প্রতিদিনের ডেস্ক
ইরানের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা’র বিষয়ে এবার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পাল্টা প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে তিনি জোরালো ভাষায় জানিয়েছেন, ‘ভারতের সহযোগিতায় ইরানের চাবাহার বন্দর প্রকল্প বাস্তবায়ন ও চালুর মাধ্যমে গোটা অঞ্চল উপকৃত হবে এবং এই বিষয়ে কারো সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিৎ নয়।’ পাকিস্তানের সীমান্ত ঘেঁষা ইরানের সীমান্তবর্তী ও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ চাবাহার বন্দরের উন্নয়নের জন্য তেহরান-নয়াদিল্লির মাঝে ২০১৬ সালে একটি প্রাথমিক চুক্তি হয়। সোমবার (১৩ মে) এই বন্দরের উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য ইরানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি সই করেছে ভারতের প্রতিনিধিদল। নতুন চুক্তিটি ২০১৬ সালের চুক্তিরই বর্ধিত অংশ। এর আগে প্রতিবছর এই চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর বাধ্যবাধকতা ছিল। ভারতীয় নৌপরিবহনমন্ত্রী এই চুক্তিকে ‘ভারত-ইরান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের অস্তিত্বের ওপর প্রচ্ছন্ন হুমকি ইরানের সঙ্গে ভারতের চুক্তির বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি ওয়াশিংটন। ইরান-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত তিন বছরে ছয় শতাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বিশ্বের শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভারত-ইরান চুক্তির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, চাবাহার বন্দর নিয়ে ভারত-ইরানের চুক্তির বিষয়ে আমরা অবগত। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। ইরানের সঙ্গে চাবাহার বন্দর নিয়ে তাদের সেই চুক্তিও দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আওতায় পড়ে। ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার খড়গ এখনও বহাল রয়েছে এবং ওয়াশিংটন সেগুলোর প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, ‘যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যারাই ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে, তাদের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে হবে যে, তারা নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য ঝুঁকির মাঝে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের এমন সতর্কবার্তার বিষয়ে কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে জয়শঙ্করকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু মন্তব্য দেখেছি, তবে আমি মনে করি, এটি যোগাযোগ এবং বোঝাপড়ার বিষয়। এই প্রকল্প আসলে সবার সুবিধার জন্য, কারো সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত নয়।’ জয়শঙ্কর বলেন, ‘তারা (মার্কিন) অতীতে এমনটা করেনি। সুতরাং, আপনি যদি চাবাহার বন্দরের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব মনোভাব দেখেন, যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়ে আগে প্রশংসা করেছিল যে, চাবাহার বন্দরের ব্যাপক প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে এবং আমরা এটা নিয়ে কাজ করবো।’ জয়শঙ্কর বলেন, ‘তারা (মার্কিন) অতীতে এমনটা করেনি। সুতরাং, আপনি যদি চাবাহার বন্দরের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব মনোভাব দেখেন, যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়ে আগে প্রশংসা করেছিল যে, চাবাহার বন্দরের ব্যাপক প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে এবং আমরা এটা নিয়ে কাজ করবো।’ এর আগে, ২০১৮ সালের শেষ দিকে ইরানের চাবাহার বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব নেয় ভারত। পাকিস্তানের স্থলপথ এড়িয়ে আফগানিস্তান এবং মধ্য-এশিয়ায় ভারতীয় পণ্য পরিবহন ও সরবরাহের একটি নতুন ট্রানজিট বা রুট খুলে দেয় এ বন্দর। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে ভারত থেকে আফগানিস্তানে ২৫ লাখ টন গম ও ২ হাজার টন ডাল পাঠানো হয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড (আইপিজিএল) এবং ইরানের পোর্ট অ্যান্ড মেরিটাইম অর্গানাইজেশন চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে সই করে।এই প্রকল্প আসলে সবার সুবিধার জন্য, কারো সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত নয়।