কামরুজ্জামান মুকুল, বাগেরহাট
কখনো মাথা মাটির নিচে ঢুকিয়ে কখনো বা চুল দিয়ে মোটরসাইকেল আটকে কিংবা মুখে আগুন নিয়ে নানা ভঙ্গিতে শারীরিক কসরত করে দেখাচ্ছেন এক ব্যক্তি। এসব অদ্ভুত কর্মকাণ্ড দেখতে তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে হাজারো মানুষ। শনিবার (১৮ মে) বিকেলে এমন দৃশ্য দেখা যায় বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার চাকশ্রী এবিসি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে। বিনা টিকিটে গ্রামগঞ্জে এ সার্কাস দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বিনোদন দিয়ে বেড়ান নীলফামারীর জলডাঙ্গা এলাকার আলমগীর বাদশাহ। নীলফামারী থেকে আলমগীর বাদশাহ নিজস্ব একটি ইঞ্জিনচালিত ইজিবাইকে চড়ে দেশের বিভিন্ন গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়ান। সেই সঙ্গে মানুষকে বিনোদন দেন তার ব্যতিক্রমী সব কর্মকাণ্ডে। মাথা ও বুকে ইট ভেঙে, শরীরের ওপর সাইকেল রেখে তার ওপর সাতজন উঠিয়ে, মুখে আগুন জ্বালিয়ে, বুকে লোহার রড ঢুকিয়ে এবং চুল দিয়ে মোটরসাইকেল আটকে শিশু, কিশোর, নারী-পুরুষ সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। আলমগীর বাগেরহাটে এসেছেন প্রায় এক মাস হতে চলেছে, থাকবেন পবিত্র ঈদুল আজহা পর্যন্ত। এখানে তিনি প্রতিদিন সার্কাস দেখিয়ে ইনকাম করেন ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। তার সার্কাস খেলা দেখে মানুষ খুশি হয়ে তাকে টাকা দেন। বৃ-চাকশ্রী এলাকা থেকে সার্কাস দেখতে আসা হামিম ফকির বলেন, আমি এমন সার্কাস আগে কখনো দেখি নাই। পরিবারের সবাইকে নিয়ে মাঠে দেখতে এসেছি। অনেক মানুষ আজ মাঠে উপস্থিত ছিল, এমন সার্কাস যদি এলাকায় মাঝে মধ্যে হয়, তাহলে এলাকার সকলে এক সাথে থেকে এই সব আনন্দ উপভোগ করতে পারবো। রামনগর এলাকা থেকে সার্কাস দেখতে আসা কাসেম শেখ বলেন, বহুদিন পর সার্কাস খেলা দেখলাম। এই খেলা খুব আনন্দদায়ক, আমার খুব ভালো লেগেছে গ্রামগঞ্জে এখন খেলা খুব কম দেখা যায় । সার্কাস খেলা দেখে খুশি হয়ে আমিও সহযোগিতা করেছি। একুব্বারিয়া এলাকা থেকে সার্কাস দেখতে আসা আব্দুল্লাহ বলেন, আমি আগে কখনো এই সার্কাস দেখিনি। এলাকার সব শ্রেণির মানুষের ভিড়ে মুখরিত ছিল স্কুল মাঠ। মনে হচ্ছিল যেন ঈদের দিন। এমন খেলা মাঝেমধ্যে হলে আমাদের একতা থাকবে। আলমগীর বাদশাহ বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে আমি এ সার্কাস খেলা দেখাচ্ছি। মাথায় ইট ভাঙতে পারি, বুকে ইট ভাঙতে পারি, শরীরের ওপর সাইকেল রেখে তার ওপর সাতজনকে উঠাতে পারি, মুখে আগুন জ্বালাতে পারি, চুল দিয়ে মোটরসাইকেল আটকে রাখতে পারি। এই খেলাগুলো কোন জাদু মন্ত্র নয়। এগুলো হচ্ছে সব অনুশীলন ও সাধনা। বড় ভাইয়ের কাছ থেকে এই খেলা শিখে এটাই সংসার চালানোর একমাত্র ভরসা। তিনি আরো বলেন, নীলফামারী আমার বাড়ি। মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে আমার পরিবার। ব্রিটিশ আমলে তৈরি দি লক্ষ্মন দাস রয়েল বেঙ্গল সার্কাস পার্টিতে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। পরে সার্কাস দলটা ভেঙে যায়। এরপর সংসারের অভাব অনটন দূর করতে জীবিকার তাগিদে পারিবারিকভাবে ভ্রাম্যমাণ সার্কাস প্রতিষ্ঠা করে গ্রামেগঞ্জে ছুটে চলি। বিনা টিকিটে গ্রামেগঞ্জে এ সার্কাস দেখাই। কারো থেকে টাকা পয়সা দাবি করি না। খেলা দেখে খুশি হয়ে মানুষ যা দেন তা দিয়েই আমার সংসার চলে। বাইনতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ বলেন, আজ চাকশ্রী স্কুল মাঠে যে ভ্রাম্যমাণ সার্কাস প্রদর্শন হয়েছে। এ খেলা দেখে হাজারো মানুষ খুশি হয়েছে এবং যার যতটুক সাধ্য আছে তাই দিয়ে তাকে সাহায্য করেছে। বহুদিন পর এ বাজারে সার্কাস খেলা দেখানো হলো।