নতুন করে তিস্তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে তিস্তা নদী খননকে কেন্দ্র করে ভারত ও চীনের মধ্যে এক ধরনের কূটনৈতিক লড়াই শুরু হয়েছে। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি ঝুলে আছে। অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এক দীর্ঘমেয়াদি অমীমাংসিত ইস্যু। দুই দেশের মধ্যে ১৯৯৬ সালে একমাত্র গঙ্গা নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি স্বাক্ষর হলেও তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগির ব্যাপারে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। সর্বশেষ ২০১১ সালে দুদেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে সব প্রস্তুতি নেয়া হলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরোধিতায় তা সম্পন্ন করা যায়নি। পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি দীর্ঘদিন ধরে না হওয়ায় তিস্তা খননসহ একটি প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ। সেই প্রকল্পে চীন অর্থায়ন করার প্রস্তাব আগেই দিয়েছে। ২ দিন আগে ঢাকা সফরে এসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রাও জানিয়েছেন, ভারত তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়ন করতে চায়। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সতর্ক হতে হবে। তিস্তায় ভারত ও চীন উভয়ের দৃষ্টি পড়ায় বাংলাদেশকে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মনে করছি। তবে তিস্তা খনন ইস্যুর আগে তিস্তা পানি বণ্টন বিষয়টি সামনে আসতে পারে। তিস্তা নদী ঐতিহাসিকভাবেই অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং খামখেয়ালি আচরণের একটি নদী, যা বন্যার কবলে পড়ে প্রায় প্রতি বছর বর্ষায় বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল একাধিকবার বিধ্বস্ত হয়ে চলেছে। আন্তর্জাতিক নদী হিসেবে ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার অধিকার থাকলেও শুকনো মৌসুমে তিস্তার পুরো পানিই ব্যবহার করছে ভারত। তিস্তা দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি, মৎস্য ও খাদ্য ব্যবস্থার জন্য পানির বড় আধার। বিশেষ করে অববাহিকাসংলগ্ন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার গ্রামের মানুষ তাদের জীবিকার জন্য এ নদীর ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক আইনি বিধি ব্যবস্থা অনুযায়ী একটি আন্তঃদেশীয় নদী হিসেবে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়া বাংলাদেশের অধিকার। ভারতের চাওয়াগুলোর বেশির ভাগ পূরণ হলেও বাংলাদেশের কিছু অপ্রাপ্তি রয়ে গেছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পানির গুরুত্বপূর্ণ উৎস তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির অনিশ্চয়তা দূর হয়নি। এক দীর্ঘসূত্রতার পাকে পড়ে গেছে এটি। রাজনৈতিক কারণেই তিস্তা চুক্তিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তিস্তার পানি ভারতের একতরফাভাবে আটকে দেয়া আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। আর তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আমাদের কাছে করুণা নয় বরং অধিকার। এ অধিকার থেকে আমাদের আর কতদিন বঞ্চিত রাখবেন? ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের বর্তমান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ও ভারতের দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত অনেক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। বিশেষ করে স্থলসীমান্ত ও সমুদ্র সীমানার মতো জটিল বিষয়গুলো বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু সমাধানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দুদেশের জনগণের প্রত্যাশা- তিস্তা চুক্তি সম্পাদনসহ অমীমাংসিত অন্য বিষয়গুলোরও দ্রুত সমাধান হবে। পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে দেশ দুটির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকুক। দুদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক তথা সব ধরনের যোগাযোগ ও সহযোগিতা ক্রমেই জোরদার হোক- এমন প্রত্যাশা করছি।
বাংলাদেশকে কৌশলী হতে হবে
Previous article
Next article
আরো দেখুন
মাদকের ভয়াবহ বিস্তার
শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত সর্বত্রই মাদকের ছোবল ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তরুণরা তো বটেই, কিশোর-কিশোরীরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। এর প্রধান কারণ মাদকের সহজলভ্যতা। হাত...
ব্যাংক খাতে মূলধন ঘাটতি
ব্যাংক খাত মানুষের আস্থা, ভরসা ও নির্ভরতার প্রতীক। বিনিয়োগ-ব্যবসা-বাণিজ্য ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক হলো এই ব্যাংক খাত। কোনো দেশের অর্থনীতির রক্তপ্রবাহ হিসেবেও এই...