১লা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১৫ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

ক্রিকেটে সাফল্যও দরকার

এএইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
১৯৯৯ সালের ২০ মে। ওয়ান ডে বিশ্বকাপের আসরে পাকিস্তান বনাম প্রিয় বাংলাদেশের খেলা। তখনও আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস পাইনি। ওই ম্যাচটি জেতার খুব দরকার ছিল। জিতলেই টেস্ট স্ট্যাটাসের জন্য আবেদনকারী হতে পারবে বাংলাদেশ! এমন এক অবস্থায় আমরা জিতে গিয়েছিলাম। এরপর হতে বাংলাদেশ ক্রমেই এগিয়ে গিয়েছে। একদিন, সর্বকালের সেরা ব্রায়ান লারা বললেন, “২০২০ সালের মধ্যে ওয়ান-ডে ফরম্যাটের ক্রিকেটে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জয় করবে।”
ব্রায়ানের কথা সত্যি হয়নি। তবে, ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে একজন সাকিব আল হাসানের একক নৈপুণ্যে আশা দেখাচ্ছিল। কিন্তু, শেষমেশ পেরে ওঠা যায়নি। হালে বাংলাদেশের ক্রিকেট এর বিবর্ণ রুপ নিয়ে শঙ্কিত দেশের আপামর ক্রিকেট পাগল দর্শকেরা।
সমস্যা কোথাও না কোথাও আছে। এমন একটা অবস্থায় আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপের আসর ঘিরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিয়ে উচ্চাশা কারো মাঝে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তবে এও ঠিক যে, আশাবাদী হওয়ার মত উপলক্ষও নেই। প্রস্তুতি সারতে যুক্তরাষ্ট্রের মত দলের কাছেও হারতে থাকার অভ্যাসে আছে শান্ত বাহিনী।
টি-২০ ফরম্যাটে বিজয়ী হতে হলে আমাদের হয়তো মারদাঙ্গা ব্যাটার নেই, বুদ্ধি করে বল ফেলার ব্র্যাভোরা নেই, কিন্তু দলগত কর্ম অর্থাৎ টিম ওয়ার্ক ভাল থাকলে অনেক কিছুই হওয়া সম্ভব। ব্রায়ান লারার বিখ্যাত মতবাদটি তুলে ধরা যাক। তিনি বলেছিলেন, “ক্রিকেট এমন একটি খেলা যা আপনাকে ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং টিমওয়ার্কের মূল্য শেখায়।”
এদিকে বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করতে যেয়ে শান্ত পাচ্ছেন, পাঁচ অভিজ্ঞ খেলোয়াড় এবং তাঁরা প্রত্যেকেই বিশ্বমানের। সাকিব আল হাসান তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে এসে দেশের জন্য পুনরায় সেরাটা দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে নিয়ে যাক আরো একবার। সাথে ব্যাটার লিটন দাস, অলরাউন্ডার রিয়াদ ও দুই পেসার তাসকিন এবং মোস্তাফিজ সমীকরণ বদলানোর জন্য যথেষ্ঠ। সমস্যা হল, এই পাঁচজনের কেহই তেমন ফর্মে নেই। দলে থাকা এক তাওহীদ হৃদয় ও নবাগত তামিম ছাড়া কেউ সাম্প্রতিক সময়ে ভাল করতে পারছেন না।
আপনি যখন ভারতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেন, জার্সি শুধু আপনার প্রতিনিধিত্ব করে না, এটি কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের প্রতিনিধিত্ব করে।” – এমন মন্তব্য বিরাট কোহলি করেছিলেন। বাংলাদেশ দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে এমন চেতনায় ভর করে মাঠে নামতে হবে। ২০ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ক্রিকেট পাগল দর্শক আমাদেরও আছে। তাঁরা বলতে চায়, অনেক তো হল, বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে কয়েকবার করে মুকট জয়ের অভ্যাসে যাক।
