১৩ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২৭শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা জরুরি

কোনোভাবেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। গণমাধ্যমে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর আসছে। সড়ক-মহাসড়কে বেঘোরে মৃত্যু কারোরই কাম্য নয়। একটি মৃত্যু একটি পরিবারের কাছে সারা জীবনের জন্য গভীর ক্ষতের কারণ হয়ে থাকে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ক্ষোভ ঝাড়লেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওপর। কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য দিলেন কিছু নির্দেশনাও। গত বুধবার রাজধানীর বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবনে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের সভা ডাকা হয়। ওই সভায়ই কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এমন নির্দেশনা আগেও তিনি দিয়েছিলেন। কার্যকারিতা আমরা দেখিনি। এবার মন্ত্রীর নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়, সেটা দেখার বিষয়। সড়কে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি বেড়েই চলেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। দুর্ঘটনার এই পরিসংখ্যান খুবই উদ্বেগজনক। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা দিন দিন বাড়ছেই। সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের বেপরোয়া গতি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট ও ধীরগতির যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যানবাহন চলাচল বন্ধে তেমন উদ্যোগ নেই। দেশব্যাপী অন্তত ৫ লাখ ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলাচল করছে। নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলছে সড়ক-মহাসড়কে। এসব যানবাহন সড়কে দুর্ঘটনার প্রধান উৎস। দুর্ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির নজিরও তেমন নেই। যার ফলে চালকরা ইচ্ছামতো গাড়ি চালান। হাই রিস্ক নিয়ে ওভারটেক করেন। এছাড়া চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, যা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। ফুটপাতের বেহাল দশার কারণে মানুষ বাধ্য হয়ে মূল রাস্তায় হাঁটছেন এবং দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে হেলমেট ব্যবহারে অসচেতনতায় ছোটখাটো দুর্ঘটনায়ও প্রাণহানি ঘটছে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর অনুমোদন দিয়েছেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে সড়ক পরিবহন আইন পাস হলেও এখনো তা পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। দীর্ঘ এ সময়ে ঢাকা মহানগরীতে ট্রাফিক পুলিশ সীমিত আকারে আইনের প্রয়োগ করলেও সারাদেশে অনেকটা স্থবির অবস্থা রয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সমাধানের অসাধ্য বিষয় নয়। এজন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। বিশেষ করে মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের কঠোর নজরদারি জরুরি। মোট দুর্ঘটনার প্রায় অর্ধেকই যখন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা তখন এর রাশ টেনে ধরতেই হবে। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারী যে-ই হোক না কেন তার জরিমানা ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদেরও সজাগ থাকা দরকার। দুর্ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যানবাহন-সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতাও কাম্য। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং আইন পালনে জনসাধারণের সদিচ্ছা ও সচেতনতার বিকল্প নেই।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়