১লা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১৫ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হোক প্রতিটি কাজ

মাহমুদ আহমদ
প্রত্যেকের অন্তরের খবর একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন। মানুষকে নানাভাবে ধোঁকা দেওয়া সম্ভব কিন্তু আল্লাহপাককে ধোঁকা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, তিনি প্রকাশ্য এবং গোপন, ভিতর এবং বাইরের সবকিছু সম্পর্কেই অবগত।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তুমি বল, তোমাদের অন্তরে যা আছে তা তোমরা গোপন কর বা প্রকাশ কর, আল্লাহ তা জানেন। আর আকাশসমূহে এবং পৃথিবীতে যা আছে তিনি তাও জানেন। আর আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বশক্তিমান। সেদিন প্রত্যেকেই যা কিছু সে ভালো কাজ করেছে, চোখের সামনে তা দেখতে পাবে এবং যা কিছু মন্দ কাজ করেছে তাও। ওরা তখন কামনা করবে, যদি তার এবং এসব কর্মের মধ্যে ব্যবধান দীর্ঘ হতো! আল্লাহ তার নিজের সম্পর্কে তোমাদের সাবধান করছেন। আর আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি অতি মমতাশীল’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ২৯-৩০)।
আল্লাহপাক মানুষের অন্তর দেখে থাকেন। আমরা যতই ভালো কাজ করি না কেন, হৃদয় যদি স্বচ্ছ এবং পবিত্র না হয়, তাহলে এসব আমল কোনোই কাজে আসবে না। মূল বিষয় হলো, নিয়ত পবিত্র হতে হবে। কেননা, আল্লাহ নিয়তকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, তিনি হজরত রাসুল করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘তোমাদের পূর্বের উম্মতের তিনজন লোক কোথাও যাওয়ার পথে বৃষ্টি এসে তাদের এক পর্বত গুহায় আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। তারা সেখানে আবদ্ধ হওয়ার পর একটি পাথর খসে পড়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। তারা পরস্পর বলতে লাগলো, আল্লাহর কাছে আমরা আমাদের কোন নেক আমল উল্লেখ করে দোয়া করলে আল্লাহ আমাদের এই বিপদ হতে মুক্তি দেবেন।
এরপর তাদের একজন বললো, হে আল্লাহ! আমার পিতামাতা অতিশয় বৃদ্ধ ছিলেন। আমি আমার পরিবারকে খাওয়ানোর পূর্বেই তাদেরকে দুধ পান করাতাম। একদিন কাঠের সন্ধানে আমাকে বহু দূর যেতে হলো এবং যথা সময়ে বাড়ি ফিরে আসতে পারলাম না, ইতোমধ্যে তারা ঘুমিয়ে পড়লেন। তাদের জাগিয়ে তুলে খাওয়ানো আমি পছন্দ করলাম না, আবার তাদের পূর্বে পরিবারকে দুধ পান করতে দিতেও ভালো লাগছিল না। তাই আমি দুধের পেয়ালা হাতে নিয়ে তাদের জেগে ওঠার অপেক্ষায় রইলাম।
অপরদিকে আমার সন্তানগুলো ক্ষুধায় কান্নাকাটি করছিল। এ অবস্থায় ভোর হয়ে গেল। তখন তারা জেগে উঠলেন এবং দুধ খেলেন। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজটি তোমারই সন্তুষ্টি লাভের জন্য করে থাকি, তাহলে এই পাথরের কারণে যে বিপদে পড়েছি তা দূর করে দাও, এতে পাথরটি কিছুটা সরে গেল। কিন্তু এর ফাঁক দিয়ে তারা বের হতে পারল না।
দ্বিতীয়জন বললো, হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল। আমি তাকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসতাম। আমি তার সাথে মিলনের প্রস্তাব দিলাম কিন্তু সে তাতে রাজী হলো না। শেষে এক দুর্ভিক্ষের বছরে সে সাহায্য নেবার জন্য আমার কাছে এলে আমার সাথে নির্জনে মিলনের শর্তে একশত বিশটি মুদ্রা দিলাম। এতে সে রাজী হয়ে গেল। আমি যখন তাকে সান্নিধ্যে পেলাম, তখন সে বললো আল্লাহকে ভয় কর এবং অবৈধভাবে আমার কৌমার্য নষ্ট করো না। আমি তখনই তাকে ছেড়ে চলে গেলাম, অথচ মানুষের মধ্যে সে আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় ছিল। আমি তাকে যে স্বর্ণমুদ্রা দিয়েছিলাম, তাও ছেড়ে দিলাম। হে আল্লাহ! এ কাজ যদি আমি তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করে থাকি তাহলে আমাদের এ বিপদ দূর করে দাও। এতে পাথরখানা আরো কিছুটা সরে গেল, কিন্তু তাতেও তারা বের হতে পারলো না।
তৃতীয় ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহ! কয়েকজন মজুর রেখেছিলাম। আমি তাদের সবাইকে মজুরি দিলাম। কিন্তু একজন তার মজুরি ছেড়ে চলে গেল। আমি তার মজুরিটি ব্যবসায় খাটালাম। তাতে ধনদৌলত অনেক বেড়ে গেল। কিছুকাল পর সে ব্যক্তি আমার কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর বান্দা! আমার মজুরি দাও, আমি বললাম যত উট, গরু, ছাগল, চাকর দেখছো এ সবই তোমার মজুরির ফল।
সে বললো, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছো? অবশেষে সে তার সবকিছু নিয়ে চলে গেল এবং কিছুই রেখে গেল না। হে আল্লাহ! তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্যই যদি আমি এ কাজ করে থাকি, তবে আমাদেরকে এ বিপদ থেকে মুক্তি দাও। এরপর পাথরটি সরে গেল এবং তারা সেখান হতে বের হয়ে এলো’ (বুখারি ও মুসলিম)।
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আয়াত ও এ হাদিস দ্বারা সহজেই বুঝা যায়, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তকে আল্লাহতায়ালা কখনো বৃথা যেতে দেন না। মানুষের প্রতিটি কর্মের প্রতি তাঁর দৃষ্টি রয়েছে। তাই আমাদের সকলকে নিজেদের প্রতিটি কর্মে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিতে হবে।
আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি ব্যতিরেকে তার নৈকট্য লাভ করা কখনও সম্ভব নয়। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে পবিত্র নিয়তে এবং তার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে প্রতিটি কাজ করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়