অন্যদিকে বলতেই হবে যে, টি-২০ ফরম্যাটের জন্য বাংলাদেশ কখনই ক্রেডিবল কোনো দল গড়তে পারেনি। বিশেষত এই ফরম্যাটের জন্য ৬,৭ ও ৮ নং পজিশনে ব্যাটিং স্পেশালিস্ট অলরাউন্ডারের দরকার। যারা ক্রিজে টিকে থাকার পাশাপাশি স্ট্রাইক রেট ২০০/৩০০ না রাখতে পারলে, বিশ্ব ক্রিকেটের মান অনুযায়ী টিকে থাকতে পারবে না।
যেমনটি, টানা দুইবারের টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে দেখিয়েছিল। ড্যারেন সামি, আন্দ্রে রাসেল কিংবা ব্র্যাথওয়েটেরা অবিশ্বাস্য সব ছোট ছোট ইনিংস খেলে তা করে দেখাত। আবার তাঁদের ওপেনিং-এ ক্রিস গেইলের মত দানব ও বড় ম্যাচের খেলোয়াড় মারলন স্যামুয়েলস ছিল, ছিল বোলিং অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্র্যাভো।
আমি বলছি না যে, ক্যারিবিয়ানদের মত করে অতটা হাতের কব্জিতে জোর থাকতে হবে। তবে, এই ফরম্যাটের ক্রিকেট যখন শুরু হয়েছিল, তখন থেকেই জিয়াউর রহমান, অলক কাপালী ও ফরহাদ রেজাদের মত লড়াকু খেলোয়াড়দের গুরুত্ব দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী আবহে নীতি প্রণয়ন করা উচিত ছিল। যা হয়নি। বরং মুশফিক ও রিয়াদদের মত খেলোয়াড়দের গুরুত্ব দিয়ে টি-২০ ফরম্যাটের ক্রিকেট সাজানোর কারণে বাংলাদেশ ফলত পিছিয়ে গিয়েছে। তাঁরা যত ভালই খেলুক, স্ট্রাইক রেট ২০০/৩০০ -তে নিয়ে যেয়ে ব্যাটিং করার সামর্থ্য রাখে না।
স্যার ডন ব্র্যাডম্যান বলেছিলেন , “ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা।” ঠিকই বলেছিলেন। তবে যেকোনো দলের ভাল খেলার ধারাবাহিকতা থাকা আবশ্যকও। আর তখনই তা দৃশ্যমান হবে, যখন খেলার ফরম্যাট বুঝে আপনার দলে ব্যাটার ও বোলার থাকবেন। টি-২০ ফরম্যাটে বাংলাদেশ আসলে এতদিন ধরে কি বলতে চাইলো, বোধে আসেনি। কখনই এই খেলার ধরনের সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। ওয়ান-ডে ফরম্যাটে পেরেছে। অতি অবশ্যই আমরা এই ফরম্যাটে দারুণ একটা দল।
আমাদের খুবই প্রিয় বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা সেদিন বললেন, আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপে অংশ নেয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে এবার কারা খেলছেন, তিনি জানেনই না। অথচ, দেশের সাধারণ পর্যায়ের ক্রিকেটভক্তের সকলেই বাংলাদেশ দলের স্কোয়াডে কারা জায়গা পেয়েছেন, তা দেখেছেন। মাশরাফির বক্তব্যে আমি অবাক হয়েছি। তাহলে কোথাও কোনো সমস্যা আছে কিনা, খতিয়ে দেখা দরকার।
বরেণ্য অসি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ বলেছিলেন, “ক্রিকেট এমন একটি খেলা যা আবেগকে জাগিয়ে তুলতে পারে এবং জাতিকে একত্রিত করতে পারে।” স্টিভের এমন মতবাদটি সর্বজনীন। আবার সাচিন টেন্ডুলকার বলতেন, “আমি হারতে ঘৃণা করি, এবং ক্রিকেট আমার প্রথম প্রেম, আমি মাঠে প্রবেশ করি এবং জয়ের ক্ষুধা সবসময় আমার মাঝে থাকে।” তাহলে লিটন বা শান্তদের তেমন প্রতিজ্ঞায় যেতে হবে। তখনই সাফল্য ধরা দেবে।
লেখক: সভাপতিমন্ডলির সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়