। গতবার ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল, টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হয়নি। আমরা চাই এবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হোক। আমাদের দেশে ধানচাষিদের বেশির ভাগই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক। তারা ধারদেনা করে ফসল ফলান। তাদের সংসারে নানা অভাব-অনটন লেগেই থাকে। ফলে ধান কাটার পরপরই বহু কষ্টে ফলানো ফসল বিক্রি করতে বাজারে নিতে হয়। মৌসুমের শুরুতে ধানচাষিরা যাতে ধানের ন্যায্য দাম পান, তা যতটা সম্ভব নিশ্চিত করতে সরকার মাঠপর্যায়ে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনে। কিন্তু প্রতিবারই অভিযোগ উঠে ধান-চাল বিক্রিতে কৃষক নানা হয়রানির শিকার হন। এ অভিযোগ সত্য। গণমাধ্যমে এমন খবর আমরা প্রায়ই দেখতে পাই। জানা যায়, সরকার যেদিন বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করল তার অন্তত ৭ দিন আগেই দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে মিল মালিক ও ফড়িয়ারা কৌশলে ধান বিক্রি করা শুরু করেছে। লটারিতে নাম উঠানোসহ নানা কানুনের কারণে কৃষকরা সরকারের কাছে ধান বেচতে খুব একটা আগ্রহী নন। এই সুযোগে স্থানীয় বাজারের মৌসুমি ব্যবসায়ী, মিল মালিক ও ফড়িয়ারা কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে নেন। এমতাবস্থায় কয়েকবারের মতো এবারো সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাল কেনা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারের করণীয় রয়েছে। ইতোমধ্যে ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রির যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে বোঝা যায় কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। এই অবস্থার সমাধানে কৃষকদের আরো পাশাপাশি সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। ধান আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রধান শক্তি। পৃষ্ঠপোষকতা ও কৃষকদের হয়রানিমুক্ত করার জায়গায় আরো অনেক কাজ করতে হবে। কৃষক তার ন্যায্যমূল্যে পাক- এটাই প্রধান শর্ত হওয়া উচিত।
ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু
Previous article
আরো দেখুন
গণতন্ত্রের চর্চা শুরু হোক
বাংলাদেশে বিগত ১৬ বছরে যে তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা ছিল না বললেই চলে। যেমন দেশের ভেতর থেকে, তেমনি দেশের বাইরে থেকেও এসব...
চালের দাম বাড়ছেই
সাধারণত অঘ্রান মাসে আমন ধান তোলার সময় বাজারে চালের দাম অনেকটাই কমে আসে। এবার তা হয়নি। আমনের ভরা মৌসুমেও চালের দাম না কমে বরং...