১২ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২৬শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে নদী-নদীতে পানি বৃদ্ধি, দমকা বাতাস-বৃষ্টি শুরু

উৎপল মণ্ডল, শ্যামনগর
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে উপকূলীয় অঞ্চল শ্যামনগরে শনিবার দুপুর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি ও দমকা বাতাস বইতে শুরু হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীসমূহে স্বাভাবিকের তুলনায় তিন/চার ফুট পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। দূর্গত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে ১শত ৬৯টি সাইক্লোন শেল্টারকে প্রস্তুত করার কথা জানানো হয়েছে। এছাড়া সিপিপি সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছয় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বনবিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি নিচে থাকা জেলেদের দ্রুত নিরাপদে ফিরে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শনসহ স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় শনিবার সকালের জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে নদী এখন পর্যন্ত উত্তাল রুপ ধারণ না করায় নদী-নদীতে পানি বৃদ্ধির ঘটনা স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে কোন আতংক তৈরী করেনি। যদিও নওয়াবেঁকী, পাখিমারা, নীলডুমুর খেয়াঘাট এলাকাসমূহে মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলক কম দেখা যায়। বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের সাহেব আলী জানান শনিবার সকালের জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত বেশী হয়েছে। পূর্ব সতর্কতা থাকায় পাশ্ববর্তী খোলপেটুয়া, মালঞ্চ, আড়পাঙ্গাশিয়া নদীসমূহের জেলেরা শনিবার মাছ ধরতে নামেনি। এছাড়া সাগর ও সুন্দরবনে অবস্থানরত জেলেরা এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। বুড়িগোয়াীনি গ্রামের আব্দুল হালিম জানান শনিবার সকালের জোয়ারের পানি রীতিমত ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। দুপুর দুইটার পরও জোয়ারের পানি কমার গতি খুবই কম ছিল। জোয়ার অবস্থায় রেমাল আঘাত হানলে তা গোটা উপকূলজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন রেখে যেতে পারে। এদিকে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ কে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশনসহ সকল টহলফাঁড়িতে অবস্থানরত বনকর্মীদের সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবন ও সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া জেলেদের লোকালয়ে ফিরতে পরামর্শ দিয়ে তাদের উদ্ধারে বনকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বন বিভাগের এ কর্মকর্তা আরও জানান শনিবার সকালের জোয়ারের পানি তার অফিসে যাওয়ার একমাত্র পায়ে চলা রাস্তার উপরে উঠার উপক্রম হয়েছিল।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতক্ষীরা ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী এম সালাউদ্দীন বলেন, শ্যামনগরকে ঘিরে থাকা উপকুল রক্ষা বাঁধের প্রায় ১২৯ কিলোমিটারের মধ্যে সাত/আটটি পয়েন্টের প্রায় দুই কিলোমটিার ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে মাটি ফেলে উচ্চতা বৃদ্ধিসহ জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে বাঁধের ভাঙন ও ধস ঠেকানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজিবুল আলম বলেন, উপজেলার ১শত ৬৯ সাইক্লোন শেল্টারকে প্রস্তুত করা হয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছয় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবীকে জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় তৈরী রাখার তথ্য দিয়ে তিনি আরও বলেন শুকনা খাবারসহ নগদ অর্থ মজুদ রাখা হয়েছে। প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধির সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখার মাধ্যমে পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়