শনিবার থেকে বন্ধ হয়ে গেছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। বাংলাদেশসহ কর্মী জোগানদাতা আরো ১৪টি দেশের ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালয়েশিয়া। এদিকে ৩১ হাজারের বেশি কর্মী দেশটিতে যাওয়ার জন্য সব প্রক্রিয়া শেষ করে অপেক্ষায় রয়েছেন। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে দেশটিতে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন কর্মী গেছেন। এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৭২ হাজারের বেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন। কিন্তু মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী গত শনিবার থেকে দেশটির শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ায় প্রায় ৩১ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। এদিকে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার জানিয়েছে, নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, যারা ভিসা পেয়েও ঢুকতে পারেননি তারা যেন দ্রুত দেশটিতে পৌঁছাতে পারেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। তবে এবার খুব মারাত্মকভাবে প্রতারিত হয়েছেন অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশিরা। শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে একটি সিন্ডিকেটের নির্মম দুর্নীতির চিত্র। তবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ঘিরে সক্রিয় সিন্ডিকেটগুলো বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। মালয়েশিয়ার চক্র হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে দেশের সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেয়া হয় না। চক্রে থাকা এজেন্সিগুলো বসে বসে প্রতি কর্মীর বিপরীতে মোটা অঙ্কের টাকা ‘চক্র ফি’ নেয়। এই টাকার একটি অংশ চলে যায় মালয়েশিয়ার চক্র নিয়ন্ত্রকদের কাছে। এই চক্রের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে প্রতারিত হয়েছেন হাজারো কর্মী। এদিকে অভিবাসনে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন জাতিসংঘের চার স্বাধীন বিশেষজ্ঞ। চিঠির জবাবে বলা হয়েছে, রিক্রুটিং এজেন্টদের অনিয়ম বন্ধে কাজ করছে বাংলাদেশ। তবে এবার সরকারি উদ্যোগেরও অনেকটা অভাব ছিল বলা যায়। ৩১ তারিখে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে জানার পর চাইলে সরকার কূটনৈতিকভাবে আলাপ-আলোচনা করতে পারত। বায়রা মনে করে, অধিকসংখ্যক চার্টার্ড ফ্লাইট করা গেলে এ সমস্যা অনেক আগেই দূর করা যেত। তবে যারা ভিসা পেয়েছেন, সরকারই কূটনৈতিকভাবে তাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে বলে মনে করে বায়রা। এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, কত মানুষ যাবে, কীভাবে যাবে, সেই তালিকা বায়রার কাছে চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা কোনো তালিকা দিতে পারেনি। এর ফলে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মালয়েশিয়ায় ৩১ মের মধ্যে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া আরো দ্রুত করার প্রয়োজন ছিল। আবার যারা যেতে পেরেছেন, তারা সবাই যে কাজ পাবেন, তারও নিশ্চয়তা নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়টি মনিটর করা প্রয়োজন। পাশাপাশি সিন্ডিকেট, দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহির মধ্যে রাখতে হবে। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে যারা জটিলতা তৈরি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তদন্তে যারা দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মালয়েশিয়ায় অভিবাসন প্রত্যাশীদের পাশে দাঁড়ান
Previous article
Next article
আরো দেখুন
বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে কমিশনের প্রতিবেদন
আজ থেকে ১৬ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের নামে ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ঢাকার পিলখানায় সদর দপ্তরে...

