১লা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১৫ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

সুন্দরবন রক্ষায় দায়িত্বশীল হোন

মানুষের হাতে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন বিপন্ন হচ্ছে দিন দিন। ফলে হুমকির সম্মুখীন মাছ-প্রজাতিসহ জীববৈচিত্র্য। এমতাবস্থায় রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি হয়ে পড়েছে। সুন্দরবনে বারবার অগ্নিকাণ্ড মানবসৃষ্ট ও পরিকল্পিত বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। সংগঠনটি বলছে, বন বিভাগ ও প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মৎস্যজীবী সিন্ডিকেট এ অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছে। বারবার একইভাবে অগ্নিকাণ্ড ঘটালেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলার কারণে দোষীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। কঠোর তদারকির অভাব রয়েছে।সুপরিকল্পিতভাবে এশিয়ার ফুসফুস সুন্দরবনকে ধ্বংস করা হচ্ছে। গত বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাপা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। দেশের সংরক্ষিত বনভূমির ৫১ শতাংশ অর্থাৎ ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার সুন্দরবন। সংরক্ষিত এই বনের ৩টি এলাকাকে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করে, যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩০ শতাংশ এলাকা। বাংলাদেশের ফুসফুস খ্যাত সুন্দরবন অক্সিজেনের এক বিশাল ফ্যাক্টরি হিসেবে কাজ করে। এর অর্থনৈতিক গুরুত্বও অনেক। সুন্দরবন থাকার কারণে আমরা সৌভাগ্যবান। কিন্তু পরিতাপের বিষয় সুন্দরবনকে আমরা প্রতিনিয়ত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। কখনো উন্নয়নের নামে, আবার কখনো ব্যক্তি বা মুষ্টিমেয় দলগত স্বার্থের কারণে। জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব ও মানুষের সৃষ্ট নানা কারণে সুন্দরবনে গাছপালা ও প্রাণিকুল হুমকির মুখে। অজ্ঞতা ও অবহেলা এবং সুন্দরবনের ভেতরের নদীগুলোর লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়াসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে অনেক গাছপালা ও প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। বারবার আগুন লেগে বনের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। এই আগুনের তীব্র তাপে পুড়ে যাওয়া এলাকার বাইরেও বিস্তৃত এলাকায় পরিবেশের ক্ষতি করে, বিপন্ন করে প্রাণিকুলকে। গত ২৪ বছরে সুন্দরবনে ২৫ থেকে ২৬ বার আগুন লেগেছে। সরকারি হিসাবে প্রায় শতাধিক একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। মুনাফালোভী মাছ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও অসৎ বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বারবার সুন্দরবনে আগুন লাগানো হচ্ছে। সুতরাং এর দায়ভার বন বিভাগকেই নিতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, কিন্তু মানবসৃষ্ট দুর্যোগগুলো থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভকে সুরক্ষিত রাখার জন্য মনুষ্য সদিচ্ছাই যথেষ্ট। বনের অভ্যন্তরের নদনদীতে প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ দ্রব্য নিয়ে জাহাজ বা কার্গো চলাচল করছে। জাহাজডুবির ঘটনা ঘটলে যে দ্রুত উদ্ধার করা হবে বা নদীর পানি থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হবে সেটিও দেখা যায় না। তবে সুন্দরবন রক্ষায় মূল ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে কয়েকটি দ্বীপ সাগরে হারিয়ে গেছে সুন্দরবনের মানচিত্র থেকে। ১৯৬৯ থেকে ২০০১ সাল অবধি সময়ে এখানে আমরা হারিয়েছি ১৫০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল, যদিও কিছুটা আমরা ফিরেও পেয়েছি, তবে তা মনুষ্য বসবাসের যোগ্য এখনো হয়নি। আমাজনের মতো বনও আজ মানুষের লোভের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। সেই বনও সংকুচিত হচ্ছে। পৃথিবীর ফুসফুসের যদি এই অবস্থা হয়; তাহলে বাংলাদেশের ফুসফুসের কী হবে? তাই আগেভাগেই সাবধান হতে হবে। উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য পরিকল্পিত বনায়নের পাশাপাশি বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ রক্ষা করতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি প্রাণী ও ভেষজের আধার সুন্দরবন। সবাই মিলেই সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়