১লা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১৫ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

কমিশন গঠনে গড়িমসি কেন?

দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, অবৈধভাবে ভূমি দখল ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার লাগাম টানতে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এ দাবির সঙ্গে দেশের সংখ্যালঘু নেতারা একাত্মতা প্রকাশ করলেও কমিশন গঠনে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় অবিলম্বে পৃথক আইন প্রণয়নের পাশাপাশি জাতীয় কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হয়। গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এর আগে সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করাসহ বেশকিছু দাবি নিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ গণঅনশন কর্মসূচি পালন করেছে। নেতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করার আশ্বাস দিয়েছিলেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার। প্রতিশ্রæতি ঘোষণায় থেকে গেল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত ইশতেহারে ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অনুন্নত সম্প্রদায়’ নামে একটি অনুচ্ছেদ ছিল। এতে অর্পিত সম্পত্তি সংশোধনী আইন বাস্তবায়ন করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সব রাজনৈতিক দলের কাছে কয়েকটি দাবি তুলে ধরে। এর মধ্যে ছিল জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি এবং পার্বত্য ভূমি কমিশনের যথাযথ বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য আলাদা ভূমি কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন প্রভৃতি। সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনের দাবিটি ছাড়া অন্য দাবিগুলোকে নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করে আওয়ামী লীগ, যা ছিল সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত। যৌক্তিক এসব দাবির সমর্থনে ইশতেহারে প্রতিশ্রæত জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনসহ কয়েকটি দাবি পূরণের অঙ্গীকার এতদিনেও বাস্তবায়ন না হওয়া হতাশা ও দুঃখজনক। কমিশন গঠন না হওয়া ও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীদের জামিনে ছাড় পাওয়া উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর একের পর এক নির্যাতন ও নিপীড়ন চলছে, যা বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন ও অসাম্প্রদায়িক দেশে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সাধারণ মানুষের যন্ত্রণার পাশাপাশি বহির্বিশ্বেও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। আমরা মনে করি, আইন ও কমিশন বাস্তবায়ন হলে সংখ্যালঘুরা অভিযোগ করা, তদন্ত দাবি করা এবং তথ্য দেয়ার একটি নির্ভরযোগ্য স্থান পাবে। এতে দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অনেকাংশেই কমে আসবে। আমরা সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান দেখতে চাই। জাতিগতভাবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধান, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, নাগরিক অধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে রাষ্ট্রকেই ভূমিকা পালন করতে হবে। আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় যে কমিশন গঠনের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল অবিলম্বে তার বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি। সংখ্যালঘু সুরক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে বিভিন্ন সময় স্মারকলিপি আকারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। প্রতিশ্রæতি পূরণে সরকারের আন্তরিকতা দেখতে চাই।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়