১লা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১৫ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

বেপরোয়া মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গতিসীমা ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার বেঁধে দেয়া হলেও সেদিকে মোটরসাইকেল চালকদের কোনো খেয়ালই নেই। সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৭-৪৯ শতাংশ, মোট সড়ক দুর্ঘটনার প্রায় অর্ধেক। নিহতের হার ৩৮-৪০ শতাংশ পর্যন্ত। দুর্ঘটনার এই পরিসংখ্যান খুবই উদ্বেগজনক। সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের বেপরোয়া গতি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট ও ধীরগতির যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যান চলাচল বন্ধে তেমন উদ্যোগ নেই। দেশে এখন মোটরসাইকেলের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। বিআরটিএতে নিবন্ধিত মোটরযানের মধ্যে ৭১ শতাংশই মোটরসাইকেল। বাকি ২৯ শতাংশ প্রাইভেট কার, বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, হিউম্যান হলারসহ অন্যান্য যানবাহন। রাজধানীতেই ২০ লাখের বেশি মোটরসাইকেল চলাচল করছে। এর বাইরে আরো ২৫ লাখ মোটরসাইকেল দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও গ্রামীণ সড়কে চলছে। এছাড়া নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলছে সড়ক-মহাসড়কে। দুর্ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির নজিরও তেমন নেই। ফলে চালকরা ইচ্ছামতো গাড়ি চালান। হাই রিস্ক নিয়ে ওভারটেক করেন। এছাড়া চালকদের প্রশিক্ষণ না থাকা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। ফুটপাতের বেহাল দশার কারণে মানুষ বাধ্য হয়ে মূল রাস্তায় হাঁটছেন এবং দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে হেলমেট ব্যবহারে অসচেতনতায় ছোটখাটো দুর্ঘটনায়ও প্রাণহানি ঘটছে। মোবাইল ফোন কানে রেখে গাড়ি চালানো দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ। যদিও এ কাজ থেকে বিরত রাখতে আইন আছে। কিন্তু সে আইনের ব্যবহার নেই, আমাদের সচেতনতাও নেই। এসব কারণে দুর্ঘটনা ক্রমবর্ধমান। যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এপ্রিল মাসের ঈদযাত্রায় বরাবরের মতো দুর্ঘটনার শীর্ষে ছিল মোটরবাইক। এই সময় ১৯৮টি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় ১৬৫ জন নিহত ও ২৪০ জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার এই হার ওই সময়ের মোট দুর্ঘটনার ৪৯ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং মোট নিহতের সংখ্যার ৪০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সমাধানের অসাধ্য বিষয় নয়। এজন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। বিশেষ করে মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের কঠোর নজরদারি জরুরি। মোট দুর্ঘটনার প্রায় অর্ধেকই যখন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, তখন এর রাশ টেনে ধরতেই হবে। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারী যেই হোক না কেন, তার জরিমানা ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদেরও সজাগ থাকা দরকার। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কেবল মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা ও ট্রাফিক সপ্তাহ পালন যথেষ্ট নয়। দুর্ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যানবাহন-সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতাও কাম্য। প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স ছাড়া কেউ যেন মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামতে না পারে, তা কঠোর নজরদারির মধ্যে আনতে হবে। বৈধ লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল বিক্রি বন্ধ করতে হবে। মোটকথা, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং আইন পালনে জনসাধারণের সদিচ্ছা ও সচেতনতার বিকল্প নেই।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়