১২ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২৬শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

৩৪ নেতার মধ্যে সক্রিয় পাঁচজন!

প্রতিদিনের ডেস্ক॥
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ১৭টি হল শাখা ছাত্রলীগের ৩৪ জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে সক্রিয় রাজনীতি করছেন মাত্র পাঁচজন। বাকি ২৯ জনই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে পাঁচজন বিয়েও করেছেন।
হল কমিটি না থাকায় ছাত্রলীগে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। এতে হতাশ হয়ে ক্রমশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন কর্মীরা। তাই দ্রুত সময়ে হল কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন হলে অবস্থান করা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানান, আগের কমিটি গঠনের সাত বছর পর ২০২২ সালের ২৪ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হল শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এক বছর মেয়াদি এ কমিটি দুই বছর তিন মাস পার করলেও গঠিত হয়নি নতুন কমিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রলীগের দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার্থে একটি হল কমিটি চালাতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হল শাখা ছাত্রলীগের ৩৪ জন মূল নেতার (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) মধ্যে ২৪ জনই ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন বিয়ে করে সংসার করছেন। কেউ সরকারি চাকরি করছেন কেউবা ক্যাম্পাসে থেকেও বর্তমান রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়।
ক্যাম্পাস ছেড়েছেন যে ২৪ জন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান রাতুল ও সাধারণ সম্পাদক মো. স্বাধীন খান, মতিহার হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রাজীব হোসেন, শাহ্ মখদুম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রামীম আহম্মেদ, সৈয়দ আমীর আলী হল ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ কামাল বিন হারুন সিয়াম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মারুফ, নবাব আব্দুল লতিফ হল ছাত্রলীগের সভাপতি শুভ্রদেব ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক মো. শামিম হোসেন, শহীদ ড. শামসুজ্জোহা হল ছাত্রলীগের সভাপতি চিরন্তন চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মোমিন ইসলাম, জিয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রাশেদ আলী, মাদার বখশ হল ছাত্রলীগের সভাপতি হামীম রেজা শাফায়েত ও সাধারণ সম্পাদক শফিউর রহমান রাথিক, শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মোমিনুল ইসলাম মোমিন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সাধারণ সম্পাদক মো. নাইম আলী, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাজরীন আহমেদ খান মেধা ও সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি বালা, মন্নুজান হল ছাত্রলীগের সভাপতি আন্নাতুল নাইমা আকন্দ জানা, রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি নুসরাত আহান আভা, তাপসী রাবেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাসনিম নাহার তৃনা ও সাধারণ সম্পাদক তাসনুভা মেহজাবিন মিম, রহমতুন্নেসা হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিনথিয়া নাসরিন মিম, খালেদা জিয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি প্রিয়াঙ্কা সেন মৌ ও সাধারণ সম্পাদক আজমিনা বিনতে ইসলাম শ্রেয়া ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেছেন। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় তারা।
কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় হল শাখার তিন নেতাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তারা হলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. নিয়াজ মোর্শেদ শুভ, হবিবুর হলের সাধারণ সম্পাদক মো. আশিকুর রহমান অপু ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. কাব্বিরুজ্জামান রুহল। তারা অবশ্য ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন।
ক্যাম্পাসে থেকেও নিষ্ক্রিয়বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস ও শাহ্ মখদুম হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. তাজবীউল হাসান অপূর্ব ক্যাম্পাসে অবস্থান করলেও রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়।
সক্রিয় যারা
হল শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় পাঁচ নেতা হলেন মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব, মন্নুজান হলের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা আক্তার শশী, রহমতুন্নেসা হল ছাত্রলীগের সভাপতি মোসা. তামান্না আকতার তন্বী ও রোকেয়া হলের সাধারণ সম্পাদক আলফি শারিন আরিয়ানা। তাদের মধ্যে তামান্না আকতার তন্বী ও ভাস্কর সাহা যথাক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগে সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়ে শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি করছেন।
এদিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিষ্ক্রিয় থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে প্রতিটি হলে দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারাই এখন হল পরিচালনা করছেন। তবে হলে অবস্থান করা নেতাকর্মীদের দাবি, দ্রুত সময়ে সম্মেলনের মাধ্যমে হল কমিটি ঘোষণা করা হোক।
হল সম্মেলনের দাবি জানিয়ে জিয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোসাদ্দিক হোসেন সাজিদ বলেন, ‘হল সম্মেলন এখন আমাদের সময়ের দাবি। কমিটির মাধ্যমে হল শাখা ছাত্রলীগের ইউনিটগুলো শক্তিশালী হয় এবং সংগঠনে গতিশীলতা বাড়ে। কর্মীরা সংগঠনের প্রতি দায়িত্বশীল এবং কাজের প্রতি আগ্রহী হন। আমরা চাই দ্রুত হল সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হোক।’
হল সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, ‘আমি ও আমার সভাপতি দায়িত্বে আসার আগে থেকেই হল কমিটির মেয়াদ নেই। ১৭ হলের ৩৪ জন মূল নেতার মধ্যে গুটিকয়েক নেতা ক্যাম্পাসে অবস্থান করলেও অধিকাংশই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন। অনেকেই চাকরি নিয়ে বিয়ে-শাদিও করেছেন। এছাড়া অনেক নেতার পড়াশোনা শেষ হওয়ায় রাজশাহী থেকে চলে গেছেন।’
আসাদুল্লা-হিল-গালিব আরও বলেন, ‘হল শাখা ছাত্রলীগকে গতিশীল করতে প্রতিটি হলে দুজনকে দায়িত্ব দিয়েছি। যেসব হলে সভাপতি-সম্পাদক আছেন, সেখানে তাদের মনোনীত নেতাকর্মীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাবি ছাত্রলীগকে গতিশীল করতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদককে জানিয়ে দ্রুত হল কমিটি বিলুপ্ত করবো এবং সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দেবো।’
রাবি শাখা ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম শাকিল বলেন, ‘হল কমিটির ৩৪ জন মূল নেতার মধ্যে চার-পাঁচজন ক্যাম্পাসে আছেন, বাকিরা পড়াশোনা শেষ হয়ে যাওয়ায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন। আমরা মনে করি দ্রুত হল সম্মেলন হওয়া উচিত। সর্বশেষ জয় ও লেখক ভাই হল সম্মেলন দিয়েছিলেন। আমরা সাদ্দাম ও ইনান ভাইয়ের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে দ্রুত হল সম্মেলনের আয়োজন করবো।’

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়